সর্বকালের সেরা ফুটবলার কে? এই প্রশ্নে বিভক্ত হয়ে যায় গোটা ফুটবল দুনিয়া। একপক্ষে থাকেন পেলের ভক্তরা, আরেক পক্ষে দিয়াগো ম্যারাডোনার। কিন্তু এই দুই মহাতারকাকে পেছনে ফেলেই কিনা সর্বকালের সেরা ফুটবলার হয়েছেন লিওনেল মেসি!
ভক্তদের এসব কৌতূহলকে মাথায় রেখে ব্রিটিশ গণমাধ্যম ডেইলি মেইল সর্বকালের সেরা ৫০ ফুটবলারের তালিকা প্রকাশ করেছে। যেখানে শীর্ষ দশে জায়গা পেয়েছেন পর্তুগিজ কিংবদন্তি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো। তবে তালিকার কোথাও জায়গা হয়নি ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমার জুনিয়রের।
যে মানুষটিকে অনেকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বলে মনে করেন, আশ্চর্যজনকভাবে তার অবস্থান ১০ নম্বরে। রোনালদো তার ক্যারিয়ারে পাঁচটি ব্যালন ডি’অর জিতেছেন এবং সর্বকালের সর্বোচ্চ গোলদাতা।
পর্তুগালের হয়ে ১২৮ গোল করে সর্বকালের সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক গোলের রেকর্ড গড়েছেন ৩৯ বছর বয়সী এই ফুটবলার। ১৪১ টি নিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ইতিহাসে সর্বাধিক গোলের রেকর্ডও করেছেন এবং ২০১৬ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত টানা তিনটি শিরোপাসহ রেকর্ড পাঁচবার প্রতিযোগিতা জিতেছেন।
নবম স্থানে রয়েছেন ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি জিকো, যিনি কখনও বিশ্বকাপ শিরোপা না জিতলেও ব্রাজিলে বিশ্বকাপজয়ী অন্য অনেক খেলোয়াড়ের চেয়ে বড় নায়ক হিসেবে বিবেচিত হন।
রোনালদো ও জিকোকে পেছনে ফেলে অষ্টম স্থানে আছেন আরেক ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি। গারিঞ্চাকে ব্রাজিলের ১৯৫৮ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক হিসাবে ধরা হয় এবং ১৯৬২ সালে টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের মুকুট অর্জন করেছিলেন। সেই বছর প্রাথমিক পর্যায়ে চোটের কারণে পেলে ছিলেন অনুপস্থিত।
পর্তুগিজ তারকার চেয়ে বিতর্কিতভাবে এগিয়ে আছেন সপ্তম স্থানে থাকা আরেক রোনালদো। তাকে অনেকে আসল রোনালদো বলেও ডাকেন। তার সহজাত প্রতিভা দেখার মতো ছিল। তিনি দুটি ব্যালন ডি’অর জিতেছিলেন তবে দুর্ভাগ্যক্রমে, তার ক্যারিয়ারের শেষটা ছিল অপ্রত্যাশিত।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর রিয়াল মাদ্রিদের সর্বকালের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা ডি স্টেফানো ডি স্টেফানো পাঁচটি ইউরোপিয়ান কাপ জিতেছিলেন এবং ১৯৬০ সালের ফাইনালে একটি উত্তেজনাপূর্ণ হ্যাটট্রিক করে স্কোরবোর্ডে নাম তুলেছিলেন। তিনি আছেন ষষ্ঠ স্থানে।
পঞ্চম স্থানে আছে জিনেদিন জিদান। জিদানের খেলার সবচেয়ে উজ্জ্বল দিকগুলির মধ্যে একটি হল তার বড়সর শরীর হওয়া সত্ত্বেও বল নিয়ে সারা মাঠ চষে বেড়ানোর দক্ষতা। ২০০২ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে প্রথমবারের মতো অবিশ্বাস্য ভলিতে অনায়াসে শূন্যে ভাসান তিনি। তাতে যেন ফুটবলের নতুন আর্ট তৈরি করেন তিনি।
ক্রুইফকে বলা হয় ‘টোটাল ফুটবল’ ধারণার জনক। এটি এমন একটি কৌশল যা পেপ গার্দিওলা এবং মিকেল আর্তেতার মতো কোচদের মাধ্যমে আজকের খেলায় এখনও দৃশ্যমান। ডাচ ফুটবলার ক্রুইফ আয়াক্সের হয়ে টানা তিনটি ইউরোপীয় কাপ জিতেছিলেরলন। তিনি আছেন চতুর্থ স্থানে।
তৃতীয় ডিয়েগো ম্যারাডোনা। ম্যারাডোনা যে কোনো পিচে পা রেখেই অল্প সময়েই সেরা ফুটবলার হয়ে ওঠেন। যদি একটি ম্যাচ নিখুঁতভাবে সংক্ষেপে বলতে পারে তবে সেটি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৯৮৬ বিশ্বকাপের ম্যাচটি। যে ঘটনার কারণে আজও তাকে অনেকে ‘হ্যান্ড অব গড’ গোলটির কারণে স্মরণ করেন। বার্সেলোনার হয়ে গেটাফের বিপক্ষে লিওনেল মেসির গোলটিও প্রায় একই ধরনের।
শীর্ষস্থান হারাচ্ছেন ব্রাজিলিয়ান ও ফুটবল আইকন পেলে। পেলে একমাত্র ফুটবলার হিসেবে তিনবার বিশ্বকাপ জয়ের গৌরব অর্জন করেন। ১৯৫৮ সালে কিশোর বয়সে তিনি প্রথম বিশ্ব আসরের শিরোপা জিতেন। পরবর্তীতে তিনি ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ ফুটবল দল, ১৯৭০ বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিল দলের আইকনিক নেতা হয়ে ওঠেন। তিনি আছেন দ্বিতীয় স্থানে।
সর্বকালের সেরা ফুটবলার হলেন লিওনেল মেসি। যিনি ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি ব্যালন ডি’অর জিতেছেন, অবিশ্বাস্য ৮ বার পুরস্কারটি জিতে তিনি আছেন সবার ওপরে।
বার্সেলোনার হয়ে তিনবার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতেছেন মেসি, যে ক্লাবটিতে তিনি আবার সর্বোচ্চ গোলদাতা। আর্জেন্টাইন তারকা ২০২২ সালে কাতারে বিশ্বকাপ জয়ের মধ্য দিয়ে অবসান হয় তার দীর্ঘ অপেক্ষার। পরম আরাধনার সেই শিরোপা জিতে তার সংগ্রহে মুকুট রত্ন যুক্ত করেছিলেন। এই টুর্নামেন্টে ম তিনি সাত গোল করেছিলেন, যার মধ্যে চারটি এসেছিল পেনাল্টি থেকে।