
সবিনয় অনুরোধ, বাংলাদেশ নিয়ে এ-তো দুঃশ্চিন্তা না করার জন্য। তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশের মতোই বাংলাদেশে ছোটখাটো অনেক সমস্যা আছে। আবার অনেক ভালো কাজ আছে। যা বিশ্ব অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। একটা ছোট্ট ভূখন্ড! ১৮ কোটি মানুষের বসবাস! তারপরও থেমে নেই। সামনে’র দিকে এগিয়ে চলছে। এই অঞ্চলে এ এক বিস্ময় !
নদীমাতৃক বাংলাদেশ। নদীর মতোই স্রোতস্বিনী। নদীর স্রোতে ধুয়েমুছে নেয় সকল ক্রোধ, সাম্প্রদায়িকতা আর পরশ্রীকাতরতা। হাজার বছর ধরে সুখে-দুঃখে একসাথে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করে আসছে। এই জন্য জীবের প্রতি ভালোবাসার ধর্ম এখানে বিকশিত হয়। ভারতের আর কোন রাজ্যে এর বিকাশ ঘটেনি। মানবতা, ভাতৃত্ব এবং সাম্যবাদের দর্শন সুফিবাদ-ও এই ভূখন্ডে বিস্তার লাভ করে। একমাত্র এখানেই তরোয়ালের মাধ্যমে নয়। মানবতার ধর্ম, ইসলামের বিকাশ ঘটেছে। তাই এখানকার জনগোষ্ঠী খুবই সহিষ্ণু।
এমনকি সনাতনী ধর্মের ক্ষেত্রে -ও অনেকটা একই রকম। এখানে, শীব, রাম বা নারায়ন প্রধান নয়। এখানে দূর্গা, শ্যামা, সরস্বতী এবং লক্ষীকে পূজো দিয়ে থাকে। এখানে মতৃপ্রেম অনেক বেশী। যা গোটা ভারতের আর কোথাও নেই।
হে বন্ধু প্রতিম প্রতিবেশী আপনাদের বলছি আমাদের সাম্প্রদায়িকতা জ্ঞান দিয়ে সময় নষ্ট না করার জন্য অনুরোধ। আমাদের নিয়ে মাথা না ঘামিয়ে চীন, আমেরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের দিকে নজর দেন। জাপানকে-ও এর মধ্যে রাইখেন। বাংলাদেশ নিয়ে কেন এতো টেনশন। মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলেন, বাংলাদেশ নামে অস্বস্তি। এটা করলে আপনারা স্বস্তিতে থাকবেন। আর আমাদের শান্তিতে থাকতে দিন। আমরা মধ্যম আয়ের দেশে’র দিকে এগুতে চাই।
বন্ধু প্রতিম প্রতিবেশী শুনুন, আপনাদের দেশে সম্প্রদায় এবং জাতিগত সংঘর্ষ লেগেই আছে। বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী বছরের পর বছর আন্দোলন বা সংগ্রাম করছে। নিজ জাতিগোষ্ঠীর একটা স্বাধীন ভূখন্ডের জন্য। উত্তর, পূর্ব এবং পশ্চিম প্রান্তে স্বাধীনতা চাইছে। এ-ই স্বাধীনতা কামীদের নির্মম ভাবে দমন করা হচ্ছে। এমনি গোটা ভারতে রাম ধর্ম প্রতিষ্ঠার নামে প্রতিনিয়ত ইসলাম ধর্মের অনুসারীদের উপর অত্যাচার চলছে। এমনকি বৌদ্ধ এবং খ্রীষ্টধর্মের অনুসারীরা-ও আপনাদের অত্যাচার থেকে বাদ যায় না। অথচ বিষয়টি আপনাদের আভ্যন্তরীণ হিসেবে দেখে আসছি। এ নিয়ে খুব একটা আমরা কথা বলি না। অপপ্রচার বা প্রপাগাণ্ডা তো অনেক দুরের বিষয়। এখন যদি আমরা নিয়মিত করতে থাকি। বিষয়টা আপনাদের জন্য সুখকর হবে ?
আর একটা কথা। কথাটা সবমসময় মাথায় রাখবেন। বাংলাদেশ কিন্তু খাবার টেবিল বা এলোমেলো বিছনায় দস্তখতের মাধ্যমে স্বাধীন হয়নি। কিংবা পদলেহন করেও স্বাধীনতা লাভ করেনি। এই অঞ্চলে একমাত্র দেশ, বাংলাদেশ। যে দেশ, সশস্ত্র যুদ্ধের মধ্য দিয়ে একটা নির্দিষ্ট মানচিত্র লাভ করেছে !
নয়মাসের যুদ্ধে লক্ষ জনতার আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা লাভ । কারো দয়া বা অনুগ্রহে নয়। রক্তের বিনিময়ে স্বাধীনতা লাভ করেছি।
এ-ই অহংকার এই অঞ্চলে কোন জাতি বা দেশ করতে পারবে না। এ-ই অহংকার শুধুমাত্র এই বদ্বীপ অঞ্চলের জনমানুষের ! তবে হ্যাঁ আমাদের যুদ্ধে আপনাদের সহযোগিতার কথা স্মরণ করি। এবং সবসময়ই করবো। আমরা এই সহযোগিতা বিতর্কিত করে আপনাদের এই অবদানকে আমরা ছোট করতে চাই না। আমরা অকৃতজ্ঞ না। আমরা জানি, কৃতজ্ঞতা জানানো মানে নিজেকে ছোট করা নয়।
তবে একটা কথা না বলে পারলাম না। সাতচল্লিশ-এ স্বাধীন হওয়ার পর আপনারা পাকিস্তানের সাথে তিনটে যুদ্ধ করেছেন। মাত্র একটাতে পূর্ণ বিজয় পেয়েছেন। কেননা বাংলাদেশের জনগণ এবং সেনাবাহিনী এ যুদ্ধে আপনাদের পাশে ছিল। আমরা শুধু বলতে চাই, এ বিষয়টি মাথায় রেখেন। সেই সাথে মাথায় রাখবেন, আমরা আপনাদের বন্ধু প্রতিম প্রতিবেশী।