Top Newsআন্তর্জাতিক

মারা গেছেন ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং

ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং মারা গেছেন। যিনি দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সময় সরকারপ্রধানের দায়িত্ব পালনকারীদের একজন ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী পদে তারই উত্তরসূরি, দেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত ১০টা ৩৭ মিনিটে টুইট করে এ খবর জানিয়েছেন।

মৃত্যুকালে মনমোহন সিংয়ের বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। তার স্ত্রী গুরচরণ সিং এবং তিন কন্যা আছেন।

মোদীর ঘোষণার আগে দিল্লির এইমস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের জারি করা এক বিবৃতিতে বলা হয়, যে ড. সিং এদিন সন্ধ্যায় বাড়িতেই অজ্ঞান হয়ে যান। বাড়িতেই তার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করা হয়। পরে এইমস হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয় মনমোহন সিংকে।

কিন্তু সব প্রচেষ্টা করা সত্ত্বেও তার জ্ঞান ফিরিয়ে আনা যায় নি এবং রাত নয়টা ৫১ মিনিটে তিনি মারা গেছেন।

ড. মনমোহন সিং ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত, ১০ বছর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এর আগে ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন ভারতের অর্থমন্ত্রী। সেই সময়েই ভারতের অর্থনীতির উদারীকরণের যে পরিকল্পনা নিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী নরসিমহা রাও, সেটির বাস্তবায়ন করেছিলেন পেশা ও শিক্ষায় অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিং।

এদিকে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে ভারত সরকার সাত দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে। বাতিল করা হয়েছে সব ধরণের সরকারি অনুষ্ঠান। সরকার ঘোষণা করেছে যে ড. মনমোহন সিংয়ের অন্ত্যেষ্টি পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন করা হবে।

শুক্রবার বেলা এগারোটায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা বৈঠকে বসে সরকারিভাবে রাষ্ট্রীয় শোকপ্রস্তাব গ্রহণ করবে বলেও জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম।

ড. মনমোহন সিং-ই ভারতের প্রথম শিখ প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। জওহরলাল নেহরুর পরে ড. মনমোহন সিংই প্রথম ভারতীয় নেতা, যিনি প্রথমবার প্রধানমন্ত্রীর সম্পূর্ণ মেয়াদ পূর্ণ করার পরে দ্বিতীয়বার আবারও নির্বাচিত হয়ে এসেছিলেন।

১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধীর হত্যার পরে যে শিখ-বিরোধী দাঙ্গায় প্রায় তিন হাজার শিখ নিধন হয়েছিল, যে দাঙ্গায় অভিযোগের আঙ্গুল ওঠে তারই দল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে, সেই ঘটনার জন্য প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীনই ক্ষমা চেয়েছিলেন মনমোহন সিং।

দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন অবশ্য বারেবারে তার সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ সামনে এসেছে। কিছুটা সেইসব অভিযোগের কারণেই ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে তার দল কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়েছিল বলে মনে করা হয়।

মনমোহন সিংয়ের জন্ম হয়েছিল ১৯৩২ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর অবিভক্ত পাঞ্জাব প্রদেশের এক ছোট্ট গ্রামে। সেই সময়ে ওই গ্রামে না ছিল বিদ্যুৎ, না ছিল খাওয়ার জলের ব্যবস্থা।

এরকমই একটা গ্রাম থেকে উঠে আসা মনমোহন সিং পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পরে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি পান কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। তারপরে ডি ফিল উপাধি পান অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।

তার কন্যা দমান সিং বাবার সম্বন্ধে একটি লেখায় জানিয়েছিলেন কেমব্রিজে পড়াশোনা করার সময়ে অর্থ সঙ্কটে দিন কাটত পরবর্তীতে ভারতের অর্থমন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর পদে আসীন হওয়া মনমোহন সিংয়ের।

দমান সিং তার একটি বইতে লিখেছেন, পড়াশোনা আর থাকা-খাওয়ার জন্য বছরে তার ছয় শো পাউন্ড মতো খরচ হতো। পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি যে বৃত্তি পেতেন তা ছিল প্রায় ১৬০ পাউন্ড। বাকি খরচের জন্য তার বাবার ওপরে নির্ভর করতে হত তাকে।

তিনি খুব সচেতনভাবে কিপটে হয়ে জীবনযাপন করতেন। ডাইনিং হলে বেশ সস্তায়, দুই শিলিং ছয় পেন্সে খাবার পাওয়া যেতো, জানিয়েছিলেন তার কন্যা।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button