খেলাধুলা

জয় দিয়েই সুপার ফোর শুরু করতে চায় টাইগাররা

মোহনা অনলাইন

উপমহাদেশের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ টুর্নামেন্ট এশিয়া কাপের চলমান আসরে টিকে থাকার মিশনে দারুণভাবে ঘুড়ে দাঁড়িয়েছে টাইগাররা। ‘বি’ গ্রুপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার কাছে বাজেভাবে হারলেও পরের ম্যাচেই আফগানিস্তানকে বড় ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। আর এ জয়ই তাদেরকে পৌঁছে দেয় সুপার ফোরে। এবার বাংলাদেশের লক্ষ্য জয় দিয়েই সুপার ফোর পর্ব শুরু করা। যদিও এই পর্বে প্রথম ম্যাচেই শক্তিশালী পাকিস্তানকে মোকাবেলা করবে লাল-সবুজরা। তবে পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় পেতে আত্মবিশ্বাসী সাকিব আল হাসানের দল। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়েই আজ বাবর আজমদের বিপক্ষে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। বিকাল সাড়ে ৩টায় লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে স্বাগতিক পাকিস্তানের মুখোমুখি হবে টাইগাররা।

২০১৯ বিশ্বকাপের পর এটাই প্রথম বাংলাদেশ-পাকিস্তান ওয়ানডে ম্যাচ। সর্বশেষ লড়াইয়ে সাকিব-মুশফিকুর রহিমদের ৯৪ রানে হারিয়েছিল পাকিস্তান। তবে বিশ্বকাপের ওই ম্যাচের আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে টানা চার ম্যাচ জিতেছিল বাংলাদেশ। এরমধ্যে ২০১৮ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মাটিতে হওয়া এশিয়া কাপের সুপার ফোরের জয়টিও ছিল। ম্যাচটিতে বাংলাদেশ ৩৭ রানে হারিয়েছিল পাকিস্তানকে। এশিয়া কাপের মঞ্চে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের একমাত্র সাফল্য এটিই। জয় পাওয়া ম্যাচে পাকিস্তানি পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদির বলে উইকেটরক্ষক সরফরাজকে ক্যাচ দিয়ে ৯৯ রানে আউট হন মুশফিক। ওই আসরের ফাইনাল খেলেছিল টাইগাররা। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে ভারতের কাছে ৩ উইকেটে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় বাংলাদেশের। পরিসংখ্যান ঘাটলে দেখা যায় ওয়ানডেতে পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩৭ ম্যাচ খেলে ৫টিতে জয় ও ৩২টিতে হেরেছে বাংলাদেশ।

এশিয়া কাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে হৃদয় ভঙ্গের কিছু অভিজ্ঞতাও আছে সাকিব বাহিনীর। ২০১২ সালে ঘরের মাঠের এশিয়া কাপে প্রথমবারের মত ফাইনালে উঠেছিল টাইগাররা। ওই আসরে পাকিস্তানকে ছাড়া অন্যসব দলকে হারিয়েছিল তারা। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ফাইনালে মাত্র ২ রানের হারে হৃদয় ভাঙ্গে পুরো জাতির। তবে দিন বদলেছে। দুর্দান্ত পারফরমেন্সের কারণে বর্তমানে ওয়ানডেতে বেশ শক্তিশালী দল বাংলাদেশ। কিন্তু এবারের এশিয়া কাপে সুপার ফোর পর্বে ফেভারিট হিসেবেই শুরু করবে পাকিস্তান। কারণ ঘরের মাঠের সুবিধার পাশাপাশি বিশ্বসেরা বোলিং আক্রমণ রয়েছে দলটির। শাহিন শাহ আফ্রিদি, নাসিম শাহ এবং হারিস রউফকে নিয়ে বিশে^র অন্যতম ভয়ংকর পেস আক্রমণ এখন পাকিস্তানের।

এদিকে খাদের কিনারায় পৌঁছে যাওয়ার পরও এবার টুর্নামেন্টে টিকে থাকার দৃঢ় মানসিকতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। বাজে ব্যাটিং পারফরমেন্সের কারণে লঙ্কানদের বিপক্ষে ৫ উইকেটে হেরে আসর শুরু করায় ক্রিকেট বিশেষজ্ঞদের অনেকেই এশিয়া কাপে বাংলাদেশের শেষ দেখেছিলেন। কিন্তু সেখান থেকে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে এখন চমক দেখানোর অপেক্ষায় সাকিবরা। ফিরে আসাটা এতটাই চমৎকার যে, রান রেটের সমীকরণের মারপ্যাচে পড়তে হয়নি টাইগারদের।

সমালোচকদের কল্পনার বাইরে গিয়ে আফগানদের বিপক্ষে পরিকল্পনা ও হিসেবি ক্রিকেট খেলেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ দল বেশ ভালো করেই জানতো আফগানিস্তানের কঠিন বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে কত বড় স্কোর করতে হবে। ম্যাচে নিজের কৌশল ফুটিয়ে তুলেছেন টাইগার অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। লাহোরের উইকেটে রশিদ খান বাংলাদেশকে সমস্যায় ফেলতে পারেন বুঝতে পেরে ব্যাটিং লাইনআপে পরিবর্তন এনেছিলেন তিনি।

আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ে কৌশলগত ভূমিকা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু লাহোরের ভেন্যুতে বলতে গেলে অপরাজেয় এক দল পাকিস্তানের বিপক্ষে শুধুমাত্র কৌশল দিয়েই জেতা সম্ভব হবে না। খেলতে হবে ভালো ক্রিকেটও।

অনুপ্রেরণাদায়ক অধিনায়ক বাবর আজমের নেতৃত্বে ফর্মের তুঙ্গে আছেন পাকিস্তানের বোলার ও ব্যাটাররা। কৌশলগত পরিকল্পনার পাশাপাশি তাদের বিপক্ষে জিততে হলে নিজেদের দক্ষতাও দেখাতে হবে বাংলাদেশকে। ম্যাচে নিজেদের সেরা ক্রিকেট খেলতে পারলে বাংলাদেশের সাফল্য পাওয়া সম্ভব বলে মনে করেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান মেহেদি হাসান মিরাজ।

আফগানদের বিপক্ষে ম্যাচ জয়ী ১১২ রানের ইনিংস খেলা মিরাজ পাকিস্তান ম্যাচের আগে বলেন, ‘আমরা কোনো প্রতিপক্ষকে নিয়ে চিন্তিত নই। আমরা শুধু আমাদের সেরা ক্রিকেটটা খেলতে চাই। আমরা জানি, যদি সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারি, তাহলে আমরা যে কোনো দলকে সব কন্ডিশনেই হারাতে পারি।’ তিনি আরও বলেন,‘শক্তিশালী ব্যাটিং এবং বোলিং আক্রমণ আছে পাকিস্তানের। কিন্তু আমাদের যা দক্ষতা আছে, তা দিয়ে তাদের মোকাবেলা করার বিষয়ে আমরা আত্মবিশ্বাসী। জয় দিয়েই সুপার ফোর পর্ব শুরু করতে চাই।’

জ্বর থেকে পুরোপুরি সেরে উঠায় দলের সাথে যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশ ওপেনার লিটন দাস। কিন্তু তার একাদশে সুযোগ নিয়ে আছে বিতর্ক। কারণ এক্ষেত্রে উইনিং কম্বিনেশন ভাঙতে হবে বাংলাদেশকে। কিন্তু এটাও নিশ্চিত, কৌশলগত কারণে পরিবর্তন হওয়া ব্যাটিং অর্ডারই পাকিস্তানের বিপক্ষেও একই রকম থাকবে না। যদিও আগের ম্যাচের আরেক সেঞ্চুরিয়ান নাজমুল হোসেন শান্তকে দেখা যাবে না পাকিস্তানের বিপক্ষে। কারণ হ্যামস্ট্রিং ইনজুরিতে পড়ে এশিয়া কাপ থেকে ইতোমধ্যে ছিটকে গেছেন তিনি। আফগানদের বিপক্ষে ১০৪ রান করে আউট হয়েছিলেন শান্ত।

বাংলাদেশ দল : সাকিব আল হাসান (অধিনায়ক), লিটন দাস, তাওহিদ হৃদয়, মুশফিকুর রহিম, আফিফ হোসেন, মেহেদি হাসান মিরাজ, তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, মুস্তাফিজুর রহমান, শরিফুল ইসলাম, নাসুম আহমেদ, মেহেদি হাসান, নাইম শেখ, শামীম হোসেন পাটোয়ারী, তানজিদ হাসান তামিম, তানজিম হাসান সাকিব ও এনামুল হক বিজয়।

পাকিস্তান দল : বাবর আজম (অধিনায়ক), শাদাব খান, মোহাম্মদ রিজওয়ান, সাউদ শাকিল, ফখর জামান, আবদুল্লাহ শফিক, ইমাম-উল-হাক, সৌদ শাকিল, সালমান আলি আঘা, ইফতিখার আহমেদ, মোহাম্মদ নাওয়াজ, উসামা মীর, হারিস রউফ, নাসিম শাহ, শাহিন শাহ আফ্রিদি, মোহাম্মদ হারিস, ফাহিম আশরাফ ও মোহাম্মদ ওয়াসিম।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button