শীতের তীব্রতায় বিপর্যস্ত জনজীবন
মোহনা নিউজ
সারাদেশের মধ্যে ১১টিতে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এরফলে মাঝারি থেকে তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। এক সপ্তাহ ধরে চলছে এই পরিস্থিতি, যা হাড় কাঁপিয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি আছে কুয়াশার প্রকোপ।
এমন পরিস্থিতিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে কনকনে ঠান্ডায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে দরিদ্র খেটে খাওয়া মানুষ খুব কষ্টে আছেন। শীত উপেক্ষা করেই তাদের কাজের সন্ধানে বের হতে হচ্ছে। আগের মতো কাজও পাচ্ছেন না তারা। রিকশাচালক, দিনমজুর, ফেরিওয়ালাসহ ভাসমান ব্যবসায়ীদের আয়রোজগার কমেগেছে।
খড়কুটো জ্বালিয়ে তাদের শীত নিবারণের চেষ্টা করতে দেখা গেছে। শীতবস্ত্রের দোকানগুলোয় ভিড় বাড়ছে। বৃদ্ধ ও শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে শীতজনিত নানা রোগ। প্রচণ্ড ঠান্ডায় নবাবগঞ্জ, কুমিল্লা ও চুয়াডাঙ্গায় শিশুসহ তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়ায় শনিবার ভোরে ৪ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল।
রাজধানীসহ দেশের অধিকাংশ এলাকায় দিনেও হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। আর সন্ধ্যার পর ঘনত্ব আরও বেড়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে দিনেও ঘন কুয়াশার দেখা মিলছে। অদূরের মানুষজন, বস্তু বা যানবাহন দেখা যাচ্ছে না।
দুর্ঘটনা এড়াতে ঢাকার বাইরে দিনেও হেডলাইট জ্বালিয়ে যানবাহন চলাচল করছে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করছে নৌযান। সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপে এ তথ্য জানা গেছে।
দিনাজপুরের প্রতিনিধি জানান, গত কয়েকদিন ধরে এই জেলায় কুয়াশার দাপট রয়েছে লক্ষ করারমত। শুধু তাই নয় দিনের বেশির ভাগ সময় সুর্যের মুখ দেখা না দেয়ায় জনজীবনে নেমেছে ভোগান্তিতে। পাশাপাশি হিমেল বাতাসে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। মহাসড়কে যানবাহন গুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলতে দেখা গেছে। ঠান্ডায় বিপাকে নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া মানুষ। অনেকে শীত উপেক্ষা করেই চলছে কর্মস্থলে।
রাজবাড়ীতে কুয়াশা আর ঠান্ডায় জনজীবন। তীব্র শীত আর ঘন কুয়াশায় জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বেশী দুর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। দৈনন্দিন কাজকর্মে বিরাজ করছে স্থবিরতা।
অনেক বেলা পর্যন্ত থাকছে কুয়াশা থাকে। সেই সঙ্গে মৃদু হিমেল বাতাস। সকালে কুয়াশার ঘনত্ব এতই বেশী থাকে যে কয়েক গজ দূর থেকেও কিছু দেখা যায় না।
দৃষ্টিসীমা কমে যাওয়ায় সড়কে চলাচলকারী যানবাহনগুলোতে হেডলাইট জ্বালিয়ে ধীরগতিতে চলতে হয় গাড়ী। মাঝে-মধ্যে সূর্যের দেখা মিললেও তা বেশীক্ষণ স্থায়ী হচ্ছে না। দুপুর নাগাদ শীতের তীব্রতা কিছুটা কমলেও বিকাল থেকে আবার বাড়তে থাকে শীত।
সরেজমিনে রাজবাড়ীর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, রাস্তা-ঘাট, হাট-বাজারসহ জনসমাগম স্থানগুলোতে লোকজনের উপস্থিতি কম। রিক্সা-ভ্যান চালক, দিনমজুর, কৃষি শ্রমিকরা কাজ করার জন্য পথে-মাঠে নেমে শীতে কাবু হয়ে পড়ছে।একাধিক গরম কাপড় গায়ে দিয়েও তাদের শীত নিবারণ হচ্ছে না। অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাচ্ছে।
রিকশাচালক ইয়াসিন আলী বলেন, সকালে বাড়ী থেকে কাজে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়েছি। কিন্তু যে ঠান্ডা এতে করে শরীর আর পেরে উঠছে না। কুয়াশায় চোখে কিছু দেখা যায় না। তার উপরে আবার বেকায়দা ঠান্ডা।
অন্যদিকে কিশোরগঞ্জের ভৈরব প্রতিনিধি জানান উপজেলায় প্রচণ্ড শীতে বেড়েছে ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঠাণ্ডা, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া, হাঁপানি ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধরা আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। প্রতিদিন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এছাড়া কর্মজীবী মানুষের কষ্ট হচ্ছে।
চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়ার মতো ঠাণ্ডাজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
শনিবার দেশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গায় ৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটা মৃদু শৈত্যপ্রবাহের মধ্যে পড়ে। এছাড়া ১০ ডিগ্রির মধ্যে তাপমাত্রা ছিল ফরিদপুর, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, দিনাজপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড়, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, সাতক্ষীরা ও বরিশাল অঞ্চলে।
অন্যদিকে শনিবার দেশে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল বঙ্গোপসাগরের পার কক্সবাজারের টেকনাফে ২৬.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ২৬ তাপমাত্রা যেহেতু গরম নয় বা ২৪ ডিগ্রি শীত অনুভবের জন্য যথেষ্ট, তাই দেখা যাচ্ছে, সর্বোচ্চ তাপমাত্রাও গরম তৈরির জন্য যথেষ্ট নয়।
তবে আশার কথা হচ্ছে, সাগরপারের এলাকায় তাপমাত্রা বাড়ছে, তাই ধীরে বঙ্গোপসাগরের দিক থেকে উষ্ণ আর্দ্রতা মিশ্রিত গরম বায়ু সারা দেশে বিস্তার লাভ করতে পারে। এর ফলে সোমবার থেকে তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করবে। এরপর কয়েকদিনের মধ্যে মাঝারি থেকে তীব্র শীতের অনুভূতি কমতে পারে।