নিয়োগে অনিয়ম, শিক্ষকদের মধ্যে দলাদলি, হলের নিয়ন্ত্রণ বেহাত, ছাত্রী নিপীড়ন, ছাত্রলীগের সংঘর্ষ, অছাত্রদের দাপট—এসব এখন জড়িয়ে গেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে। নিয়োগে অনিয়ম নিয়ে তদারকি প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) বারবার চিঠি দিয়ে সতর্ক করলেও কোনো কাজ হয়নি।
এদিকে সর্বশেষ গতকাল বৃহস্পতিবার দুই দফা ও আগের দিন বুধবার রাতে এক দফা ছাত্রলীগের সংঘর্ষে অন্তত ২৪ জন আহত হয়েছেন। এ পরিস্থিতিতে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এই স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে পাঠদান কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে।
ছাত্রলীগের উপপক্ষ ‘চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার’ ও ‘সিক্সটি নাইন’ এর মধ্যে গতকাল রাত আটটায় সংঘর্ষ বাঁধে। দুই কর্মীর চায়ের দোকানে চেয়ারে বসা নিয়ে এ সংঘর্ষের সূত্রপাত। সংঘর্ষ চলাকালে রাম দা ও ইটের আঘাতে আহত হন ছাত্রলীগের অন্তত ৯ নেতা–কর্মী। এর আগে গতকাল দুপুরে ও বুধবার রাতে দুই দফা সংঘর্ষ বাঁধে উপপক্ষ ‘বিজয়’ ও ‘সিক্সটি নাইন’ এর নেতা–কর্মীদের মধ্যে। এতে আহত হন ছাত্রলীগের অন্তত ১৫ নেতা–কর্মী।
এদিকে প্রায় তিন মাস ধরে উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি। আগে কখনো কোনো উপাচার্যের বিরুদ্ধে এমন লাগাতার আন্দোলন শিক্ষক সমিতি করেনি।
বর্তমান উপাচার্য শিরীণ আখতার ২০১৯ সালের জুনে দায়িত্ব নেন। তাঁর সময়েই নিয়োগ নিয়ে বেশি সমালোচনা হয়েছে। ২০২১ সালের জুনে বিজ্ঞপ্তি ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজে ১২ জনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি কর্মকর্তা-কর্মচারী পদে নিয়োগ দেওয়া হয় ১৫ জনকে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তার পছন্দ, ছাত্রলীগের নেতা ও কয়েকজন শিক্ষকের সুপারিশে এসব নিয়োগ দেওয়া হয় বলে তখন অভিযোগ ওঠে।
বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সূত্র জানায়, বর্তমান উপাচার্যের আমলে অর্থাৎ ২০১৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত অন্তত ৩৬৮ জনকে শিক্ষক ও কর্মচারী পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে শিক্ষক ১৩০ জন। বিজ্ঞাপিত পদের বাইরে কর্মচারী পদে নিয়োগ দেওয়া হয় অন্তত ৩৫ জনকে। দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নিয়োগ পেয়েছেন অন্তত ৪৮ জন। যদিও দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া নিয়ে ইউজিসির নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু এসবের তোয়াক্কা করেনি কর্তৃপক্ষ।