প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা অগ্নিসংযোগকারীদের প্রতিহত করার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, বাংলার মাটিতে অগ্নিসংযোগকারী ও জঙ্গিদের কোনো স্থান নেই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আজকে যারা অগ্নিসন্ত্রাস ও সন্ত্রাসি কর্মকান্ড করছে, আমি জনগণকে আহ্বান জানাব তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। ২০১৩ ও ১৪ সালেও তারাই প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল। আজকেও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”
তিনি বলেন, “এই বাংলার মাটিতে অগ্নিসন্ত্রাসি ও জঙ্গিবাদিদের কোন স্থান নাই।”
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা গতকাল (৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় সভাপত্বিকালে দেওয়া প্রারম্ভিক ভাষণে এ কথা বলেন।
আসন্ন নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজন করাই তাঁর সরকারের লক্ষ্য উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সামনে নির্বাচন, এটা জনগণের সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার। এর সুরক্ষা দেওয়া এবং সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন করাই আমাদের লক্ষ্য।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ যখন শান্তি ও স্বস্তিতে তখনই বিএনপি আবার রাস্তায় নেমেছে অগ্নিসন্ত্রাস নিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করতে। এই অশান্তির হাত থেকে দেশের মানুষকে বাঁচাতে হবে।
তিনি বলেন, দেশবাসীকে আজকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে তাদের অগ্নিসন্ত্রাসি, জঙ্গি, দুর্নীতিবাজ, ১০ ট্রাক অন্ত্র মামলা, মানিলন্ডারিংয়ে জড়িত, গ্রেনেড হামলার আসামী বা এতিমের অর্থ আত্মস্যাৎকারীদের পছন্দ নাকি আওয়ামী লীগ, যে দেশের কল্যাণ করে যাচ্ছে, তাদের পছন্দ।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় কোন উস্কানিতে কান না দিয়ে পোশাক শ্রমিকদের সরকার যে ন্যায বেতন বৃদ্ধি করেছে তা নিয়েই সন্তুষ্ট চিত্তে কাজে ফিরে যাবারও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, “যেটা বাড়ানো হয়েছে সেটা নিয়েই তাদের কাজ করতে হবে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য সরকারি কর্মচারিদের বেতন যেখানে ৫ শতাংশ বেড়েছে সেখানে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বাড়ানো হয়েছে ৫৬ শতাংশ, ১২ হাজার ৫শ’ টাকা করা হয়েছে। তারা কাজে যোগদান করুক। যখনই সময় আসে তাদের (তৈরী পোশাক শ্রমিকদের) সবরকম সুযোগ-সুবিধা আমরা করে দেই।”
শেখ হাসিনা সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “তারা এটা না করে যদি করো প্ররোচনায় রাস্তায় নামে তাহলে যারা আজকে উস্কানি দিচ্ছে তারাই এদের লাশ ফেলবে।”
সাম্প্রতিক শ্রমিক অসন্তষে ১৯টি কারখানায় ভাংচুর করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই কারখানা যা তাদের রুটি রুজি দেয় তা বন্ধ বা ধ্বংস হলে, উৎপাদন ও রপ্তানি বন্ধ হয়ে গেলে তাদের কাজ থাকবে কোথায়? গ্রামে ফিরে যেতে হবে। এটাতো তাদের বুঝতে হবে।
বাংলাদেশে নীতি ও আদর্শ সব গুলিয়ে গেছে উল্লেখ করে উস্কানিদাতাদের কঠোর সমালোচনা করে তিনি বলেন, চরম ডানপন্থী জামায়াত এবং বামপন্থী কমিউনিস্টরা সব কি এক হয়ে গেল? তারা একই সুরে কথা বলে! এক হয়েছে তারা আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে?
তিনি আরো প্রশ্ন করেন, আমার আজকে দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন আওয়ামী লীগের অপরাধটা কি?
’৯৬ সালে একুশ বছর পর সরকার গঠনের সময় এই গার্মেন্টস শ্রমিকদের বেতন ৮শ’ টাকা থেকে তার সরকারই প্রথম ১৬শ’ টাকা করেছিল। যা বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এসেও বাস্তবায়নে বিলম্ব করে। এরপর টানা তিন মেয়াদে ৩ হাজার ২শ, ৫ হাজার ৩শ’ এবং সর্বশেষ ৮ হাজার ৩শ’ টাকায় উন্নীত করে দেয়। শুধু তাই নয়, বছরান্তে ৫ শতাংশ হারে ইনক্রিমেন্ট, শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা, মাতৃত্বকালীন ছুটি, ডে কেয়ার সেন্টার সুবিধা, অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থাসহ গ্রিন ইন্ডাস্ট্রিতে কাজের পরিবেশ নিশ্চিত করেছে। কেননা কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের জন্যই তাদের সকল প্রচেষ্টা।
তিনি এ সময় বিএনপি সরকারের সময় থাকা দেশের খাদ্য উৎপাদন ৬৯ লাখ মেট্রিক টন থেকে বাড়িয়ে ’৯৬ পরবর্তী সময়ে ১ কোটি ৮০ লাখ মেট্রিক টন এবং বর্তমান টানা ৩ মেয়াদে ৪ কোটি মেট্রিক টন করার উল্লেখ করে বলেন, ২০০১ পরবর্তিতে বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় এলেও দেশে খাদ্যের উৎপাদন বাড়ায়নি বরং তাদের রেখে যাওয়া খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশকে আবার খাদ্য ঘাটতির দেশে পরিণত করেছিল।
বিএনপি জানে কেবল ধ্বংস করতে উল্লেখ করে তিনি ২৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীতে বিএনপি’র সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ও পিটিয়ে পুলিশ হত্যাকে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের আগ্রাসনের সঙ্গে তুলনা করেন। সেখানে নারী শিশু হত্যা হয়েছে এবং হাসপাতালে হামলা করা হয়েছে। এখানেও পুলিশ হাসসপাতালে হামলা, অ্যাম্বুলেন্সে অগ্নিসংযোগ এবং পিটিয়ে পুলিশ হত্যা করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকলে জনগণের সঙ্গে শাসকদলের দূরত্ব হয়, যেটা আওয়ামী লীগের সঙ্গে হয়নি। কারণ, তারা জনগণের কল্যাণে কাজ করেছে, বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৭০ শতাংশ জনগণ আওয়ামী লীগের ওপর আস্থাশীল এবং ক্রমান্বয়ে জনগণের আস্থাশীলতা আওয়ামী লীগের প্রতি বেড়েছে। এটা তাঁর কথা নয় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদন একথা বলেছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ শান্তিতে, গণতন্ত্রে এবং উন্নয়নে বিশ্বাস করে। সেই বিশ্বাস নিয়ে অপ্রতিরোধ্য গতিতে আরা এগিয়ে যাব। ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার মধ্যদিয়ে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণ করবো ইনশাল্লাহ।