পাকিস্তানে গোত্র সহিংসতায় আরও ১৩ জনের মৃত্যু
পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের কুররাম জেলায় শিয়া ও সুন্নি মুসলিমদের মধ্যে সহিংসতায় আরও ১৩ জন নিহত হয়েছে।
শনিবার (৩০ নভেম্বর) দেশটির একজন সরকারি কর্মকর্তা এ তথ্য দিয়েছেন। বারবার অস্ত্রবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করে চলতে থাকা এই গোত্র সহিংসতায় এ পর্যন্ত ১২৪ জন নিহত হয়েছে।
সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যার দেশ পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের কুররাম জেলায় শিয়া সম্প্রদায়ের লোকজন সংখ্যাগরিষ্ঠ। এই এলাকাটি আফগানিস্তানের সঙ্গে লাগোয়া সীমান্তের পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত। এখানে কয়েক যুগ ধরে শিয়া ও সুন্নি সম্প্রদায়ের লোকজন পরস্পরের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে আছে।
সম্প্রতি এই এলাকায় পুলিশের পাহারায় থাকা শিয়া মুসলিমদের বহনকারী যানবাহনের দুটি বহরে অতর্কিত হামলায় ৪০ জন নিহত হয়। এরপর ১০ দিন ধরে হালকা ও ভারী অস্ত্র নিয়ে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে দুপক্ষ। এ সময় ওই এলাকার প্রধান প্রধান সড়কগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয় মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক। তবে মৃতের সংখ্যা বাড়তেই থাকে।
আজ শনিবার কুররাম জেলার একজন সরকারি কর্মকর্তা জানান, গত দুদিনের সংঘাতে আরও ১৩ জন নিহত হয়েছে এবং মৃতের সংখ্যা ১২৪ এ গিয়ে পৌঁছেছে। নতুন করে নিহত ১৩ জনের মধ্যে দুজন সুন্নি এবং ১১ জন শিয়া গোত্রের লোক। আজ সকালেও চলতে থাকা সংঘাতে আহত হয়েছে আরও ৫০ জনেরও বেশি মানুষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘দুই পক্ষের মধ্যে বিশ্বাসের মারাত্মক ঘাটতি রয়েছে। সংঘাত নিরসনে কোনো পক্ষই সরকারি নির্দেশনা মেন চলছে না।’ তিনি আরও বলেন, ‘সহিংসতার কারণে অনেক মানুষ এলাকা থেকে পালিয়ে যেতে চাইছে, কিন্তু ক্রমশ খারাপ হতে থাকা নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।’
গত সপ্তাহে সাত দিনের একটি অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দিয়েছিল প্রাদেশিক সরকার, তবে তা কার্যকর হয়নি। এরপর গত বুধবার আরও ১০ দিনের অস্ত্রবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়, তবে তা-ও পালন করা হয়নি।
প্রদেশটির রাজধানী পেশোয়ারের একজন জ্যেষ্ঠ নিরাপত্তা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মৃতের সংখ্যা ১২৪। তিনি আরও বলেন, ‘আশঙ্কা করা হচ্ছে, মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে। শান্তি ফিরিয়ে আনতে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, তার কোনোটাই বাস্তবায়িত হয়নি।’
কেন্দ্র শাসিত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত আধা-স্বায়ত্তশাসিত এই অঞ্চলে কুররাম জেলাটি অবস্থিত। ২০১৮ সালে এই জেলা খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত হয়। পুলিশকে এই অঞ্চলের সংঘাত নিয়ন্ত্রণে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় প্রায় সময়েই। পাহাড়ি এই অঞ্চলে জমির মালিকানা নিয়েই সাধারণত বেশিরভাগ সংঘাতের সূচনা হয়।