Top Newsজাতীয়রাজনীতি

শেয়ালের ‘মামা’এবং রাজনীতি

শাহীন রাজা : এক জঙ্গলে ছিল এক বাঘ। আর জঙ্গলের জলায় বাস করতো এক কুমির। ওই জঙ্গলে একটা খেঁকশেয়াল-ও ঘর বাধে।
শেয়াল সবসময় আতঙ্কে থাকে। ডাঙায় বাঘ। আর জলে কুমির। সারাদিন ছোট-বড় যাই শিকার করুক না কেন শেয়াল, তার বড় অংশ বাঘ এবং কুমিরকে দিতে হয়। তা না হলে বাঘ শেয়ালকে জঙ্গল থেকে বের করে দেবে। কিংবা খেয়েও ফেলতে পারে।
কুমির আগেই জানিয়ে দিয়েছে, জল পান করতে হলে জলের ট্যাক্স দিতে হবে। যদি না দাও, তাহলে জল খেতে এসো না। খালি হাতে আসলে তোমার ভাগ্য নির্ধারণ হয়ে যাবে।
শেয়ালের আর কি করা ! দুই মহাজনকে জোগান দিয়ে যাচ্ছে। সারাদিন জঙ্গলে ছোটাছুটি করে শিকার করতে, করতে শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়। ক্ষুধা আর ক্লান্ত দেহ নিয়ে বাঘ আর কুমিরকে দিনের ট্যাক্স দিয়ে তারপর মুখে আহার তুলতে হয়। এ জীবন আর ভাল্লাগে না শেয়ালের। ভাবতে থাকে, যেভাবেই হোক এর থেকে মুক্ত হতে হবে।
শেয়াল ভাবতে, ভাবতে হঠাৎ তার মাথায় আসে, দু’জনের মধ্যে স্থায়ী বিবাদ লাগিয়ে দিতে হবে। তাহলেই সে মুক্ত। কেন না বাঘ আর কুমির সবসময় ঝগড়ায় ব্যস্ত থাকবে। ঝগড়া বাদ দিয়ে তার দিকে আর নজর দেওয়ার সময় পাবে না। কিন্তু দুজনের মধ্যে ঝগড়া লাগাবে কি করে। শেয়াল আবারও ভাবতে বসে যায় । ভাবতে, ভাবতে শেয়াল হঠাৎ চিৎকার করে ওঠে। চিৎকার করে বলতে থাকে, পেয়েছি। পেয়েছি।

পরদিন সকালে নাদুসনুদুস কয়েকটা খরগোশ শিকার করে বাঘের সামনে হাজির হয়। দুর থেকেই বাঘকে সালাম দেয়। বাঘ-তো সুন্দর উপঢৌকন পেয়ে খুবই খুশী।
:ভাগ্নে দিন তো তোমার ভালোই যাচ্ছে।
: মামা, সবই আপনার আর্শীবাদ।
: তা ভাগ্নে কিছু বলবে মনে হচ্ছে ?
: হ্যাঁ। তবে সাহস দিলে বলতে পারি।
: বলো ভাগ্ন, বলো। আজ তুমি আমার পছন্দের খাবার নিয়ে এসেছো।
: মামা, এই জঙ্গলের রাজা কে?
: কেন, আমি। এ নিয়ে কোন সন্দেহ আছে ?
: না, মামা। তবে সেদিন জল খাওয়ার সময় কুমির বলে বাঘরে বলিস, এবার জল খেতে এলে হয়। ওকে টান মেরে সোজা জলের গভীরে নিয়ে যাবো।
: কি ! এতো বড় সাহস ! ডাঙায় আসুক। ওকে চিবিয়ে, চিবিয়ে খাবো।
পরদিন সকাল শেয়াল কুমিরের জন্য-ও একই উপঢৌকন নিয়ে যায়। কুমিরের কাছেও বাঘকে যা বলছে, তাই বর্ণনা করে। কুমিরও ক্ষিপ্ত হয়ে বলে, বাঘ জল খেতে আসুক। একটানে মাঝ জলায় নিয়ে যাবো।

এরপর একদিন। এক আলো ঝলমলে দুপুরে। বাঘ এবং কুমির মুখোমুখি হয়ে যায়। আর যায় কোথায়, দেখা হওয়া মাত্র যুদ্ধ আর যুদ্ধ। যুদ্ধ দেখে শেয়াল দুর থেকে, মামা জিন্দাবাদ। মামা জিন্দাবাদ। আর হাত তালি দিয়ে নাচতে থাকে। কাঠবিড়ালি শেয়ালের নাচন দেখে বলে ওঠে, পন্ডিত দু’জনেই তো লড়াই করছে। এরমধ্যে কে আপনার মামা, পন্ডিত মশাই।
শেয়াল তাৎক্ষণিক জবাব দেয়, এ লড়াইয়ে যে জিতবে সেই আমার ‘মামা’। এরপর শেয়াল শ্লোগান দিয়ে ওঠে, লড়াই – লড়াই চাই। এ লড়াইয়ে জিতবে কে ? মামা ছাড়া আর কে !

এরপর থেকে লড়াই অব্যাহত রয়েছে। আর শেয়ালেরা হাততালি দিয়ে চলছে। যখন যে জিতে, তখন সেই শেয়ালের মামা হয়ে যায়।

শাহীন রাজা: হেড অব এডিটোরিয়াল, মোহনা টেলিভিশন।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button