ঝালকাঠির রাজাপুর জমির দাম আকাশচুম্বী হওয়ায় ভূমিদস্যুরা হাঁকডাক দিয়ে খাল দখলের প্রতিযোগীতায় নেমেছেন। এক সময়ের খরস্রোত খালগুলো এখন ভূমিদস্যুদের দখল আর ভরাটের কারণে আজ মরা খাল ও সরুনালা হয়ে গেছে। এ ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খাল দখল করে গড়ে উঠেছে বহুতল স্থাপনা,আবার কোথাও কোথও চলছে পাকা স্থাপনা নির্মানের কর্মযজ্ঞ।
উপজেলার নৈকাঠি হাওলাদার পাড়া খালটি সন্ধা নদী থেকে শুরু করে লেবুবুনিয়া হয়ে ভান্ডারিয়া বড় নদীতে গিয়ে মিলিত হয়েছে। খালের মাঝে বাঁশের মাচা ও জাল ব্যবহার করে অভিনব কায়দায় ভরাট করা হচ্ছে খালটিকে। যে কারনে জৌলুশ হারাচ্ছে হাজার হাজার একর ফসলি জমি, বিপাকে পড়ছেন কৃষকরা। হাওলাদার পাড়া থেকে শুরু করে পালেরবাড়ী পর্যন্ত বয়ে গেছে আরেকটি ভারানি খাল। যে খালটির উপর নির্ভর করে প্রায় দেড় হাজার একর ফসলি জমির চাষাবাদ। দখল আর ভরাটের কারনে প্রায় ৩০ ফুটের খালটি আজ ৫ থেকে ৭ ফুটের হয়ে গেছে। খাল ভরাটের কারনে ফসলি জমি থেকে পানি নিস্কাশন না হওয়ার ধানের ফলন অর্ধেকেরও বেশী কমে গেছে। লেবুবুনিয়া বাজার ব্রীজ সংলগ্ন খালের মাঝেই চলছে পাকা ভবন নির্মানের কর্মযজ্ঞ। খাল দখল করে একের পর এক ভবন নির্মান করছে ভূমিদস্যুরা। পাকাপুল এলাকায় অভিনব কায়দায় খাল ভরাট করে নির্মান করা হচ্ছে ব্যাবসা প্রতিষ্ঠান। গালুয়া এলাকায় প্রভাবশালী ভুমিদস্যুরা খালের মধ্যেই বহুতল বাড়ী নির্মান করে বসবাস করছেন।
উপজেলা সদর ঘুরে দেখা গেছে, খালের চর প্রথমে বেড়া দিয়ে আগলে রেখে পরে তা ভরাট করা হচ্ছে। খাল ও নালা নানা কৌশলে দখলে নিলেও প্রভাবশালীদের ভয়ে কেউ উচ্চবাচ্য করতে পারছে না। তবে চুপ থাকলেও সচেতন মহলের মধ্যে প্রশাসনের বিরুদ্ধে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। মধ্য বাজার এলাকা থেকে বয়ে যাওয়া ভারানি খালটি জেলখানার পিছন থেকে বাইপাস এলাকায় ব্রীজ হয়ে তুলাতলার দিকে বয়ে গেছে। দখল আর দূষণে শ্রীহীন ও গতিহারা খালটি এখন মৃতপ্রায়। বাথরুমের ময়লা নিস্কাশনের পাইপ, ড্রেন ও সারি সারি ময়লার স্তুপে ভরাট এবং দখলের কারণে খালটি এখন সরুনালা (বেড়) হয়ে গেছে।
জোঁয়ারের সময় সামান্য পানি থাকলেও ভাটায় কোনো পানিই থাকে না এই খালটিতে। যে কারণে শহরের কোথাও আগুন লাগলে পানি সঙ্কট দেখা দেয়। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পানির উৎস খুজে পাওয়া যায় না। এ ছাড়া খালটি ও তার ছোট ছোট শাখা নালাগুলো ভরাট হয়ে যাওয়ায় বৃষ্টি হলেই শহরে সৃষ্টিহয় জলাবদ্ধতা। উপজেলা সদরের বিএনপি অফিস-সংলগ্ন এলাকার খালটি বেড়া দিয়ে আটকে ভরাট করে কাজ করার বিষয়টি চোখে পড়ার মতো হলেও প্রশাসন নীরব বলে অভিযোগ রয়েছে।
খাল ভরাট দখল ও দূষনের বিষয়ে বক্তব্য নেয়ার জন্য রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার নুসরাত জাহান খান এর সাথে দুই দিন ধরে যোগাযোগ করলেও তিনি নানা ব্যস্ততার কথা বলে বিষয়টি এড়িয়ে গেছেন।
ঝালকাঠি পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ রাকিব হোসেন এর কাছে খাল দখলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাজাপুর উপজেলায় দখল হওয়া খালগুলো জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় পর্যায়ত্রুমে দখলমুক্ত করা হবে।