কলম্বিয়ানদের স্বপ্ন ভেঙে আবারও কোপা আমেরিকার চ্যাম্পিয়ন হলো বর্তমান বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা। টানা দ্বিতীয় কোপা আমেরিকা শিরোপা জয়ের লক্ষ্য নিয়েই আজ কলম্বিয়ার বিপক্ষে মাঠে নেমেছিল আর্জেন্টিনা। মহাদেশীয় শিরোপা, বিশ্বকাপের পর আবার মহাদেশীয় শিরোপা জিতলেই নিশ্চিত এই ত্রিমুকুট। সোমবার মায়ামির হার্ড রক স্টেডিয়ামে আর্জেন্টিনাকে এই ত্রিমুকুট এনে দিলেন লাওতারো মার্টিনেজ।
২০২১ সালে কোপা আমেরিকা, ২০২২ বিশ্বকাপ ও ২০২৪ কোপা আমেরিকার শিরোপা জিতলো আলবিসেলেস্তরা। কোপা আমেরিকার ফাইনালে লাউতারো মার্টিনেজের ১১২ মিনিটের গোলে ১-০ গোলের জয়ে নিজেদের ইতিহাসের ১৬তম কোপা আমেরিকার শিরোপা নিশ্চিত করল আর্জেন্টিনা। শতবর্ষী এই টুর্নামেন্টের ইতিহাসে এখন সর্বোচ্চ শিরোপাধারী দল আলবিসেলেস্তেরা।
ফ্লোরিডার হার্ড রক স্টেডিয়ামে দর্শক বিশৃঙ্খলার কারণে প্রায় ১ ঘণ্টা ২২ মিনিট দেরিতে শুরু হওয়া আর্জেন্টিনা–কলম্বিয়া ফাইনালের নির্ধারিত ৯০ মিনিটেই ছিল নানা নাটকীয়তা। চোট পেয়ে মাঠের বাইরে চলে যান লিওনেল মেসি। কান্নায় ভেঙে পড়েন ডাগআউটে। এরপর নিকো গঞ্জালেসের গোল অফসাইডের কারণে বাতিল হলে আর্জেন্টিনা দলে হতাশা আরও বাড়ে। আনহেল দি মারিয়ার বিদায়ী ম্যাচে নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা থাকে গোলশূন্য।
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ে পুরো ৯০ মিনিটে গোল পায়নি আর্জেন্টিনা-কলম্বিয়ার কেউই। বল দখল ও আক্রমণে আর্জেন্টিনার চেয়ে বেশ এগিয়ে ছিল কলম্বিয়া। তবে, একের পর এক সুযোগ কাজে লাগাতে না পারায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। যেখানে বাজিমাত মার্টিনেজের।
এর আগে ম্যাচের প্রথম মিনিটেই সুযোগ পেয়েছিল আর্জেন্টিনা। মন্টিয়েলের ক্রস থেকে পা ছোঁয়ালেও তা লক্ষ্যে রাখতে পারেননি আলভারেজ। ষষ্ঠ মিনিটে প্রথম আক্রমণে যায় কলম্বিয়া। লুইস ডিয়াজের গড়ানো শট ঠেকিয়ে দলকে রক্ষা করেন গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। পরের মিনিটেই রদ্রিগেজের বাড়নো বলে করডোভা শট করলে তার বারের ঠিক পাশ দিয়ে চলে যায়। যার ফলে এবারও হতাশ হতে হয় কলম্বিয়াকে।
গোলের সুযোগ তৈরি করতে না পেরে ম্যাচের ৩২ মিনিটে ডি বক্সের অনেক বাইরে থেকেই জোরাল শট নেন জেফারসন লের্মা। তবে তার সেই থাকেনি লক্ষ্যের। গোলবার ঘেঁষে বেরিয়ে যায় বলটি। খানিক বাদে আক্রমণে যায় আর্জেন্টিনা। সেই আক্রমণে ডি বক্সে কলম্বিয়ার ফুটবলারদের কড়া ট্যাকলের শিকার হয়ে মাঠেই ব্যথায় কুঁকড়ে উঠেন মেসি। এরপর খানিক পর মাঠে নেমে ফের খেলা শুরু করলেও দলকে এগিয়ে নিতে পারেননি।
এরপর আর সুযোগ তৈরি করতে পারেনি কলম্বিয়া-আর্জেন্টিনা কোনো দলই। এর ফলে গোলশূন্য সমতায় শেষ হয় প্রথমার্ধের খেলা। এদিকে ম্যাচের দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেও গোল করার বেশ কয়েকটি সুযোগ পেয়েছে আলবিসেলেস্তেরা। ৫৭ মিনিটে বক্সে ঢুকে শট নিয়েছিলেন ডি মারিয়া, তবে তা ফিরিয়ে দেন কলম্বিয়ান গোলরক্ষক।
ম্যাচের ৯৫ মিনিটে দারুণ একটি গোলের সুযোগ তৈরি করেছিল আর্জেন্টিনা। এ সময় রদ্রিগো ডি পল ডি বক্সের মধ্যে নিকোলাস গঞ্জালেসকে বল বাড়িয়ে দেন। তিনি বল পেয়েই দ্রুত শট নেন। কিন্তু কলম্বিয়ার গোলরক্ষক ভার্গাস দ্রুত বলের লাইনে এসে ঝাপিয়ে পড়ে তালুবন্দি করেন বল।
১০৮তম মিনিটে সুযোগ পেয়েছিল কলম্বিয়াও। তবে, লিসান্দ্রোর অসাধারন ডিফেন্ডিংয়ে নিশ্চিত গোল হজমের হাত থেকে রক্ষা পায় আর্জেন্টিনা। তবে, ম্যাচের সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্ত আসে ১১২ তম মিনিটে। লে সেলসোর বাড়ানো বলে দারুণ ফিনিশিং করেন মার্টিনেজ। এই গোলেই শিরোপা জয়ের আনন্দে ভাসেন আলবিলেস্তোরা।
তারপর সোজা ছুটে যান মেসির দিকে। আর্জেন্টাইন মহাতারকা জড়িয়ে ধরেন ফাইনালের গোলস্কোরারকে। মেসিকে দেখে মনে হচ্ছিল, প্রাণ ফিরে পেয়েছেন তিনি।
খেলার বাকি সময় আরও মারামারি হল। বিশেষ করে গোল শোধ করার জন্য শারীরিক শক্তি ব্যবহার করছিলেন কলম্বিয়ার ফুটবলারেরা। তাতে কাজের কাজ হয়নি। লাওতারোর করা একমাত্র গোলে কোপা জিতে মাঠ ছাড়ে আর্জেন্টিনা।