মহাকাশে টমেটো ফলানোর দায়িত্বে ছিলেন নভোচারী ফ্র্যাংক রুবিও ও তার দল। প্রথমবারের মতো মহাকাশের এই কৃত্রিম ও প্রতিকূল পরিবেশে দুটো টমেটো ফলানও তারা। তবে ফলানো টমেটোগুলোই আবার মহাকাশে হারিয়ে ফেলেন রুবি! দেশে ফিরে এসে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি এরকম তথ্য জানান।
আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (আইএসএস) থেকে ফিরে এসে দেওয়া সাক্ষাৎকারে রুবিও জানান, মহাকাশে চাষ করা টমেটোগুলোকে একটি প্রেজেন্টেশনের জন্য ব্যাগে ভরে রেখেছিলেন তিনি। কিন্তু পরে ওই ব্যাগসহই টমেটোগুলো হারিয়ে যায়। তার বাকি নভোচারী বন্ধুরা তো মজার ছলে দাবি করে বসেন, রুবিও নাকি নিজেই টমেটোগুলো খেয়ে ফেলেছেন!
তবে আইএসএস থেকে হারিয়ে যাওয়ার আট মাস পর ডিসেম্বরের শুরুতে টমেটোগুলোর আবার খোঁজ মিলেছে। নাসা হারিয়ে যাওয়া সে দুটো টমেটোর ছবিও প্রকাশ করে। নাসা জানায়, টমেটোগুলো একটি প্লাস্টিক জিপব্যাগে পানিশূন্য ও কুঁচকানো অবস্থায় পেয়েছে তারা। অবশ্য সেগুলো এতদিন মহাকাশের শূন্য অভিকর্ষে ভেসে থাকলেও খুব একটা খারাপ অবস্থা হয়নি ফলগুলোর।
নাসা তাদের ব্লগ পোস্টে বলেছে, ‘টমেটোগুলো কিছুটা বিবর্ণ হয়ে গেলেও এগুলোর মধ্যে কোনো জীবাণু বা ছত্রাক জন্মায়নি।’ নাসার ভাষ্যমতে, টমেটোগুলোকে কেউ একজন আবর্জনা ভেবে আইএসএসের ভেতরে কোথাও ফেলে দিয়েছিলেন। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে এক বছর পর অন্য নভোচারীরা টমেটোগুলো আবিষ্কার করেন।
তবে খুঁজে পাওয়া টমেটোগুলো ঠিক কোন সময়ের তা নিয়েও বিতর্ক আছে। আগের সংবাদগুলোতে টমেটোগুলো ভেজ-০৫ পরীক্ষার বলা হলেও নাসার মতে, রুবিও ভুলক্রমে ২০২৩ সালের ভেজ-০৫ প্রজেক্টের টমেটোর সাথে ২০২২ সালের এক্সরুট পরীক্ষার টমেটোর উলটপালট করে ফেলেছিলেন। তাই ধারণা করা হচ্ছে, পাওয়া টমেটোগুলোর বয়স আট মাসের থেকেও বেশি হবে।
উল্লেখ্য, নাসা দীর্ঘ দিন ধরে মহাকাশের প্রতিকূল পরিবেশ ফসল উৎপাদনে কেমন ভূমিকা রাখে এবং আইএসএস-এ কীভাবে ফসল ও খাবার উৎপাদন করা যায় তা নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে। রেড ডোয়ার্ফ টমেটোগুলো এক্সরুট বা এক্সপোজড রুট অন-অরবিট টেস্ট সিস্টেম প্রোগ্রামের আওতায় ফলানো হয়েছিল। এক্ষেত্রে মাটির পরিবর্তে হাইড্রোপোনিক ও অ্যারোপোনিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়।
রুবিও ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ফিরে আসার আগ পর্যন্ত আইএসএস-এ রেকর্ড ৩৭১ দিন অবস্থান করেছিলেন। আর মার্চের দিকে ফলানো টমেটোগুলো ভেজ-০৫ পরীক্ষার অংশ হিসেবে পৃথিবীতে পাঠানোর কথা ছিল।
স্কুলের বাচ্চাদের একটি অনুষ্ঠানে টমেটোগুলোর একটি নমুনা দেখানোর পরিকল্পনা করেন রুবি। তবে আট থেকে বিশ ঘণ্টা খোঁজার পরও তিনি আর তা খুঁজে পাননি। রুবি বলেন, ‘আমি মোটামুটি নিশ্চিত ছিলাম টমেটোগুলোকে আমি ভেলক্রো (মহাকাশে প্রয়োজনীয় বস্তু নিরাপদে রাখার ব্যাগ) করে রেখেছি। কিন্তু পরে এসে তা আর পাইনি।’
নাসা স্পেস স্টেশনের ঠিক কোথায় টমেটোগুলো খুঁজে পেয়েছে তা অবশ্য জানায়নি।