জাতীয়

মর্গে খোঁজা ছেলে এখন সরকারের উপদেষ্টা

মোহনা অনলাইন

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সবুজ ভূইয়া। তিনি যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন। তাকে নিয়ে গর্বিত তার শিক্ষক বাবা বিল্লাল হোসেন। অথচ কিছুদিন আগে আন্দোলন চলাকালীন পাঁচ দিন নিখোঁজের সময় লাশ ঘরে গিয়ে তার লাশ খুঁজেছিল তার পরিবার। এখন তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা।

আসিফ মাহমুদ সবুজ ভূইয়ার বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার বাঙ্গরাবাজার থানাধীন আকুবপুর গ্রামে। তার বাবা মো. বিল্লাল হোসেন আকুবপুর ইয়াকুব আলী ভূইয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তার মা রোকসানা আক্তার একজন গৃহিণী। আসিফ মাহমুদ তার বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে। তার বড় একজন ও ছোট দুজন বোন রয়েছে।

আসিফ মাহমুদ ২০১৩ সালে কুমিল্লার আকবপুর ইয়াকুব আলী ভূইয়া পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ৮ম শ্রেণি পাস করেন। পরে ঢাকার তেজগাঁওয়ের নাখালপাড়া এলাকার হোসেন আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। পরে চলে যান ঢাকার আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে। সেখানে উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পার করেন। সব ক্লাসেই ভালো ফল পাওয়া আসিফ প্রথমবারেই চান্স পান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগে। আসিফ বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষাবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্সে অধ্যয়নরত।

আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসেন জানান, পরিবারের সদস্যদের না জানিয়েই আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন আসিফ মাহমুদ। প্রথমদিকে পুলিশের গুলিতে কয়েকজন শিক্ষার্থী মারা যাওয়ার পর তার পরিবার জানতে পারে যে সে আন্দোলনের সমন্বয়ক। তখন আসিফ মাহমুদকে বাড়ি ফিরে আসতে অনুরোধ করেন বাবা-মা ও বোনেরা। পরিবারের সদস্যদের অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে আসিফ বলেন, আমার অনেক ভাই-বোন পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছেন। আমি আন্দোলন থেকে ফিরে আসব না। হয় গুলি খেয়ে মরব, না হয় আন্দোলন সফল করে ঘরে ফিরব। এরপর থেকেই আসিফ মাহমুদের পরিবারে আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠা শুরু হয়।

বিল্লাল হোসেন বলেন, ২৩ জুলাই ইত্তেফাক পত্রিকায় খবর প্রকাশ হয়, আসিফ মাহমুদকে গুম করা হয়েছে। তারপর আমরা শাহবাগ থানায় নিখোঁজের ডায়েরি করতে গেলে ওসি আমাদের জিডি নেননি। সেখান থেকে যাত্রাবাড়ী থানায় যাই, সেখানেও একইভাবে আমাদের ফিরিয়ে দেয় পুলিশ। পাঁচ দিন নিখোঁজের সময় মা-বাবা বোনসহ পরিবারের সবার অবস্থা অনেক খারাপ হয়ে যায়। বন্ধ থাকে সবার খাওয়া-দাওয়া। আমরা লাশ ঘরে গিয়েও তাকে খুঁজেছি। আন্দোলন সফল হওয়ায় অনেক ভালো লাগছে। আমরা চাই এমন খুনি, ফ্যাসিবাদী সরকার আর কখনো না আসুক।

 ২৪ জুলাই হাতিরঝিল এলাকায় আসিফ মাহমুদকে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া যায়। এ সময় তাকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য নিলে সেখান থেকে ২৬ জুলাই পুলিশ পরিচয়ে আবারও তাকে তুলে নিয়ে যায়। ২৭ জুলাই ডিবি কার্যালয় থেকে ফোন করে জানায়, আপনার ছেলে ডিবি কার্যালয়ে আছে, দেখে যান। আমি আর আসিফের মা সেখানে গিয়ে দেখা করলে তাদের ছেড়ে দেবে বললেও পরে ছাড়েনি।

বিল্লাল হোসেন এই আন্দোলনে নিহত সবার পরিবারকে আর্থিক সহায়তা ও পরিবারের একজন সদস্যকে চাকরি দেওয়াসহ সব সমন্বয়ক এবং আন্দোলনকারীদের নিরাপত্তার দাবি জানান। অজোপাড়াগাঁয়ের ছেলে আসিফ মাহমুদের এমন সাফল্যে এলাকাবাসীও আনন্দিত ও গর্বিত।

author avatar
Online Editor SEO
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button