Uncategorizedবিজ্ঞান ও প্রযুক্তি

গত ২০ বছরে বদলে গেছে পৃথিবীর কেন্দ্র

মোহনা অনলাইন

বিজ্ঞানীরা বলছেন পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ কেন্দ্রের (ইনার কেন্দ্র) ১০০ মিটার বা তার বেশি আকৃতি বদলে গেছে। সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী ন্যাচারাল জিওসাইন্সে প্রকাশিত হয়েছে এ তথ্য। গবেষণায় নেতৃত্বে ছিলেন- ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূবিজ্ঞানী অধ্যাপক জন ভিডাল।  খবর বিবিসির

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই পরিবর্তন পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে, যা আমাদের সূর্যের ক্ষতিকর বিকিরণ থেকে রক্ষা করে।

পৃথিবীর অভ্যন্তরীণ একেবারে মধ্যভাগের স্তরটি গরম, কঠিন ধাতব বলসদৃশ। এর চারপাশ ঘিরে রয়েছে তরল ধাতবের বহিঃস্তর। গ্রহ বিজ্ঞানীরা কয়েক দশক ধরে অনুমান করছিলেন, সময়ের পরিক্রমায় পৃথিবীর ভেতরের কঠিন কেন্দ্রভাগ বিকৃত হয়েছে। তবে বর্তমানে প্রথমবারের মতো তাঁরা প্রমাণ পেয়েছেন, গত ২০ বছরে ভূ–কেন্দ্রের আকৃতিতে এ বিকৃতি ঘটেছে। ভূমিকম্পের তরঙ্গে ধরা পড়েছে এ বিকৃতির চিহ্ন।

পৃথিবীর কেন্দ্র মূলত দুটি ভাগে বিভক্ত- তরল বাইরের কোর এবং কঠিন অভ্যন্তরীণ কোর। ইনার কোরের গতিশীলতা পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরির মূল চালিকা শক্তি। যদি এটি থেমে যায়, তাহলে পৃথিবীও মঙ্গলগ্রহের মতো প্রাণহীন হয়ে পড়তে পারে। ইনার কোর পৃথিবীর অন্যান্য অংশের তুলনায় স্বতন্ত্রভাবে ঘোরে। তবে গবেষকরা দেখেছেন, ২০১০ সালের দিকে এটি পৃথিবীর ঘূর্ণনের তুলনায় ধীর হয়ে যায়, পরে আবার গতি বাড়িয়েছে।

বিজ্ঞানীরা সরাসরি পৃথিবীর কোরে পৌঁছাতে পারেন না, কারণ এটি প্রায় ৪ হাজার মাইল গভীরে অবস্থিত। তাই ভূমিকম্পের ফলে তৈরি হওয়া শকওয়েভ বা ভূকম্পন তরঙ্গ বিশ্লেষণ করেই তারা ইনার কোরের পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা পান। ১৯৯১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে একই জায়গায় সংঘটিত ভূমিকম্পের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা কোরের আকৃতি পরিবর্তনের প্রমাণ পেয়েছেন। গবেষকদের মতে, বাইরের কোরের তরল প্রবাহ এবং অসমান মধ্যাকর্ষণ টানের কারণেই ইনার কোরের আকৃতি বিকৃত হতে পারে।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাইরের তরল কোর জমে অভ্যন্তরীণ কোরে পরিণত হচ্ছে। তবে এটি পুরোপুরি কঠিন হতে কয়েক বিলিয়ন বছর লেগে যাবে। এর আগেই পৃথিবী হয়তো সূর্যের তাপে বিলীন হয়ে যাবে।

অধ্যাপক জন ভিদাল বলেন, এই পরিবর্তন আমাদের দৈনন্দিন জীবনে তাৎক্ষণিক কোনো প্রভাব ফেলবে না। তবে আমরা জানতে চাই, পৃথিবীর কেন্দ্রস্থলে কী ঘটছে।

তিনি আরও জানান, পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্র বিভিন্ন সময় আকস্মিক পরিবর্তনের শিকার হয়েছে। এটি ইনার কোরের বিকৃতির সঙ্গে সম্পর্কিত কি না, তা জানতে আরও গবেষণা প্রয়োজন। তবে তিনি আশ্বস্ত করে বলেন, এটি পৃথিবীর কোর থেমে যাচ্ছে বলে ভাবার কোনো কারণ নেই। বিজ্ঞানের জগতে নতুন তথ্য সবসময় আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলায়।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button