Top Newsজাতীয়

এস আলমের ১২ হাজার কোটি টাকা পাচারের বিষয়ে তথ্য চায় দুদক

মোহনা অনলাইন

এস আলম গ্রুপের মালিক মোহাম্মদ সাইফুল আলমের বিরুদ্ধে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা পাচার করে সিঙ্গাপুরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার অভিযোগ আছে। এ অভিযোগের অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এরই মধ্যে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কাছে এস আলম গ্রুপের ব্যাংক হিসাবের যাবতীয় লেনদেনের তথ্য এবং সংশ্লিষ্ট নথিপত্র তলব করেছেন দুদকের অনুসন্ধান কর্মকর্তা উপপরিচালক মো. নূর-ই-আলম।

বুধবার (২১ আগস্ট) দুদকের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, গত বছরের আগস্ট মাসে এস আলমের অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধান শুরু করেছিল দুদক। উচ্চ আদালতের এক আদেশের পর অনুসন্ধান বন্ধ রাখা হয়েছিল। আপিল বিভাগের পর্যবেক্ষণের পর পুনরায় অনুসন্ধান শুরু করা হয়েছে। অনুসন্ধান তদারকি করছেন মানিলন্ডারিং শাখার পরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী।

জানা যায়, সাইফুল আলম তথা এস আলম আওয়ামী লীগ সরকারের খুবই ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তার প্রতিষ্ঠিত এস আলম গ্রুপের বিরুদ্ধে অর্থপাচার ও ঋণের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সাধারণত বিদেশে বিনিয়োগ বা অর্থ স্থানান্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকলেও গ্রুপটি কোনো নিয়মনীতি মানেনি। প্রতিষ্ঠানটি এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১২ হাজার কোটি টাকা পাচার করার মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়েছে। গত এক দশকে সিঙ্গাপুরে এস আলম অন্তত দুটি হোটেল, দুটি বাড়ি, একটি বাণিজ্যিক স্পেস এবং অন্যান্য যে সম্পদ কিনেছেন সেখানেও বিভিন্ন উপায়ে কাগজপত্র থেকে তার নাম সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলেও জানা যায়।

এছাড়া এস আলম ও তার স্ত্রী ব্রিটিশ ভার্জিন দ্বীপপুঞ্জের আরেকটি একটি অফশোর শেল কোম্পানি পিকক প্রপার্টি লিমিটেডের সঙ্গেও যুক্ত। আর ২০১৬ সালে সাইপ্রাসে এস আলম অ্যাকলেয়ার ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান কেনেন। সাইপ্রাসের কোম্পানির রেজিস্ট্রার বিভাগ এবং অফিসিয়াল রিসিভারের নথি অনুসারে, পরবর্তীতে কোম্পানিটির নাম পরিবর্তন করে অ্যাকলেয়ার ইন্টারন্যাশনাল রাখা হয়।

অভিযোগ সূত্রে আরও জানা যায়, ২০১৪ সালের ২৬ আগস্ট এস আলমের ক্যানালি লজিস্টিকস সিঙ্গাপুরের লিটল ইন্ডিয়ায় ১৭৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে ৩২৮ কক্ষের গ্র্যান্ড চ্যান্সেলর প্রাইভেট লিমিটেড হোটেলটি কেনার জন্য চুক্তি সই করে। চুক্তিপত্র অনুযায়ী, চুক্তিমূল্য কয়েকটি কিস্তিতে নগদে পরিশোধ করা হবে। চুক্তির শর্ত পূরণ করে ক্যানালি ইতোমধ্যেই প্রাথমিক আমানত ও ব্যালেন্স ডিপোজিটসহ ১৮ দশমিক ৬ মিলিয়ন সিঙ্গাপুর ডলার (প্রায় ১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) পরিশোধ করেছে।

২০২১ সালের শেষে হোটেলটির মোট সম্পদের পরিমাণ ছিল ৩১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং বার্ষিক আয় ছিল প্রায় ৭ দশমিক ৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। অধিগ্রহণের এক বছর পরে হোটেলটির নাম পাল্টে গ্র্যান্ড ইম্পেরিয়াল হোটেল প্রাইভেট লিমিটেড করা হয় এবং এখন সিঙ্গাপুরের কেন্দ্রস্থলে হিল্টন গার্ডেন ইন সেরাঙ্গুনের ব্র্যান্ড নামে হোটেলটির কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

সিঙ্গাপুরের গণমাধ্যম দ্য বিজনেস টাইমস অনুসারে, ২০১৬ সালে সিঙ্গাপুরের ১৯তলা সেন্ট্রিয়াম স্কয়ারে ২৭ হাজার বর্গফুটের একটি বাণিজ্যিক স্পেস ১০০ দশমিক ৫৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে কিনে নেয় ক্যানালি। অধিগ্রহণের এক বছর পর ক্যানালি লজিস্টিকস তার নাম পরিবর্তন করে উইলকিনসন ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড করে। ২০২১ সালে যার সম্পদের মোট মূল্য ছিল প্রায় এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার (১২ হাজার কোটি টাকা)।

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, এস আলম ও তার স্ত্রী ২০২১ সাল পর্যন্ত মধ্য সিঙ্গাপুরের নোভেনায় ১২ হাজার ২৬০ বর্গফুটের একটি বাড়ির মালিক ছিলেন। ২০১৮ সালে এই সম্পদের বার্ষিক রেন্টাল ভ্যালু ছিল ৫ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার। ২০২৩ সাল পর্যন্ত দ্বিতীয় আরেকটি বাড়ির মালিক ছিলেন এই দম্পতি। এর মালিকানা পেদাং ট্রাস্ট সিঙ্গাপুর প্রাইভেট ট্রাস্টের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। সিঙ্গাপুর ২০০৮ সালে এস্টেট শুল্ক বাতিল করে। সুতরাং, সিঙ্গাপুর ট্রাস্ট থেকে মূলধনের আয় বণ্টন করমুক্ত এবং সিঙ্গাপুরের ট্রাস্টের উত্তরসূরিদের কোনো এস্টেট শুল্ক ছাড়াই সুবিধাভোগী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button