এ দেশের মানুষ হিসেবে অধিকার আদায়ে বিভক্ত হয়ে নয়, আমরা এক মানুষ, এক অধিকার, ‘অধিকার সবার সমান। এর মধ্যে কোনও পার্থক্য করবেন না। ধৈর্য ধরেন, কিছু করতে পারলাম কী পারলাম না, সেটা পরে বিচার করবেন। যদি না পারি আমাদের দোষ দিয়েন বলে বললেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টার পরে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে পরিদর্শনে গিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় তিনি বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদ এবং মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দ, মন্দিরের ব্যবস্থাপনা পর্ষদের কর্মকর্তা এবং ভক্তদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের গণতান্ত্রিক যে আকাঙ্ক্ষা, সেখানে আমরা মুসলমান, হিন্দু কিংবা বৌদ্ধ হিসেবে নই, মানুষ হিসেবে বিবেচিত। আমাদের অধিকারগুলো নিশ্চিত হোক সবার। সব সমস্যার গোড়া হলো, আমরা যত প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজনগুলো করেছি; সব কিছু কিন্তু পচে গেছে। এই কারণেই গোলমাল হচ্ছে। কাজেই আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজনগুলো ঠিক করতে হবে।’
তিনি আরেও বলেন, ‘ন্যায়বিচার হলে কে বিচার পাবে না বলেন? আমি কি দেখতেছি যে, এটা কোন ধর্মের, জাতের, কোন ধরনের? তা কী আইনে বলা আছে? ওই সম্প্রদায়ের হলে ওই কোর্টে যাবে, ওই সম্প্রদায় হলে ওই আদালতে যাবে? আইন একটা! কার সাধ্য আছে বিভেদ করে যে-ওই রকম একটা, এ রকম একটা। এটা হতে পারে না। এটা এমন রোগ-মূলে যেতে হবে। আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সেটা পেলে আমরা বাক্স্বাধীনতা পাব। এগুলো আছে, এগুলো নতুন কিছু না। আমাদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটা হলো আমাদের মূল লক্ষ্য।’
সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘এটা (সাম্প্রদায়িকতা) একটি রোগ, এর মূলে যেতে হবে। আপনারা যদি বলেন, আমাদের সংখ্যালঘু হিসেবে এটা বলছে, এটা হলো মূল সমস্যা থেকে আপনারা দূরে সরে যাচ্ছেন। আমাদের বলতে হবে, আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে। সেটা পেলে আমাদের বাকস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হবে, যেগুলো আছে, আমরা নতুন কিছু বলছি না। আমাদের মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এটাই হলো আমাদের মূল লক্ষ্য।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আপনারা যদি টেনে নিয়ে আসেন আমি অমুক, আমি তমুক; আবার পুরনো খেলায় চলে গেলেন। আপনাদের শিকার করার জন্য যারা বসে আছে, তারা এগুলো শিকার করে। আপনারা বলবেন, আমরা বাংলাদেশের মানুষ, আমার সাংবিধানিক অধিকার এই, আমাকে দিতে হবে। সব সরকারের কাছে এটাই চাইবেন, আর কিছু চাইবেন না আপনারা।’
বৈঠকের বিষয়ে পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, ‘আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করায় শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ড. ইউনূসকে অভিনন্দন জানিয়েছি। তাঁর সঙ্গে আমাদের হৃদ্যতাপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব ও সাধারণ সম্পাদক তাপস চন্দ্র পাল, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজ দেবনাথ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মনিন্দ্র কুমার নাথ।