আন্তর্জাতিক

ট্রাম্পকে ব্যবসার জন্য ক্ষতিকর মনে করছে জাপানি

মোহনা অনলাইন

জাপানের ১০টি কোম্পানির মধ্যে প্রায় ৯টি কোম্পানি মনে করছে ট্রাম্পের নীতি ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। ডনাল্ড ট্রাম্পকে ব্যবসার জন্য হুমকি মনে করে প্রায় ৯০ শতাংশ জাপানি কোম্পানি। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক জরিপে উঠে এসেছে এই তথ্য।

আজ বৃহস্পতিবার (২০ ফেব্রুয়ারি) রয়টার্সে প্রকাশিত এক জরিপের ফলাফলে এ তথ্য উঠে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম প্রধান বৈদেশিক বিনিয়োগকারী দেশ হিসেবে জাপানের এ উদ্বেগ স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হয়েছে।

রয়টার্স বলছে, যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্রের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জাপান। তবে টোকিওর কোম্পানিগুলো অনেকটাই চীনের ওপর নির্ভরশীল। তারা যে যন্ত্রপাতি রপ্তানি করে তার বেশির ভাগই চীনের বাজারে আমদানি করা হয়। এখন চীনের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের ফলে ওয়াশিংটন এবং বেইজিংয়ের মধ্যে যে বাণিজ্য যুদ্ধের শঙ্কা ঘনীভূত হয়েছে তাতে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে জাপানের যন্ত্রপাতি উৎপাদন করা কোম্পানিগুলো।

জরিপে অংশ নেওয়া ৮৬ শতাংশ কোম্পানি জানিয়েছেন, ট্রাম্পের নীতিমালা তাদের ব্যবসার পরিবেশের ওপর নেতিবাচক বা কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। মাত্র ১৪ শতাংশ কোম্পানি বলেছে, তারা ইতিবাচক বা কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব আশা করছে।

ডিসেম্বরের একই জরিপে ৭৩ শতাংশ কোম্পানি ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদকে ব্যবসার জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করেছিল, যেখানে জানুয়ারিতে তার আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব গ্রহণের পর এই সংখ্যা আরও বেড়েছে।

ট্রাম্পের নীতির বিরোধিতা করা কোম্পানিগুলোর মধ্যে ৭২ শতাংশ তার বাণিজ্য নীতিকে সবচেয়ে ক্ষতিকর বলে চিহ্নিত করেছে, বিশেষ করে উচ্চ শুল্ক আরোপের বিষয়টিকে। অন্যদিকে, ২৬ শতাংশ কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য দ্বন্দ্ব গভীরতর হওয়াকে বড় সমস্যা হিসেবে দেখছে।

এক তথ্য প্রযুক্তি কোম্পানির কর্মকর্তা মন্তব্য করেছেন, ‘বিশ্ব অর্থনীতির জন্য সুরক্ষাবাদী নীতির (প্রোটেকশনিজম) কোনো ভালো দিক নেই, বরং এটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’

ট্রাম্প ইতোমধ্যেই স্টিল এবং অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। এ ছাড়া চীনের পণ্য আমদানির ওপর ১০ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন এবং কানাডা ও মেক্সিকোকে উচ্চ শুল্কের হুমকি দিয়েছেন, যা আপাতত ৩০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হয়েছে।

জাপান গাড়ির ওপর কোনো আমদানি শুল্ক আরোপ করে না, তবে ট্রাম্প প্রশাসন আগেও বলেছিল যে, জাপানের কিছু নীতিমালা মার্কিন গাড়ি বাজারে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করছে।

গত মঙ্গলবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) ট্রাম্প হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, তিনি আগামী ২ এপ্রিল থেকে গাড়ি আমদানির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে পারেন।

একটি ইলেকট্রনিক্স কোম্পানির এক কর্মকর্তা বলেন, ‘যদি বিশ্বব্যাপী অটোমোবাইল শিল্প শুল্কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তাহলে সেমিকন্ডাক্টর শিল্পেও এর প্রভাব পড়বে।’

যেসব খাতে ট্রাম্পের নীতিকে ইতিবাচক মনে করা হচ্ছে

যেসব কোম্পানি ট্রাম্পের নীতিকে ইতিবাচকভাবে দেখছে, তাদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ ডিরেগুলেশন এবং কর ছাড়কে সবচেয়ে উপকারি বলে মনে করছে। আরেকটি (৩৭ শতাংশ) গ্রুপ ট্রাম্পের জীবাশ্ম জ্বালানি (ফসিল ফুয়েল) উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে।

জরিপে অংশ নেওয়া কোম্পানিগুলোর মধ্যে মাত্র ১৬ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ নিয়ে সতর্ক অবস্থান নিচ্ছে, যখন ৮০ শতাংশ জানিয়েছে, তারা তাদের ব্যবসা বা বিনিয়োগ পরিকল্পনায় কোনো পরিবর্তন আনবে না।

এই মাসে জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার সঙ্গে প্রথম সরাসরি বৈঠকে ট্রাম্প জাপানকে যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি ও প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগের জন্য চাপ দিয়েছেন।

এ ছাড়া, নিপ্পন স্টিলের ১৪ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার মূল্যের ইউএস স্টিল অধিগ্রহণ নিয়ে বিরোধ সমাধানের পথ খুঁজেছেন। ট্রাম্প বলেন, নিপ্পন স্টিল এখন ‘কেনার বদলে বিনিয়োগের’ দিকে ঝুঁকছে এবং তিনি এটি মেনে নিচ্ছেন। জাপানের প্রধান মুখপাত্র ইয়োশিমাসা হায়াশি জানান, নিপ্পন স্টিল তাদের মূল পরিকল্পনায় বড় পরিবর্তন আনার কথা ভাবছে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button