জাতীয়

ফেসবুকে ভয়ংকর প্রতারণার ফাঁদ, টার্গেট নিঃসঙ্গ নারী

মোহনা অনলাইন

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক মেসেঞ্জারে ভয়ংকর ফাঁদ পাতা বেনজির হোসেনকে (৪০) গ্রেফতার করেছে সিটিটিসি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন বিভাগ। তাকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর নানা তথ্য। 

সিটিটিসি বলছে, বেনজির ফেসবুকে ভুয়া প্রোফাইল তৈরি করে নিঃসঙ্গ নারীদের টার্গেট করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণা করতেন। পরে বিয়ে ও সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করতেন তিনি। প্রথমে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করে এর সুযোগ নিয়ে লাখ লাখ টাকা এমনকি কোটি টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়েছেন বেনজির। সোমবার (২৭ নভেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান।

সিটিটিসি প্রধান বলেন, বেনজির এক বিমান চালক আমেরিকা প্রবাসীর প্রোফাইল হুবহু কপি করে নিজের একটি ফেক ফেসবুক প্রোফাইল তৈরি করে। প্রোফাইলটিকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য তিনি নিয়মিত বিমান চালানোর ছবি ও ভিডিও পোস্ট করতেন। তিনি ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ এবং পেজে নিঃসঙ্গ নারীদের টার্গেট করে প্রেমের ফাঁদ ফেলত। পরে বিয়ে ও সপরিবারে আমেরিকায় নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাতেন।

ভিকটিমদের সঙ্গে তিনি অডিও কলে কথা বললেও কখনোই ভিডিও কলে কথা বলতেন না। অনলাইন প্রণয়ের একপর্যায়ে তিনি বিভিন্ন সময় বিপদে পড়ার কথা বলে বিভিন্ন নগদ অ্যাকাউন্টে (প্রতারণার কাজে ব্যবহার করা ১৯টি নগদ অ্যাকাউন্টের বিষয়ে জানা গেছে) ধাপে ধাপে লাখ লাখ টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। প্রতারক বেনজিরের প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ১৩টি নগদ অ্যাকাউন্টে গত ৪ মাসে ১ কোটি টাকারও বেশি লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়।

সিটিটি বলছে, প্রতারক বেনজিরের অভিনব প্রতারণার ধরন ছিল অনেকটাই নেটফ্লিক্সের ট্রেন্ডার সুইটলার ডকুমেন্টারি ড্রামার মতো। জেলা পুলিশ পরিচয়ে প্রতারণা, রোমান্স স্ক্যাম, ইন্স্যুরেন্স স্ক্যাম, সেনাবাহিনী ও পুলিশের পরিচয়ে প্রতারণা করেছেন তিনি। চাকরির স্ক্যাম, হুন্ডি ব্যবসা, মানবপাচারসহ নানা ধরনের প্রতারণামূলক অপরাধের সঙ্গে জড়িত বেনজির।

প্রতারক বেনজিরের বাড়ি নড়াইল হলেও টাকাগুলো ক্যাশ আউট করতেন তার বাড়ি থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে যশোর ও খুলনা জেলার বিভিন্ন নগদ ক্যাশ আউট পয়েন্টে। তার প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত সিম এবং নগদ অ্যাকাউন্ট রেজিস্ট্রেশন করা অন্য ব্যক্তির নামে। ক্যাশ আউট করার সময় প্রতারক বেনজির পরিচয় ও চেহারা গোপন করার জন্য ক্যাপ, সানগ্লাস ও মুখে মাস্ক পরে থাকতেন।

তিনি আরও জানান, প্রতারক বেনজিরের প্রতারণার স্বীকার হয়ে গত সাত মাসে বিভিন্ন নগদ নম্বরে প্রতি মাসে ১৪-১৫ লাখ করে টাকা দিয়ে প্রায় এক কোটি টাকা খুইয়েছেন স্বপ্না (ছদ্মনাম) নামের এক সিঙ্গেল মাদার। একই সময়ে জান্নাত (ছদ্মনাম) প্রতারক বেনজিরের কাছে খুইয়েছেন প্রায় ১৫ লাখ টাকা। প্রতারক বেনজির হোসেনের স্মার্ট ফোনে ৫০টিরও বেশি এ ধরনের নারীর সন্ধান পাওয়া যায়।

স্বপ্না ও জান্নাত গত এক সপ্তাহের মধ্যে ভিন্ন সময়ে অভিযোগ নিয়ে সিটি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনে প্রতিকারের জন্য আসেন। স্বপ্না রাজধানীর ওয়ারী থানায় প্রতারণার বিষয়ে গত ২১ নভেম্বর মামলা দায়ের করেন। পরে ২২ নভেম্বর ছায়া তদন্তে নেমে বিশদ প্রযুক্তিগত অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে অভিযুক্তকে বেনজিরকে শনাক্ত করা হয়। এরপর খুলনার ফুলতলায় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত নগদ নম্বর থেকে ক্যাশ আউট করার সময় তাকে হাতেনাতে গ্রেপ্তার করা হয়।

মূলত বেনজিরের দৃশ্যমান কোনো আয়ের উৎস নেই। কিন্তু এরপরও গত কয়েক বছরে প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা অর্থ দিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছেন তিনি। কয়েক বছরে প্রতারণার অর্থে পাঁচ বিঘা জমির উপর বাগান বাড়ি (দুটি ডুপ্লেক্স ভবন), আনুমানিক তিন বিঘা জমির উপর সম্প্রতি কেনা বিলাসবহুল ভবন, নড়াইলে বিভিন্ন জায়গায় আনুমানিক ২০ বিঘা মাছের খামার, নড়াইলে বিভিন্ন স্থানে নির্মিতব্য ভবন, যশোর ও সাভারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বহুতল ভবন ও বিপুল ব্যাংক ব্যালেন্সের সন্ধান পাওয়া গেছে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button