মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের হাইকমিশনার বলেছেন, ভলকার তুর্ক বলেন, ইসরায়েল পশ্চিম তীরে অবৈধ বসতি স্থাপনকে তীব্রভাবে ত্বরান্বিত করেছে।
একই সময়ে তারা গাজায় ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে নিরলস যুদ্ধ চালাচ্ছে। বসতি স্থাপন ও সম্প্রসারণ করা ইসরায়েলের নিজস্ব বেসামরিক জনসংখ্যাকে ওই অঞ্চলে স্থানান্তর করার সমান।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের একটি প্রতিবেদনে তুর্ক আরো বলেছেন, ‘এ ধরনের স্থানান্তর যুদ্ধাপরাধের সমান, যা জড়িতদের ব্যক্তিগত অপরাধমূলক দায়বদ্ধতাকে জড়িত করতে পারে।’
তিনি আরো বলেন, পশ্চিম তীরের মালে আদুমিম, এফ্রাত এবং কেদার উপনিবেশে আরো তিন হাজার ৪৭৬টি বসতি স্থাপনে ইসরায়েলের পরিকল্পনা ‘আন্তর্জাতিক আইনের মুখে’ উড়ে গেছে।
১৯৬৭ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে ইসরায়েল পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম ও গাজা উপত্যকা দখল করে। ইসরায়েলের জন্য এই ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে বসতি স্থাপন করা আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে বেআইনি। বিদেশে বিরোধিতা সত্ত্বেও ইসরায়েল সাম্প্রতিক দশকে পশ্চিম তীরে কয়েক ডজন বসতি নির্মাণ করেছে। অঞ্চলটি এখন চার লাখ ৯০ হাজারেরও বেশি ইসরায়েলির আবাসস্থল।
প্রায় ৩০ লাখ ফিলিস্তিনির সঙ্গে তারা একই ভূখণ্ডে বসবাস করে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন বলেছিলেন, যেকোনো বসতি সম্প্রসারণ ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে ‘স্থায়ী শান্তিতে পৌঁছনোর বিপরীত’ হবে। এর দুই সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যে ইসরায়েল বাড়িগুলোর জন্য অনুমতি দেয়।
তুর্ক বলেছেন, তাঁর প্রতিবেদনে ২০২২ সালের ১ নভেম্বর থেকে ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবরের মধ্যে পশ্চিম তীরে বিদ্যমান ইসরায়েলি বসতিগুলোতে প্রায় ২৪ হাজার ৩০০ আবাসন ইউনিট যুক্ত করা হয়েছে। ২০১৭ সালে মনিটরিং শুরু হওয়ার পর থেকে এটি রেকর্ড করা সবচেয়ে বড় সংখ্যা।
এ ছাড়া পূর্ব জেরুজালেমে প্রায় ৯ হাজার ৭০০ ইউনিট অন্তর্ভুক্ত করার কথাও জানিয়েছে জাতিসংঘের অধিকার কার্যালয়।
তুর্কের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ইসরায়েলি সরকারের নীতিগুলো ‘অভূতপূর্ব মাত্রায় পূর্ব জেরুজালেমসহ পশ্চিম তীরের ওপর দীর্ঘমেয়াদি নিয়ন্ত্রণ প্রসারিত করা এবং অঞ্চলটিকে ইসরায়েলের সঙ্গে অবিচ্ছিন্নভাবে একীভূত করার লক্ষ্যে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী আন্দোলনের লক্ষ্যগুলোর সঙ্গে একত্র হয়েছে।’
একই সময়ে, ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী ও রাষ্ট্রীয় সহিংসতার কারণে ফিলিস্তিনিরা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এতে জোরপূর্বক উচ্ছেদ, ভবনের পারমিট ইস্যু না করা, বাড়ি ভেঙে ফেলা এবং ফিলিস্তিনিদের ওপর আরোপিত চলাচলের বিধি-নিষেধের দিকেও ইঙ্গিত করা হয়েছে।
তুর্ক সতর্ক করে বলেছেন, ‘বসতিবাদী সহিংসতা এবং বসতিসংক্রান্ত লঙ্ঘন চমকপ্রদ নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে এবং একটি কার্যকর ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যেকোনো বাস্তব সম্ভাবনাকে বাদ দেওয়ার ঝুঁকিতে ফেলেছে।’
প্রতিবেদন অনুসারে, ইসরায়েলের অভ্যন্তরে হামাসের হামলার জবাবে গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে বসতি স্থাপনকারীরা ৬০২টি হামলা চালিয়েছে। জাতিসংঘের অধিকার অফিস বলেছে, বসতি স্থাপনকারীরা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে ৯ ফিলিস্তিনিকে হত্যা এবং ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আরো ৩৯৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী অথবা বসতি স্থাপনকারীদের হাতে আরো দুজন নিহত হয়েছেন।
সূত্র : এএফপি