আকার-আকৃতিতে একই রকম হওয়ার কারণে শুক্রকে পৃথিবীর ‘যমজ গ্রহ’ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। দু’টি গ্রহের ভরও প্রায় একই। এর আগেও বিজ্ঞানীরা দাবি করেছিলেন যে, আতিথ্যহীন রুক্ষ পরিবেশ এবং ঘন বায়ুমণ্ডলযুক্ত শুক্র মানুষের বাসযোগ্য নয়।
তবে এইবার শুক্রেই অক্সিজেনের খোঁজ পেলেন বিজ্ঞানীরা। জানা যাচ্ছে, পৃথিবীর প্রতিবেশী গ্রহে বায়ুমণ্ডলে পারমাণবিক অক্সিজেন শনাক্ত করেছেন বিজ্ঞানীরা। সূত্রের খবর, বায়ুতে ভাসমান ‘সোফিয়া’ মানমন্দিরে থাকা একটি যন্ত্র ব্যবহার করেই অক্সিজেনের খোঁজ মিলছে। উল্লেখ্য, ‘সোফিয়া’ একটি বোয়িং ৭৪৭এসপি বিমান। যেটি ইনফ্রারেড টেলিস্কোপ বহন করে।
নাসা এবং জার্মান এরোস্পেস সেন্টারের যৌথ উদ্যোগে শুক্রের বায়ুমণ্ডলীয় গঠন বোঝার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হচ্ছিল। সেই সময়ই এই নতুন পথ খুলে যায় বিজ্ঞানীদের কাছে। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ২১ শতাংশ অক্সিজেন দিয়ে তৈরি। তবে শুক্রের ক্ষেত্রে তেমনটা নয়। শুক্রের একটি ঘন এবং ক্ষতিকারক বায়ুমণ্ডল রয়েছে, যা ৯৬.৫ শতাংশ কার্বন-ডাই-অক্সাইড দিয়ে ঘেরা।
বিজ্ঞানীদের দাবি, শুক্রের সেই ঘন বায়ুমণ্ডলের মধ্যেই রয়েছে খুব স্বল্প পরিমাণ অক্সিজেন। প্রায় নেই বললেই চলে। প্রচুর কার্বন ডাই অক্সাইড এবং স্বল্পমাত্রার অক্সিজেন ছাড়াও নাইট্রোজেন এবং অন্যান্য কয়েকটি গ্যাস অল্পমাত্রায় শুক্রের বায়ুমণ্ডলে রয়েছে। এত দিন বিজ্ঞানীদের ধারণা ছিল, শুক্রের বায়ুমণ্ডলে অক্সিজেনের একটি কণা পর্যন্ত নেই। তাই এই নয়া আবিষ্কারকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
তবে পৃথিবীতে আণবিক অক্সিজেন দেখতে পাওয়া যায়। যা দু’টি অক্সিজেন পরমাণু নিয়ে গঠিত এবং শ্বাসযোগ্য।অন্য দিকে, শুক্রে অক্সিজেনের একক পরমাণুর খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। বিজ্ঞানীরা শুক্রের উভয় মেরুতেই সেই অক্সিজেনের খোঁজ পেয়েছেন। যদিও সেই অক্সিজেন শ্বাস নেওয়ার যোগ্য নয়।
জার্মান অ্যারোস্পেস সেন্টারের পদার্থবিদ তথা গবেষক হেইঞ্জ-উইলহেলম হ্যাবার্স এই প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘শুক্র গ্রহের বায়ুমণ্ডল খুব ঘন। গঠনও পৃথিবীর থেকে অনেক আলাদা। শুক্র বাসযোগ্য নয়। অন্তত মানুষের জন্য নয়।’’
এই প্রসঙ্গে হ্যাবার্স বলেন, ‘‘আমরা শুক্রের বিবর্তন বোঝার চেষ্টা করছি। এখনও সেই বোঝা প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তার মধ্যেই এই আবিষ্কার শুক্র এবং এর বায়ুমণ্ডলীয় গঠনের অনুসন্ধানে একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায় হয়ে উঠতে পারে।’’