
দেশ কি ক্রমশই তমসা’র পথে চলছে ? তা না হলে একজন ষাটোর্ধ পুরুষ কি করে আট বছরের বালিকাকে ধর্ষণ করে !
বোনের ঘরে বেড়াতে এসেছিল, আনন্দ নিয়ে। বোনের সংসারে সারাদিন দৌড়ঝাঁপ করে দিনশেষে বোনের বিছানায় নিরাপদ আশ্রয়ে ঘুমিয়ে যায়। মাঝরাতে এক পিশাচ ছোট্ট মেয়েটিকে তুলে নিয়ে যায়। মানুষ রূপে পিশাচটি আর কেউ নয়, বোনের শশুর ! পিতৃতুল্য সম্পর্ক।
মেয়েটি ( আছিয়া) বিশ্বকে জানিয়ে দিলো, দুলাভাই এবং তাওই– এরা কেউ তোমার জন্য নিরাপদ নয়। নিরাপদ নয় মানুষের রূপ নিয়ে বসবাস করা পিশাচেরা। পিশাচদের ভয়ে আতঙ্কিত গোটা বাংলাদেশ।
সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস বিদেশী একটা সংবাদ সংস্থাকে দেয়া এক সাক্ষাৎ-এ বলেছেন, গাজার মতো সম্পূর্ণরূপে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ ! তিনি বলেন, তবে এতে কোনো ভবন ধ্বংস হয়নি। বরং পুরো প্রতিষ্ঠান, নীতি, মানুষ, মানবতা ধ্বংস হয়ে গেছে।
গত ১৫ বছর বিচারহীন শাসন ব্যবস্থা অব্যাহত থাকায়, মানুষ উচ্ছৃঙ্খল হয়ে ওঠে। বাইরে এবং অন্দর মহলে। দেশে আইনের শাসন না থাকায় অবৈধ, দূর্ণীতি এবং অসামাজিক কার্যকলাপের প্রতি আগ্রহ হয়ে ওঠে। ভেঙে যায় সকল নিয়মনীতি এবং সামাজিক বন্ধন।
অনিয়মের সংস্কৃতি চালু হওয়ার কারণে, আমাদের আবহমান সম্পর্ক, বিশ্বাস এবং বোধ ধ্বংস হয়ে গেছে। দেশের মানুষ এখন আত্মকেন্দ্রীক। নিজের ভোগবিলাস আর সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য নিয়ে চলছে আগামীর পথে !
দেশে আইনের শাসন এবং বিচার ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার কারণেই আছিয়া’র বোনের শশুর এ ধরনের জঘন্য অপকর্ম করতে উদ্বুদ্ধ হয়েছে। ধরে নিয়েছে গরীবের সন্তান, তাকে ধর্ষণ করলে কি আর এমন হবে !
এছাড়াও বাংলাদেশের সামাজিক অবস্থা খুব একটা ধর্ষিতার পক্ষে নয়। বিশেষ করে পরিবার। কোন মেয়ে ধর্ষিত হলে পরিবারের লোকেরা ধর্ষকের পরিবর্তে ধর্ষিতার বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই চেপে যাওয়ার মানসিকতা। এবং মেয়েটির উপর নেমে আসে পারিবারিক নির্যাতন। ধর্ষিত হওয়ার জন্য মেয়েকে দোষারোপ করতে থাকে। এমনকি সব থেকে আপনজন-ও এই কাজটি। ধর্ষণের অপরাধ গোটা জীবন মেয়েটিকে বয়ে চলতে হয়। সাথে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি ভালোবাসার পরিবর্তে থাকে আতঙ্ক।
সামাজিক ভয়ে ধর্ষকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেয়ায় ধর্ষক হয়ে ওঠে আগ্রাসী। একের পর এক সে এই জঘন্য করে যেতে থাকে। আছিয়া মৃত্যু অবস্থায় পড়ে না গেলে এই ঘটনাও প্রকাশ পেতো না। সমাজের ভয় এবং বড় বোনের সংসার ভেবে আছিয়া’র পরিবার নিশ্চুপ হয়ে যেতো।
অনগ্রসর এই অঞ্চলে সুনাগরিক তৈরির ক্ষেত্রে রাষ্ট্র এবং সমাজের যথেষ্ট ভূমিকা রয়েছে। রাষ্ট্র যদি ন্যায় ও সাম্য প্রতিষ্ঠায় ব্যর্থ হয় তাহলে নাগরিকের মৌলিক অধিকার খর্ব হয়ে থাকে। সেই দেশ বা সমাজে কোনভাবেই উন্নত সমাজ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে না। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে এর উল্টোটা হয়। অবক্ষয় ভয়ঙ্করভাবে সমাজের রন্ধ্রে, রন্ধ্রে আক্রমণ চালায় । একারণেই গত দেড় দশক রাষ্ট্রের কর্তৃত্ববাদী সর্বগ্রাসী রূপ থেকে কোন কিছুই রক্ষা পাইনি !
আমাদের সামাজিক অবক্ষয়ের ভয়ঙ্কর অধঃপতনের অন্যতম একটি কারণ হলো এই রাষ্ট্রীয় অনাচার ও দায়িত্বহীনতা। ধর্মীয় অনুশাসন এবং নৈতিকতা চর্চার ক্ষেত্রগুলো যেভাবে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়ার কথা সেটা আমাদের দেশে খুব একটা হয়নি। বরঞ্চ অসৎ উদ্দেশ্যে ধর্মকে ব্যবহার করেছে, কিছু ধর্ম ব্যবসায়ী। এই অসৎ লোকেরা ধর্মের দোহাই দিয়ে নৈতিকতার চর্চাকে বাধাগ্রস্ত করে। এছাড়া সমাজে যদি অন্যায় কাজ করে কেউ পার পেয়ে যায় তাহলে অন্যরাও এতে উদ্বুদ্ধ হয়