টিনএজারদের ডায়াবিটিসে কী কী ডায়েট রুলস মাথায় রাখা জরুরি? টিনএজ বয়সে ডায়াবিটিসের কয়েকটি কারণ নিয়ে আগে আলোচনা করা যাক। এর মধ্যে অন্যতম হল সেডেন্টারি জীবনযাপন। দেখা যাচ্ছে, কোভিডের পরে কমবয়সে ডায়াবিটিসের সংখ্যা বেড়েছে অনেকগুণ। লকডাউন, বাড়িতে বসে থেকে ফাস্ট ফুড খাওয়া এসবের ফলে ওজন বেড়েছে অনেকের। তার ফলে হরমোনাল ইমব্যালান্সও দেখা দিয়েছে। আবার ওজন কমানোর জন্য অনেক টিনএজার ক্র্যাশ ডায়েট করে। বা হয়তো একদম কার্বোহাইড্রেট বাদ দিয়ে দেয় খাবার থেকে। মনে রাখতে হবে, মস্তিষ্কের কাজের জন্যও গ্লুকোজ়ের প্রয়োজন। সেই গ্লুকোজ় খাবারের মাধ্যমে শরীরে না পৌঁছলে হঠাৎ করে সুগার ফল করতে পারে। রিপিটেড হাইপোগ্লাইসেমিয়া হলে, শরীর ইনসুলিন রেজ়িস্ট্যান্ট হয়ে পড়ে। ফলে, ডায়াবিটিসের প্রবণতা আরও বাড়ে। আবার স্ট্রেসের ফলে স্ট্রেস হরমোন নিঃসৃত হয় বেশি, ইনসুলিন নিঃসরণ কমে। ঘুমের সময়ে হ্যাপি হরমোন রিলিজ় হয়। স্ট্রেসের ফলে ঘুম কম হয়, ফলে সুগার মেটাবলাইজ়ড হয় না। রক্তে শর্করা জমতে থাকলে ডায়াবিটিসের আশঙ্কা বাড়ে। মনে রাখা প্রয়োজন, টিনএজারদের সাধারণত টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিস হলেও (শরীরে এক্ষেত্রে ইনসুলিন তৈরি হয় না) কিছু ক্ষেত্রে টাইপ টু ডায়াবিটিসও হতে পারে। অর্থাৎ, কারওর শরীরে ইনসুলিন তৈরি হলেও তা যথাযথ কাজ করে না। এই দু’ক্ষেত্রে ওষুধ আর ডায়েট, আলাদা আলাদা হয়।
হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় খাওয়াদাওয়া : টিনএজ ছেলেদের ক্ষেত্রে অনেকসময় দেখা যায়, টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিসের সঙ্গে সিভিয়ার হাইপোগ্লাইসেমিয়া হচ্ছে। তখন তাদের খিদে পায় বেশি, ফলে একসঙ্গে অনেকটা খাবার খেয়ে নেয়। এরফলে, সুগারের মাত্রা ফ্লাকচুয়েট করে। সুগার ফল করার (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) সঙ্গে সুগারের মাত্রা হঠাৎ বেড়ে যাওয়ারও সম্পর্ক আছে। ছোট ছোট কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট ও প্রোটিনের ব্যালান্স মেনে চললে, হঠাৎ সুগার কমে যাওয়ার ফলে খিদে পেয়ে যাওয়া বা মাথা ঘোরার সমস্যা হবে না। টাইপ ওয়ান ডায়াবিটিসের ক্ষেত্রে মিডনাইট হাইপোগ্লাইসেমিয়া আর একটি বড় সমস্যা। যেমন ধরুন, রাত তিনটে নাগাদ হয়তো সুগারের মাত্রা কমে গেল! আর্লি ডিনার করে নিয়ে শোওয়ার সময়ে প্রোটিনযুক্ত স্ন্যাক্স খাওয়া যেতে পারে।
কোন ডায়াবিটিসে কী খাবেন: টাইপ টু ডায়াবিটিসের ক্ষেত্রে অনেকের হয়তো ফাস্টিংয়ে সুগারের মাত্রা বেশি থাকে। এদের ক্ষেত্রে রাতে ইষদুষ্ণ গরম দুধে দু’তিনটে আমন্ড ভিজিয়ে খেতে পারে। আবার পিপি বেশি থাকলে, মিড মর্নিংয়ে কোনও একটি ফল ও প্রোটিন খাওয়া ভাল। গোটা ফল, টক দই খাওয়ার দেড়-দু’ঘণ্টা পরে লাঞ্চ করা যেতে পারে। আবার অনেকের হয়তো ফাস্টিং ও পিপি, দুই-ই নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু ডায়াবিটিসের লক্ষণ আছে। তখন এইচবিএওয়ানসি (HbA1c) টেস্টে হয়তো ধরা পড়ল সুগারের মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত। তাদেরকে নিয়মিত মনিটর করা প্রয়োজন। টাইপ ওয়ান বা টু, দু’ধরনের ডায়াবিটিসেই সিম্পল কার্বোহাইড্রেট (চিনি, মিষ্টি) একদম না। বিস্কিট ও মুড়ি এড়িয়ে চলা ভাল। ছোট ছোট ফ্রিকোয়েন্ট মিল উপকারী, আর প্রতিটি মিলেই অন্তত একটি প্রোটিন আইটেম যেন থাকে। অর্থাৎ, সারাদিনে যদি ৫০ গ্রাম প্রোটিন থাকে, তা যেন চারটি মিলে ভাগ করা থাকে। সিডস ও নাটস সুগারের মাত্রা ওঠানামা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এখন ইয়ং অ্যাডাল্টদের মধ্যেও হার্টের অসুখের উদাহরণ বাড়ছে। এর অন্যতম কারণ হতে পারে সুগার ফ্লাকচুয়েশন। ডার্ক চকোলেটও ভাল। এর সঙ্গে অবশ্যই প্রয়োজন অ্যাক্টিভিটি। ফ্রি হ্যান্ড এক্সারসাইজ় ও সূর্যপ্রণাম, এই দুয়ের কারণে হরমোনাল ইমব্যালান্স দূর হতে পারে।