বিরাট কোহলি ও লোকেশ রাহুলের জোড়া সেঞ্চুরির পর স্পিনার কুলদীপ যাদবের দারুন বোলিং নৈপুন্যে পাকিস্তানকে ২২৮ রানের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে এশিয়া কাপ সুপার ফোর পর্ব শুরু করলো ভারত। রান বিবেচনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডেতে এটিই সবচেয়ে বড় ব্যবধানে জয় ভারতের। আগেরটি ছিল ২০০৮ সালে মিরপুরে কিটপ্লাই কাপের দ্বিতীয় ম্যাচে ১৪০ রানের।
বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ২ উইকেটে ৩৫৬ রানের পাহাড় গড়ে ভারত। কোহলি ১২২ ও রাহুল ১১১ রানে অপরাজিত থাকেন। জবাবে ৩২ ওভারে ১২৮ রানে গুটিয়ে যায় পাকিস্তান। কুলদীপ ২৫ রানে ৫ উইকেট নেন। বৃষ্টির কারনে রিজার্ভ রেখে দু’দিনে অনুষ্ঠিত হয়েছে এ ম্যাচটি।
গতকাল শ্রীলংকার কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথমে ব্যাটিং করতে নামে ভারত। দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও শুভমান গিল উদ্বোধনী জুটিতে ১০০ বলে ১২১ রান তুলেন। রোহিত ৫৬ ও গিল ৫৮ রানে আউট হন। ১৮তম ওভারে দলীয় ১২৩ রানে রোহিত-গিল ফেরার পর জুটি বাঁধেন কোহলি ও রাহুল। ২৫তম ওভারের প্রথম ডেলিভারির পর বৃষ্টিতে বন্ধ হয়ে গেলে ম্যাচটি রিজার্ভ ডে’তে গড়ায়।
বৃষ্টিতে খেলা শেষ হবার আগে ২৪ দশমিক ১ ওভার ব্যাট করে ২ উইকেটে ১৪৭ রান তুলেছিলো ভারত। কোহলি ১৬ বলে ৮ এবং রাহুল ২টি চারে ২৮ বলে ১৭ রানে অপরাাজিত ছিলেন। তাছাড়া বৃষ্টির কারনে নির্ধারিত সময়ে শুরু হতে পারেনি ভারত-পাকিস্তান লড়াই। প্রায় দেড় ঘন্টা পর খেলা শুরু হলে পাকিস্তানের বোলারদের উপর ব্যাট হাতে ছড়ি ঘুড়িয়েছেন আগের দিন অপরাজিত দুই ভারতীয় ব্যাটার কোহলি ও রাহুল। ৩৩তম ওভারে ভারতের রান ২শ স্পর্শ করেন তারা। এরপর হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নেন কোহলি ও রাহুল। হাফ-সেঞ্চুরির ইনিংসকে সেঞ্চুরিতে পরিণত করার পথে ৪৫তম ওভারেই দলের রান ৩শ নেন কোহলি-রাহুল জুটি।
৪৭তম ওভারে ওয়ানডেতে ষষ্ঠ সেঞ্চুরি করেন ১০০ বল খেলে রাহুল। পরের ওভারে ৮৪ বলে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ৪৭তম সেঞ্চুরির দেখা পান কোহলি। ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ৪৯ সেঞ্চুরি নিয়ে বিশ্বরেকর্ডের মালিক ভারতের শচীন টেন্ডুলকার।
জোড়া সেঞ্চুরির পর স্লগ ওভারে রানের গতি বাড়িয়ে ভারতকে ২ উইকেটে ৩৫৬ রানে রানের পাহাড়ে বসিয়েছেন কোহলি-রাহুল। পাকিস্তানের বিপক্ষে এটি যৌথভাবে সর্বোচ্চ দলীয় রান ভারতের। ২০০৫ সালে বিশাখাপত্নমে ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ৩৫৬ রান করেছিলো ভারত।
৯টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৯৪ বলে ১২২ রানে অপরাজিত থাকেন কোহলি। এই ইনিংস খেলার পথে বিশ্বের পঞ্চম ও ভারতের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে ১৩ হাজার পূর্ণ করেন কোহলি। এর আগে ১৩ হাজার রান ক্লাবের সদস্য হয়েছেন-ভারতের টেন্ডুলকার (১৮৪২৬), শ্রীলংকার কুমার সাঙ্গাকারা (১৪২৩৪), অস্ট্রেলিয়ার রিকি পন্টিং (১৩৭০৪) এবং লংকান সনাথ জয়সুরিয়া (১৩৪৩০)।
১২টি চার ও ২টি ছক্কায় ১০৬ বলে অপরাজিত ১১১ রান করেন গত মার্চের পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে নামা রাহুল। তৃতীয় উইকেটে ১৯৪ বলে অবিচ্ছিন্ন ২৩৩ রান তুলেছেন কোহলি-রাহুল। পাকিস্তানের বিপক্ষে যেকোন উইকেটে এটিই সর্বোচ্চ রানের জুটি। ভারতের পক্ষে তৃতীয় উইকেট জুটিতে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান।
বোলিংয়ে পাকিস্তানের পক্ষে ১০ ওভার করে বল করে আফ্রিদি ৭৯ রানে এবং শাদাব ৭১ রানে ১টি করে উইকেট নেন।
৩৫৭ রানের টার্গেটে খেলতে নেমে পঞ্চম ওভারেই প্রথম উইকেট হারায় পাকিস্তান। ইমাম উল হককে ৯ রানে ফিরিয়ে দেন পেসার জসপ্রিত বুমরাহ। দ্বিতীয় উইকেটে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন আরেক ওপেনার ফখর জামান ও অধিনায়ক বাবর আজম। তবে বেশি দূর যেতে পারেননি তারা। দশম ওভারে ইনসুইং ডেলিভারিতে বাবরের (২৪ বলে ১০ রান) স্টাম্প উপড়ে দেন পেসার হার্ডিক পান্ডিয়া।
পরের ওভারে মোহাম্মদ রিজওয়ানকে ২ রানে শিকার করে পাকিস্তানকে চাপে ফেলে দেন শারদুল ঠাকুর। ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর ঘুড়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে পাকিস্তান। কিন্তু মিডল অর্ডার ব্যাটারদের বড় ইনিংস খেলার সুযোগ দেননি ভারতের বাঁ হাতি স্পিনার কুলদীপ যাদব।
কুলদীপের ঘুর্ণিতে পড়ে ৩২ ওভারে ৮ উইকেটে ১২৮ রান করে ম্যাচ হারে পাকিস্তান। ইনজুরির কারনে পাকিস্তানের শেষ দুই ব্যাটার নাসিম শাহ ও হারিস রউফ ব্যাটিং করেননি। এতে ১২৮ রানে অলআউট হয় পাকরা। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২৭ রান করেন জামান। এছাড়া আগা সালমান ও ইফতিখার আহমেদ ২৩ রান করে করেন। ৮ ওভার বোলিং করে ২৫ রানে ৫ উইকেট নেন কুলদীপ। ৮৭ ম্যাচের ওয়ানডেতে দ্বিতীয়বারের মত ইনিংসে ৫ উইকেট নিলেন কুলদীপ।
সুপার ফোর-এ মঙ্গলবার (১২ সেপ্টেম্বর) নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে শ্রীলংকার মুখোমুখি হবে ভারত। আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর সুপার ফোরে নিজেদের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে শ্রীলংকার বিপক্ষে খেলবে পাকিস্তান। নিজেদের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়েছিলো পাকিস্তান।