
একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীদের সঙ্গে সবারই একটি সুসম্পর্ক হয়ে উঠে। অনেক সময় তা সহকর্মী থেকে ব্যক্তিগত পর্যায়েও চলে যায়। আবার সুসম্পর্কের কারণে ব্যক্তিগত কিংবা পারিবারিক নানা বিষয়ে আলোচনা করা হয় সহকর্মীর সঙ্গে। কিন্তু কখনো কখনো কিছু পরিস্থিতিতে বুঝতে পারবেন, সহকর্মীর সঙ্গে বেশি সখ্যতা বোধ হয় ঠিক হয়নি।
স্কুল, কলেজ এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় পেরিয়ে কর্মক্ষেত্রে গিয়েও সহকর্মীর চোখে ‘সর্বনাশ’দেখতে পারেন কেউ। মনে হতে পারে, ‘লাগবে, তাকে আমার লাগবে। সে ছাড়া আর কিছু চাইনে।’ সহকর্মীকে ‘ভালোলাগা’র কারণও রয়েছে প্রচুর। কর্মক্ষেত্রে কাটাতে হয় দিনের একটা দীর্ঘ সময়। মিলেমিশে কাজ করতে হয়। যে কারণে একে অপরকে জানার সুযোগও তৈরি হয়। বিশেষ কোনো গুণ বা আচার-ব্যবহার কিংবা স্রেফ ভালোলাগার কারণেই ভালোলাগা; আর ভালোলাগা থেকে মায়া তৈরি হওয়াটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়। সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্কের অনেক সুবিধার কথাও অনেকে বলে থাকেন। তবে সুবিধা যার আছে, তার কিছু অসুবিধাও থাকে। তাই কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকতে পারলে অসুবিধাগুলো এড়ানো সহজ হয়।
ফলাও করে সম্পর্কের কথা জানান দেওয়া কিংবা স্যোশাল মিডিয়ায় ছবি শেয়ার করে নানা অনুভূতি ব্যক্ত করার চেয়ে বিষয়টা নিজেদের মধ্যে রাখতে পারাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ, পরে দেখা গেল, কোনো কারণে নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বা টানাপোড়েনের সৃষ্টি হলো, তখন অফিসে সহকর্মীদের সামনে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে। তা ছাড়া সম্পর্কের বিষয়টা অফিসে অনেকে জানলে ভালোর চেয়ে মন্দ হওয়ার আশঙ্কাই বেশি থাকে। বিশেষ করে ফিসফাস, কানাকানি, সমালোচনা ও গুজবের মধ্যে পড়ারও আশঙ্কা তৈরি হয়।
তাই সম্পর্কের বিষয়টা নিজেদের মধ্যে রাখতে পারলে অনেক ঝামেলা থেকে রেহাই পাওয়া যায়। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, সহকর্মীদের কাছে এসব বিষয় গোপন রাখা কঠিন। তাই ফলাও করে না বললেই নিস্তার মিলল, এমনটা ভাবার কোনো কারণ নেই। নিজেদের আচার-আচরণ, চলাফেরা এমনকি কথাবার্তাতেও ব্যাপারটা যেন ফুটে না ওঠে, সেদিকে যেমন দৃষ্টি রাখতে হবে, তেমনই পেশাদার আচরণও বজায় রাখতে হবে।
ভালোবাসার মতো ভালোবাসলে নিয়মকানুন পথ আটকাতে পারে না। না, কথায় কোনো ভুল নেই। তবে সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ালে চাকরি হারানোর ঝুঁকিও কিন্তু উপেক্ষা করা যায় না। প্রশ্ন করতে পারেন, চাকরি হারানোর ঝুঁকি, কীভাবে? প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সুনির্দিষ্ট চাকরিবিধি আছে। কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্ক অনুমোদন করে না। কেন করে না? ‘স্বার্থের দ্বন্দ্ব’।
কর্মক্ষেত্রে প্রত্যেকেরই স্বার্থ–সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। রয়েছে পদোন্নতি, প্রণোদনাসহ নানা প্রত্যাশা। সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ালে বা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হলে বিষয়গুলো নানাভাবে প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাহলে উপায়? ভালোলাগা, ভালোবাসা তো আর পরিকল্পনা করে হয় না। স্বতঃস্ফূর্তভাবে হয়ে যায়। তাই প্রতিষ্ঠানের চাকরিবিধির নিয়ম জেনে নিতে হবে। যদি কোনো সুনির্দিষ্ট বিধিনিষেধ না থাকে, তাহলে চিন্তা রইল না। আর বিধিনিষেধ থাকলে সে ক্ষেত্রে যেকোনো একজনকে যত দ্রুত সম্ভব অন্যত্র চাকরির চেষ্টা করতে হবে।
‘ব্রেকআপের ঝুঁকি’ সম্পর্কেও পূর্ণ ভাবনা থাকা জরুরি। কোনো কারণে সম্পর্ক ভেঙে গেলে সম্বোধন যেন ‘তুমি’ থেকে ‘তুই’তে গিয়ে না ঠেকে, সেদিকেও নজর রাখতে হবে। কারণ, বিব্রতকর পরিস্থিতি তৈরি হলে অফিসের পরিবেশ নষ্ট হবে। পাশাপাশি সহকর্মীদের কাছে নিজেদের সম্মান হারানোরও ঝুঁকি দেখা দেবে।
দেখা গেল, সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের কোনো লিখিত বা স্বীকৃত বিধিনিষেধ নেই এবং দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে ঠিকও হয়ে গেল। কার্ডও ছাপানো হলো। কিন্তু এ পর্যন্ত অফিসের কেউ কিছু জানেন না। দুজনে বিয়ের কার্ড নিয়ে অফিসের বস, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও সহকর্মীদের হাতে দিয়ে বললেন, ‘সবাইকে কিন্তু আসতে হবে।’ ভুল করেও কিন্তু এটা করা যাবে না। কারণ, এটা করলে বিশ্বস্ততা কমে যায়।
এমনকি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ, বস ও সহকর্মীরা বিষয়টা ভিন্নভাবে নাও নিতে পারেন, যা পরবর্তী সময় প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ মেয়াদে কাজ করার ক্ষেত্রে ভালো ফল বয়ে আনবে না। তাই এ জটিলতা এড়াতে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর কিছুদিন সময় নিয়ে বুদ্ধিদীপ্তভাবে সহকর্মীদের সম্পর্কের বিষয়টা জানাতে হবে। তারপর বিয়ের কার্ড দিয়ে দাওয়াত দিতে হবে। এতে তারা যেমন খুশি হবেন, তেমনই বিষয়টা আনন্দের সঙ্গে গ্রহণ করবেন।