পোলট্রি ব্যবসায়ী কাইয়ুম মৌলিক। প্রতিদিনের মতো বুধবার সকালে দোকানের শাটার খুলতেই দেখতে পান একটি চিঠির খাম। নিমন্ত্রণপত্র ভেবে খামটি খুলতেই বেরিয়ে এলো ৩টি এক হাজার টাকার নোট ও একটি চিঠি। কম্পিউটার কম্পোজ করা চিঠিটি পড়ে অবাক হন কাইয়ুম মৌলিক। চিঠিসহ ওই টাকা রেখে গেছে এক চোর, অভাবের তাড়নায় এক যুগ আগে সে চুরি করেছিল।
ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার রায়পুর ইউনিয়নের রাঙ্গাবাড়িয়া বাজারে এ ঘটনা ঘটে। গত মঙ্গলবার রাতের কোনো এক সময়ে ওই বাজারের পোলট্রি ব্যবসায়ী কাইয়ুম মৌলিকের দোকানে চিঠিটি রেখে যায় ওই ‘মানবিক’ চোর।
২৯৭ শব্দের ওই চিঠিতে লেখা ছিল, ‘আপনি আমাকে চিনবেন কি না জানি না। আমি আপনাকে খুব ভালোভাবে চিনি ও জানি। আপনি খুব ভালো একজন মানুষ। আমি আপনার দোকান থেকে ছোটবেলায় কিছু টাকা চুরি করেছিলাম। চুরি করে নেওয়া টাকার পরিমাণ আমার মনে নেই। টাকার পরিমাণ হয়তো দুই হাজার থেকে চার হাজারের কমবেশি হতে পারে। আমি আসলে গরিব মানুষ। কী বলব, শয়তানের ওয়াসওয়াসা (কুমন্ত্রণা) হোক আর নিজের অভাবের কারণে হোক, আমি আমার ভুল স্বীকার করছি। আসলে আমি বিষয়টি নিয়ে খুবই লজ্জিত ও অনুতপ্ত। এ জন্য আমি আপনার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি।’
চিঠিতে আরও বলা হয়, ‘যেহেতু আপনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন আপনি অবশ্যই জানেন, আল্লাহ তাঁকে ক্ষমা করেন, যে অন্যকে ক্ষমা করেন। এ আশায় ১২–১৩ বছর পর আপনাকে এই সামান্য টাকা দিয়ে আমি ক্ষমা ভিক্ষা চাচ্ছি। আপনি আমাকে আল্লাহর ওয়াস্তে মাফ করে দেবেন, এই আশায় তিন হাজার টাকা পাঠালাম। দয়া করে আমাকে ক্ষমা করে দিন।’
এ বিষয়ে কাইয়ুম মৌলিক আরও বলেন, ‘চিরকুটটি পড়ার পর আমি হতবাক হয়েছি। এই যুগে এমন মানুষ এখনো আছেন। বারবার তাঁর কথা ভেবেছি। কবে আমার দোকান থেকে টাকা চুরি হয়েছিল আমার কিছুই মনে নেই। চিরকুটটি পড়ার পর আমি মন থেকে ওই ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দিয়েছি। পাশাপাশি দোয়া করেছি, যেন তিনি সুখে থাকেন।
রায়পুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন বলেন, ঘটনাটি তিনি জানতে পেরেছেন। ওই ব্যক্তি চোর হলেও তাঁর শুভ বুদ্ধির উদয় হয়েছে। বিষয়টি আশ্চর্যজনক হলেও সত্য। এ যুগে এ ধরনের সরল স্বীকারোক্তির কথা খুব একটা শোনা যায় না। তিনি বলেন, এ ঘটনা সমাজে বার্তা দেয়, কেউ কোনো অপকর্ম করলে ভেতরে ভেতরে হলেও তাঁকে অনুতপ্ত হতে হয়।
ফরিদপুর নাগরিক মঞ্চের সভাপতি আওলাদ হোসেন বলেন, মানুষের মনের মধ্যে শুভ ও অশুভ উভয় ধরনের শক্তি বসবাস করে। অনেক সময় অভাব বা লোভের বশবর্তী হয়ে মানুষ এমন অপকর্ম করে ফেলেন। যাঁরা করেন, তাঁদের কোনো না কোনো সময় কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা হয়। অজ্ঞাতনামা ওই ব্যক্তি তিন হাজার টাকা ফেরত দিয়ে যে উদাহরণ সৃষ্টি করলেন, তা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।