বাগান করতে কী লাগে? জমি, ছাদ, নাকি বারান্দার ঝোলা টব? এসব উপায় ছেড়ে একটা বোতলেই বাগান গড়ে নিয়েছেন ডেভিড ল্যাটিমার। বিশালাকার এক বোতলে প্রায় ৬০ বছর আগে ল্যাটিমার শুরু করেছিলেন ‘ট্যারিয়াম’ পদ্ধতিতে এই বিশেষ বাগান।
ডেভিড ল্যাটিমার এই গাছটি বোতলের ভেতরে লাগিয়েছিলেন ১৯৬০ সালে এবং গত ৪৭ বছর ধরে এর ছিপি কখনোই খোলা হয়নি। ফলে এই দীর্ঘ সময়ে এই বোতলের ভিতরে গড়ে উঠেছে একটি বাস্তুসংস্থান যা নিজেই নিজেকে রক্ষা করে চলেছে দীর্ঘ সময় ধরে। এই বোতলে বাইরে থেকে কোনো কিছুর আদান-প্রদান হয় না। গাছটি অক্সিজেন উৎপন্ন করে এবং মাটিস্থঃ হিউমাস থেকে পুষ্টি গ্রহণ করে।
গাছের ঝরে যাওয়া পাতা ও অন্যান্য অংশ মাটিতে পড়ে ব্যাক্টেরিয়ার মাধ্যমে পুনরায় সরল উপাদানে পরিণত হয় এবং এর ফলে জৈব বস্তু ভেঙ্গে গিয়ে কার্বন-ডাইঅক্সাইডও বায়ুতে আসে। প্রস্বেদন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মাটিতে জমা হয় এবং মূলের মাধ্যমে পুনরায় গাছ শোষন করে। ফলে একটি পানি চক্রও তৈরি হয়। গাছের প্রয়োজনীয় যাবতীয় উপদান গাছ আর মাটি হতেই রিসাইকেল হয় বলে এতে বাইরে থেকে কিছুই সরবরাহ করতে হয় না।
তবে একেবারে শুরুতেই বোতলের গাছটিকে সিল করে দেওয়া হয় নি। স্পাইডার ওর্টের চারটি বীজ লাগানো হয় বোতলে। এর মধ্যে একটি গাছ টিকে থাকে। একযুগ পরিচর্যার পর বোতলটিকে স্থায়ীভাবে সিল করে দেওয়া হয় এর এর পর থেকে বিগত ৪৭ বছর এটি বাইরের দুনিয়া থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।
১৯৬০ সালের ইস্টার সানডেতে ল্যাটিমারের ভাষায় ‘শুধুমাত্র অলস কৌতুহল’ থেকে তিনি বোতল বাগানটি তৈরি করেছিলেন। তিনি বলেন, “সেই সময় মাত্র প্লাস্টিকের বোতল প্রচলিত হতে শুরু হয়েছিলো, তাই বাজারে প্রচুর কাচের বোতল পাওয়া যাচ্ছিলো। বোতলের বাগান তখন একধরনের উন্মাদনা ছিলো এবং আমি দেখতে চেয়েছিলাম পুরো জিনিসটিকে আবদ্ধ করে ফেললে কী হয়।” তিনি যেই বোতলটি নিয়েছিলেন তার ধারন ক্ষমতা দশ গ্যালন, এটিতে প্রাথমিকভাবে সালফিউরিক এসিড বহনের কাজে ব্যবহৃত হতো।
তিনি বোতলটিকে ভালোভাবে পরিস্কার করে এর মধ্যে কিছু কমপোস্ট নিলেন এবং একটি তারের মাধ্যে বীজ বপন করলেন। তারপর এর মধ্যে কিছু পানি দিলেন। একযুগ পর তিনি আরেকবার পানি সরবরাহ করেন। সেই থেকে এটি চিরস্থায়ীভাবে আবদ্ধ হয়ে যায়।