পান আর সুপারি বয়স্ক মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী। থেঁতো করে কিংবা দাঁত দিতে ভেঙে অনেকে সুপারি খান। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে সুপারির কোনো উপকারিতা আছে কি না।চলুন জেনে নেয়া যাক সুপারির কিছু উপকারিতা সম্পর্কে।
১. স্ট্রোক : সুপারি খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে বলার সঙ্গে সঙ্গে এর ব্যবহার স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ফ্ল্যাভোনয়েড, অ্যালকালয়েডস, টের্পেনয়েডস, ট্যানিনস, সায়ানোজেনিক, গ্লুকোসাইড, আইসোপ্রেনয়েড, অ্যামিনো অ্যাসিড এবং ইউজেনল জাতীয় বিশেষ উপাদানগুলি লাল সুপারির পাতায় পাওয়া যায়। এই সমস্ত উপাদানগুলি স্ট্রোক (মানসিক এবং কার্ডিওভাসকুলার) ঝুঁকি কমাতে উপকারী হতে পারে (১)। এই কারণে অনেকের বিশ্বাস, যে লাল সুপারি পাতার সঙ্গে সুপারি ব্যবহার স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। তবে এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
২. মুখের ঘা সারায়: সুপারির মধ্যে এমন কয়েকটি উপাদান রয়েছে, যেগুলো মুখের ঘা কমিয়ে দিতে পারে। শুকনো সুপারি মুখে রাখলে, তা থেকে যে রস বের হয় তা মুখের ঘা কমায়। সুপারি গুঁড়া, দারুচিনি গুঁড়া একসঙ্গে মিশিয়ে মধু যোগ করুন। একটি ঘন পেস্ট তৈরি হবে। এটি মুখে লাগালে ঘা উপশম হয়।
৩. রক্তাল্পতা থেকে মুক্তি : রক্তাল্পতা সম্পর্কিত ঝুঁকি কমাতে সুপারির ব্যবহার উপকারী হতে পারে (৬)। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় গ্রহণের কারণে আপনি অন্যান্য সমস্যা মুখোমুকি হতে পারেন। এই কারণে, এটি ব্যবহারের আগে একবার ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করে নিন
৪. ডায়রিয়া থেকে মুক্তি : সুপারি সম্পর্কিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যে সুপারি গ্রহণের ফলে ডায়রিয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে। আসলে এতে প্রচুর পরিমাণে পলিফেনল পাওয়া যায়, এতে ইমিউনোমডুলেটরি এবং অ্যান্টি-অ্যালার্জিক প্রভাব পাওয়া যায়। এই প্রভাবগুলি ডায়রিয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত অনেক ঝুঁকি কমাতে পারে। এর থেকে মনে করা হয় যে সুপারি খাওয়া ডায়রিয়ার সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে সাহায্য করে।
৫. কৃমি দূর করে: পেটে কৃমির সমস্যা হলে, নিয়মিত সুপারি খেতে পারেন। এতে এমন কিছু উপাদান আছে যা কৃমি দূর করতে সাহায্য করে। তবে শিশুদের এটি দেওয়া যাবে না। কেবল প্রাপ্ত বয়স্করা এই উপায়ে কৃমির সমস্যা কমাতে পারেন।
৬. বমি ভাব দূর করে: চলন্ত গাড়িতে উঠলেই অনেকের বমি পায়। এই সমস্যা থেকে বাঁচতে সুপারি খেতে পারেন। সুপারি, হলুদ আর সামান্য চিনি একসঙ্গে মিশিয়ে খান। বমিভাব দূর হবে।
৭. কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে : নিবন্ধে ইতিমধ্যে উল্লিখিত যে, সুপারি খাওয়াকে লালা রস এবং হজম রস বাড়াতে সহায়ক বলে মনে করা হয়। হজমের সমস্যা থাকলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভোগেন অনেকে। এই সমস্যা থেকে সঠিক মাত্রায় সুপারির ব্যবহার করে উপকারি পেতে পারেন।
৮. হজমে সহায়ক : সুপারি নিয়ে করা একটি গবেষণায় দেখা গেছে, সুপারি খাওয়ার ফলে মুখে লালা প্রক্রিয়াকে বাড়িয়ে তোলে যা হজম প্রক্রিয়ায় অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। একইসঙ্গে এটি হজমের রস বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে যা পরিপাক প্রক্রিয়াকে আরও সহজ করে তোলে। এছাড়াও কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে উপকারী হতে পারে। এই কারণে বলা যেতে পারে, যে খাওয়ার পর সুপারি খেলে হজমের জন্য উপকারী হতে পারে।
৯, মলদ্বারের প্রদাহ দূর করে: কৃমি বা অন্য কোনো সংক্রমণের কারণে অনেকেরই মলদ্বারে প্রদাহ হয়, চুলকায়। এই সমস্যা দূর করতে সুপারি গুঁড়ো করে মলদ্বারে লাগান। সমস্যা কমতে পারে।
১০. মাড়িতে ইনফেকশন : সুপারি মাড়ির জন্য অ্যাস্ট্রিনজেন্ট (অ্যাসিডিক এবং স্নায়ু শক্তিশালীকরণ প্রভাব) হিসেবে কাজ করে, যা মাড়ি থেকে রক্তপাতের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে বলে মনে করা হয়। এছাড়াও মাড়িকে স্বাস্থ্যকর ও শক্তিশালী রাখতে উপকারী। মাড়ির সংক্রমণের সমস্যা দূর করতেও সহায়ক হতে পারে।