ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা বর্তমানে কোথায় আছেন, তা নিয়ে নানা মহলে চলছে বিভিন্ন ধরনের জল্পনা-কল্পনা। সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেখ হাসিনার এখন কোথায় আছেন তা স্পষ্ট করল ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য প্রিন্ট।
গণমাধ্যমটি তাদের সোর্স দ্বারা পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দাবি করেছে, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্তমানে রাজধানী নয়াদিল্লির লুটিয়েনস বাংলো জোনের একটি সেইফ হাউসে বসবাস করছেন। বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্ট বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
দ্য প্রিন্ট বলছে, শেখ হাসিনার গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা রক্ষার জন্য দ্য প্রিন্ট বাড়িটির সঠিক ঠিকানা অথবা রাস্তার বিবরণ প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছে। নিরাপত্তার খাতিরে যথার্থ প্রটোকল সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনা মাঝেমধ্যে লোধি গার্ডেনে হাঁটতে বের হন। সূত্রটি বলেছে, ‘’তিনি (শেখ হাসিনা) দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে ওই এলাকায় বসবাস করছেন। এখানে তার থাকার সব ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
সূত্রের বরাত দিয়ে দ্য প্রিন্ট বলেছে, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি বিমানে চড়ে উত্তর প্রদেশের গাজিয়াবাদের হিন্দন বিমান ঘাঁটিতে পৌঁছান শেখ হাসিনা ও তার কয়েকজন ঘনিষ্ঠ। থাকার মতো পর্যাপ্ত ব্যবস্থা না থাকায় এর দু’দিন পর হিন্দন বিমান ঘাঁটি থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় তাকে। পরে দিল্লির নিরাপদ এবং সুরক্ষিত এলাকা লুটিয়েনসের একটি বাড়িতে তার থাকার ব্যবস্থা করা হয়।
যদিও ভারতের সরকার শেখ হাসিনার অবস্থানের বিষয়টি বাংলাদেশ সরকারের কাছে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি। তবে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গত আগস্টে সংসদে বলেছিলেন, শেখ হাসিনা সংক্ষিপ্ত সময়ের নোটিশে ভারতে আসার অনুমতি চেয়েছিলেন।
এই বিষয়ে জানতে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে টেলিফোন কল ও ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়েছে দ্য প্রিন্ট। তবে বৃহস্পতিবার প্রতিবেদন প্রকাশের সময় পর্যন্ত মন্ত্রণালয়ের কোনও প্রতিক্রিয়া পায়নি ভারতীয় এই সংবাদমাধ্যম।
এদিকে শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ ভারতের দিল্লিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) কার্যালয়ে সংস্থাটির দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বাংলাদেশ থেকে তিনিই প্রথম এই পদধারী। বর্তমানে দিল্লিতে বসবাস করছেন সায়মা ওয়াজেদ।
গণমাধ্যমগুলোর তথ্য অনুযায়ী, শেখ হাসিনা ভারতে পৌঁছানোর সময়েই ভারতের প্রধান বিরোধী দল ভারতীয় কংগ্রেস পার্টির শীর্ষ নেতা রাহুল গান্ধী দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেন এবং শেখ হাসিনাকে নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়ে অনুরোধ জানান। সে সময় পর পর কয়েক দিন ক্ষমতাসীন মোদি সরকারের সঙ্গে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতাদের হাসিনার নিরাপত্তার বিষয়ে কথা হয়। ফলে বাংলাদেশ সরকার ও বিরোধী দলগুলো থেকে তাকে ফেরানোর যত দাবিই উঠুক না কেন, ভারত সরকার শেখ হাসিনার নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে, রাজনৈতিক সমঝোতা থাকায় এ বিষয়ে সেখানে কোনো প্রতিক্রিয়াও নেই। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গত আগস্টে তাদের পার্লামেন্টে জানান, শেখ হাসিনা সংক্ষিপ্ত সময়ের নোটিশে ভারতে আসার অনুমতি চেয়েছিলেন। ভারত সরকার তাকে সে অনুমতি দিয়েছে।
শেখ হাসিনা যে এলাকাটিতে রয়েছেন ওই এলাকাটি কঠোর নিরাপত্তাবেষ্টিত; যেখানে দেশটির সাবেক ও বর্তমান অনেক সংসদ সদস্যের বাড়ি আছে। শেখ হাসিনা প্রায়ই বাড়ির বাইরে যান কি না জানতে চাইলে সূত্রটি জানায়, ‘বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন হলে তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত গ্রুপকে জানানো হয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।’