অ্যালেক্সি নাভালনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ প্রতিপক্ষ এবং কট্টর সমালোচক ছিলেন। সেই নাভালনি কারাগারে মারা গেছেন শুক্রবার। কিন্তু তার মৃত্যুর কারণ নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। মৃত্যুর একদিন আগেও তিনি ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে আদালতে শুনানিতে অংশ নেন, তখন নাভালনি সুস্থ ও হাস্যোজ্জ্বল ছিলেন। অনেকেই তার মৃত্যুর জন্য দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে দায়ী করেছেন।
তার মৃত্যু হয়েছে সেকথা অনেকেই বিশ্বাস করতে পারছেন না। খোদ নাভালনির স্ত্রীও তার স্বামীর মৃত্যুর খবর কতটুকু সত্য তা নিয়ে সন্দিহান। মৃত্যুর সংবাদের সত্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন তার স্ত্রী ইউলিয়া নাভালনায়া। ইউলিয়া বলেছেন, ‘আমি জানি না এটি (নাভালনির মৃত্যু সংবাদ) সত্য কি না। আমরা পুতিন এবং তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসনকে বিশ্বাস করতে পারি না। তারা সবসময় মিথ্যা বলে।’ ‘তবে যদি সত্য হয়ে থাকে, তাহলে আমি চাই পুতিন, তার সব অনুগামী-অনুসারী, পুতিনের মিত্র এবং তার নেতৃত্বাধীন সরকার— সবাই এর দায় বহন করবে; যা তারা আমাদের দেশ, আমার পরিবার এবং আমার স্বামীর সঙ্গে করেছে।’
কীভাবে নাভালনির মৃত্যু হল তা নিয়ে আছে নানা প্রশ্ন। অনেকে ভাবছেন, নাভালনিও হয়ত প্রেসিডেন্ট পুতিনের অন্যান্য শত্রুদের মতোই রহস্যজনক পরিণতি বরণ করেছেন। শত্রুকে সরাতে মোক্ষম চালই হয়ত চেলেছেন পুতিন। একে একে পথের কাঁটা সরাচ্ছেন তিনি। ভাড়াটে সৈন্য ওয়াগনার প্রধান প্রিগোজিনের পর এবার সর্বশেষ শিকার হয়ে থাকতে পারেন নাভালনি।
অ্যালেক্সি নাভালনির মৃত্যুর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছেন দেশটির সাধারণ মানুষ। তবে, সে বিক্ষোভ দীর্ঘস্থায়ী হতে দেয়নি রুশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী। সেন্ট পিটার্সবার্গের রাস্তায় নামা বিক্ষুব্ধদের টেনে হিচড়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তবে, সব বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে নাভালনির স্বরণে মস্কোসহ বিভিন্ন শহরে তার ছবির সামনে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সাধারণ মানুষ।
রাশিয়া ছাড়াও নাভালনির মৃত্যুতে বিক্ষোভ হয়েছে বিভিন্ন দেশে। এরইমধ্যে জার্মানির বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ করেন শত শত মানুষ। এসময় পুতিন বিরোধী নানা স্লোগান দিয়ে রুশ দূতাবাসের সামনেও অবস্থান নেন অনেকে। এমনকি, আত্মার শান্তির জন্য মোমবাতিও প্রজ্জ্বলন করা হয়। অনেকেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
নাভালনির মা লুদমিলা নাভালনিয়া আজ ছেলের মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর এক ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘আমি কোনো সমবেদনা শুনতে চাই না। আমরা গত ১২ (ফেব্রুয়ারি) তাঁকে কারাগারে দেখেছিলাম। সে প্রাণবন্ত, সুস্থ ও সুখী ছিল।’
পুতিনের সমালোচকদের অধিকাংশই রাশিয়া ছেড়ে গেছেন। কিন্তু নাভালনি নিশ্চিত কারাবাস হবে জেনেও জার্মানিতে কয়েক মাস চিকিৎসা নিয়ে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে দেশে ফেরেন। এর আগের বছর আগস্টে তাঁর শরীরে ‘নোভিচোক’ নামের বিষ প্রয়োগ করা হয়েছিল।
নাভালনির মৃত্যুর জন্য পুতিন ও তাঁর সরকারকে দায়ী করেছেন দেশটির ভিন্ন মতাবলম্বী ব্যক্তি ও পশ্চিমা দেশগুলো। শান্তিতে নোবেলজয়ী রাশিয়ার নাগরিক দিমিত্রি মুরাতোভ বলেছেন, নাভালনিকে তিন বছর ধরে নির্যাতন ও যন্ত্রণা দেওয়া হয়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজ বলেন, জীবন দিয়ে তিনি নিজের সাহসের প্রতিদান দিয়ে গেলেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেন, নাভালনির মৃত্যু রাশিয়ার জনগণের জন্য এক বিরাট ধাক্কা। যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস বলেছেন, তারা (রুশ কর্তৃপক্ষ) যে গল্পই বলুক না কেন, রাশিয়াই এর জন্য দায়ী।
রাশিয়ায় এক দশকের বেশি সময় রাজপথে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন নাভালনি। পুতিন প্রশাসনের দুর্নীতির তথ্য নিজের ইউটিউব চ্যানেলে তুলে ধরেন তিনি। কোটি কোটি মানুষ তা দেখেন এবং হাজার হাজার মানুষ রাজপথে নেমে এসেছিলেন।