ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে যে প্রতিবাদ বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হচ্ছে তাতে শক্তিপ্রয়োগ করতে শুরু করেছে দেশটির পুলিশ। যুক্তরাষ্ট্রে নিউ ইয়র্ক সিটি পুলিশের শত শত সদস্য মঙ্গলবার রাতে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করছে।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাত ৯টার পর কয়েকজন পুলিশ অফিসার কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন হ্যামিল্টন হলে প্রবেশ করে। ছাত্ররা মঙ্গলবার সকালে এই ভবন দখল করে এর নাম দিয়েছিল হিন্দস হল। গাজায় ইসরাইলি নৃশংসতার শিকার ছয় বছরের শিশু হিন্দের স্মরণে তারা এই উদ্যোগ নেয়।
সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, নিউইয়র্ক পুলিশ জানিয়েছে, দুই ঘণ্টারও কম সময়ের অভিযানে হ্যামিল্টন হল থেকে শিক্ষার্থীদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এসময় কেউ আহত হয়নি বলেও জানিয়েছে পুলিশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ১৭ মে পর্যন্ত নিউ ইয়র্ক পুলিশকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থান নিতে বলেছে কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
পুলিশ বলছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে হ্যামিলটন হল নামের ওই ভবনে তারা প্রবেশ করছে। সেখানে অবস্থান নেয়া বিক্ষোভকারীদের সবাইকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। এর আগে, কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল।
অভিযানের বিষয়ে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, ‘দখল, ভাঙচুর ও অবরুদ্ধ করার পর আমাদের আর কোনো উপায় ছিল না’।
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন বিক্ষোভ হতে হবে শান্তিপূর্ণ এবং ‘জোর করে ভবন দখল করা শান্তিপূর্ণ ব্যাপার না- এটা ভুল’। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফক্স টেলিভিশনকে দেওয়া এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে দিনটিকে কলম্বিয়ার জন্য দুঃখের দিন হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
১৯৬০ ও ৭০ এর দশকে ভিয়েতনাম যুদ্ধের প্রতিবাদের পর যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এ ধরনের বিক্ষোভ সমাবেশের মতো এমন নজিরবিহীন ঘটনা আগে আর ঘটেনি।
উল্লেখ্য, ১৯৬৮ সালে নাগরিক অধিকার এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভের সময় বিক্ষোভকারীরা যে কয়েকটি হল দখল করেছিল, তার অন্যতম ছিল এই হ্যামিল্টন হল।
একটি এক্স পোস্টে বিক্ষোভকারীরা বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সিইউএডির তিনটি দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত তারা হলটিতে থাকার পরিকল্পনা করেছেন। দাবিগুলো হলো : ইসরাইল থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার, আর্থিক স্বচ্ছতা ও দায়মুক্তি।
এদিকে, জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দপ্তরের প্রধান ভলকার তুর্ক যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ দমাতে ব্যাপকহারে শক্তি প্রয়োগের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এক বার্তায় তিনি বলেছে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ অবস্থানের অধিকার সমাজের মৌলিক বিষয়।