চেকপোস্টে সড়ক দুর্ঘটনা: হাইওয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ
বগুড়া প্রতিনিধি : বগুড়ার শিবগঞ্জে মহাসড়কে পুলিশের তাড়া খেয়ে পালাতে গিয়ে সিএনজিচালিত অটোরিকশার সাথে প্রাইভেটকারের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ঘটনাস্থলেই মারা গেছেন অটোরিকশার এক নারী যাত্রী। আহত হয়েছেন অটোরিকশার চালকসহ ৩ যাত্রী।
রোববার সকাল পৌণে ১০ টার দিকে উপজেলার রহবল দো সীমানা এলাকার বগুড়া-রংপুর মহাসড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত যাত্রীর নাম জাহানারা বেগম। বয়স ৫০। তিনি গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার অনন্তপুর গ্রামের তসলিম উদ্দিনের স্ত্রী।
জানা যায়, মহাসড়কের শিবগঞ্জ উপজেলা অংশে কুন্দারহাট হাইওয়ে পুলিশ ও গোবিন্দগঞ্জ অংশে গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু রোববার গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ সীমানা পেরিয়ে শিবগঞ্জ এলাকায় প্রবেশ করে চেকপোস্ট পরিচালনা করতে থাকে। এক পর্যায়ে গোবিন্দগঞ্জগামী একটি সিএনজিকে সিগন্যাল দিলে পুলিশের হাত থেকে পালানোর চেষ্টা করেন চালক। এসময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিপরীতগামী একটি প্রাইভেট কারের সাথে সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান সিএনজি যাত্রী জাহানারা বেগম।
দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে এসে শিবগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ রিজু বলেন, ফোরলেন রাস্তার দো সীমানা এলাকায় চেকপোস্ট বসানো অযৌক্তিক। এখানে চেকপোস্ট বসালে যানজটের সম্ভবনা আছে। উপরন্তু গোবিন্দগঞ্জের হাইওয়ে পুলিশ কি করে কুন্দারহাট হাইওয়ে পুলিশের এলাকায় এসে চেকপোস্ট পরিচালনা করে তা আমাদের বোধগম্য নয়। পুলিশের ধাওয়া খেয়ে সিএনজি যাত্রী নিহত হওয়ার ঘটনা দুঃখজনক।
গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ওসি মাহবুর রহমান জানান, চেকপোস্ট আমাদের সীমানার মধ্যে বসানো হয়েছিল। কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটেছে শিবগঞ্জ সীমানায়।
কুন্দারহাট হাইওয়ে পুলিশের ওসি আব্বাস আলী সীমানা অমান্য করে চেকপোস্ট বসানোর বিষয়ে কোন বক্তব্য দেন নি। এব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ভালো বলতে পারবেন বলে জানান তিনি।
বগুড়া জোনের হাইওয়ে পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান বলেন, কুন্দারহাট হাইওয়ে পুলিশের এলাকায় এসে গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশ অভিযান পরিচালনা করছিল। এতে দুর্ঘটনায় এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ ও ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠন করা হচ্ছে।
এদিকে, গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানা ও কুন্দারহাট হাইওয়ে থানা পুলিশের বিরুদ্ধে চেকপোস্ট চলাকালীন সময়ে নানা অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত শনিবার ১৩ এপ্রিল রহবল দো-সীমানায় গাড়ি চেকিংয়ের সময় নানা অনিয়ম ও হয়রানির অভিযোগ উঠেছে করেছেন গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে থানার এসআই শাহিনের বিরুদ্ধে। এসআই শাহিনের বিরুদ্ধে কয়েকজন মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীর সাথে দুর্ব্যবহারসহ ঘুষের বিনিময়ে মোটরসাইকেল ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। গাংনগর এলাকার মোটরসাইকেল ব্যবহারকারী শাহজাহান আলী বলেন, আমি চাপড়ীগঞ্জ থেকে কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে এসআই শাহিন আমাকে আটকায়। সকল কাগজপত্র ঠিক থাকলেও হেলমেট না থাকায় মামলা দিতে চায়। পরে ৭০০ টাকা দিয়ে মামলা থেকে রেহাই পাই। দেউলী আলিম মাদ্রাসার সভাপতি সিরাজুল ইসলাম ইসলাম অভিযোগ করেন, সিগনাল বুঝতে না পারায় সামনে চলে আসায় আমাকে ধাওয়া করে ধরা হয়। আমি অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যাই।
অপরদিকে, কুন্দারহাট হাইওয়ে পুলিশ মাটিডালী মোড়ে মালতি দিয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যক সিএনজি চালিত অটোরিকশা চালাতে দিলেও আইনের খড়গ মেটানো হয় অন্যান্য সিএনজিগুলোর উপর। এমনকি জরুরী রোগী বহনকারী সিএনজিকেও আটকে দেয়া হয় মামলার ফাঁদে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সিএনজি চালক অভিযোগ করেন, হার্ট এ্যাটাকের রোগী নিয়ে জরুরীভাবে হাসপাতালে যাচ্ছিলাম। আমাকে আটকে দিয়ে মামলা দেয়া হয়েছিল। অথচ, যারা প্রতিদিন টাকা দেয়, তারা অবাধে চললেও ধরা হয় না।
এবিষয়ে বক্তব্য নিতে কুন্দারহাট হাইওয়ে থানার ওসি আব্বাস আলীকে দুইবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।