Top Newsরাজনীতি

পাটিগণিত ও রাজনীতি

শাহীন রাজা : রাজনীতির পাটিগণিতে দুইয়ে, দুইয়ে, কখনও চার হয় না। হয়-তো দুইয়ে, দুইয়ে তিন হবে। না হয় পাঁচ হলেও হতে পারে ! কখনও, সখনও হিসেব না মেলাতে পারলে হাতে আর কিছুই থাকে না। সবটাই শূন্য !

রাজনৈতিক যোগ-বিয়োগের হিসেব নির্ভর করে, রাজনৈতিক দলের পরিকল্পনার উপর। দল সমকালীন বিশ্ব ব্যবস্থার সাথে কতোটা সামঞ্জস্যপূর্ণ। পরিচালনা’র চালকের আসনে কে আছেন। পরিচালকের, পরিচালনার উপরেই নির্ভর করে যোগ বিয়োগের সকল হিসেব !

রাজনীতির এই পাটিগণিত ভালোভাবে কষতে হলে মেধা, ব্যক্তিত্ব এবং আদর্শিক সততার প্রয়োজন হয়। যারা এ ব্যাপারে পরিপক্ক এবং দক্ষ, রাজনৈতিক লড়াইয়ে তাঁরাই সফল।

রাজনীতির পাটিগণিতে, গাণিতিক সংখ্যা হচ্ছে জনগণ। এই সংখ্যাই নির্ধারণ করবে আগামী দিনে কোন রাজনৈতিক দল এবং কার নেতৃত্বে দেশ পরিচালিত হবে। অনেক সময় সাধারণ মানুষ ভুল করে ফেলে। ভুল করে, ভুল আদর্শ বা নেতার প্রতি সমর্থনের হাত উচিয়ে ধরে। এই ভুলের কারণে অবশেষে জনগণকেই মাশুল গুনতে হয়। তারপরও সকল বিবেচনায় জনণই হচ্ছে ক্ষমতার একমাত্র উৎস। জনগণ সিদ্ধান্তে ভুল করলে তাকেই দিনশেষে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তবে তা সাময়িক। আবার জনগণই তাদের ভুল থেকে উত্তরণের পথ বাতলে নেয়। কখনও নির্বাচন। আবার কখনও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।

এমনকি স্বৈরাচার উৎখাত করতে হলেও হলেও দেশের মানুষকে পাশে নিতে হবে। মানুষের সমর্থন না থাকলে স্বৈরাচারকে উৎখাত করা যায় না । যেমনটা, বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন সফল হওয়ার একমাত্র উপাদান ছিল দেশের আপামর জনগণের পূর্ণ সমর্থন।

এমনকি দেশ বিরোধী ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে হলেও জনগণকে পাশে পেতে হবে। সম্প্রতি ৫ আগষ্ট ছাত্র জনতার সফল আন্দোলন নস্যাৎ করতে চলে নানামুখী ষড়যন্ত্র। জনগণ পাশে না থাকলে এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করা সম্ভব হতো না। আগামী সময়ের জন্য-ও বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।

পৃথিবীকে এখন এক বিশাল গ্রাম। প্রত্যেকটি দেশ এই গ্রামের এক, একটি সদস্য। বিশ্বব্যবস্থা যে-ভাবে চলছে তার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে না পারলে, আধুনিক রাষ্ট্র হওয়া যাবে। এমনকি দেশের মানুষ আধুনিকায়ন হতে পারবে না। এই আধুনিকায়ন হচ্ছে, উন্নত মনস্ক এক মানবিক গোষ্ঠী। জনকল্যাণ হচ্ছে ধ্যান ধারণা। এর বাইরে যদি কোন রাজনৈতিক দল ভিন্ন চিন্তা করে, তাহলে সেই দল নিজ থেকেই দেশের জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে।

বর্তমান বিশ্ব হচ্ছে, করপোরেট বাণিজ্য গোষ্ঠী নিয়ন্ত্রক। দেশের কোন রাজনৈতিক দলের মধ্যে যদি এ সম্পর্কে কোন ধারণা না থাকে। কিংবা এই করপোরেট গোষ্ঠীর কাছ থেকে দেশের মানুষের জন্য কতটা সুবিধা আদায় করা যাবে, এ ব্যাপারটা না থাকলে সস্তা জনপ্রিয়তা কোন কাজে আসবে না।

আইটি বা আধুনিক প্রযুক্তি হচ্ছে এখন প্রতিদিনের বাস্তবতা! এই বাস্তবতা বাদ দিয়ে যদি কোন রাজনৈতিক দল রাজপথ এবং শ্লোগান নির্ভর থাকে, তাহলে সেই দল দেশ পরিচালনায় সবসময়ই বাইরে থাকবে। রাজনৈতিক দলের প্রযুক্তি জ্ঞান থাকতে হবে। তবে মানবিকতা বাদ দিয়ে শুধু প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল হলে বিপদ আছে। ভাবতে হবে প্রযুক্তি কখনও মানুষের বিকল্প নয়।

ধর্মীয় বাণী মানুষের জীবনকে পরিশীলিত করে। মানুষকে শুদ্ধতা দেয়। মানবিকতা শেখায়। কিন্তু ধর্মান্ধ হওয়া যাবে না। নাগরিক সকল অধিকারের মতোই দেশের সকল মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়টি রাজনৈতিক দলে থাকতে হবে।

পরিশেষে এগুলোই হচ্ছে রাজনৈতিক দলের গাণিতিক সংখ্যা। এই সংখ্যাগুলো কোন দলের মধ্যে আছে। এবং কোন দল ব্যবহারিক অর্থে এগুলো কার্যকর করে। তার উপরই নির্ভর করবে, রাজনৈতিক পাটিগণিতে কার ফলাফল কি হবে ?

লেখক: শাহীন রাজা, হেড অব এডিটোরিয়াল, মোহনা টেলিভিশন।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button