পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরাপরে পাড়ি জমিয়েছেন সর্বকালের সেরা লেগ স্পিনার শেন ওয়ার্ন। ওয়ার্ন চলে গেলেও রয়ে গেছে তার কীর্তি। যে বা যারাই তার মুখোমুখি হয়েছিলেন, তারাই বুঝেছেন বাইশগজের ইতিহাসে কি ছিলেন এই অস্ট্রেলিয়ান ঘূর্ণি জাদুকর।
২০২২ সাল। বছরের শুরুর দিকে বন্ধুদের সঙ্গে থাইল্যান্ডে ঘুরতে যান ওয়ার্ন। সদা হাস্যজ্জ্বোল এই ক্রিকেটার উপভোগও করছিলেন বেশ। ৪ মার্চ বন্ধুদের সঙ্গে বের হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কোনো খোঁজ মিলছিল না তার। অনেকক্ষণ অপেক্ষার পর ওয়ার্নের রুমের দরজায় বন্ধুরা নক করেন। সাড়া না মিললে ভাঙা হয় সেটি, রুমে ওয়ার্নের খোঁজ মিললেও তিনি মাটিতে পড়ে ছিলেন অচেতন অবস্থায়।
পরে মেডিক্যাল টিমের সহায়তায় আপ্রাণ চেষ্টা করলেও ওয়ার্নের প্রাণপাখিকে আর ফেরানো যায়নি। অথচ সেদিন স্বদেশী ক্রিকেটার রড মার্শের মৃত্যুর খবরে এক্সে (সাবেক টুইটার) শোক জানিয়েছেন এই কিংবদন্তি, কে জানত কিছুক্ষণ পর মৃত্যুর জন্য তিনিও হবেন খবরের শিরোনাম!
ক্রিকেট মাঠ হোক কিংবা জীবনের মঞ্চ হোক, শেন ওয়ার্ন ছিলেন আগাগোঁড়া ‘রহস্যময়’। তার সেই রহস্যের জাঁল ভেদ করা খুব কঠিন কাজ ছিল সবার জন্যেই। ব্যাটারদের জন্য বরং কাজটা বরং বেশিই কঠিন ছিল। তার ঘূর্ণি ছিল ঘোর লাগা বিস্ময়। সে ঘূর্নির মোহে পড়ে বিভ্রান্তের মায়াজালে আটকে গেছেন কত রথী মহারথী! কত কিংবদন্তি বন্দি হয়েছেন তার চোখ ধাঁধাঁনো লাইন লেংথের এক মহাবিভ্রান্তির জালে।
নব্বই দশকের পুরোটাই নিজের করে নিয়েছিলেন ওয়ার্ন। ভারতের বিপক্ষে সিডনিতে প্রথম মাঠে নামা। তখনো তার উইকেটের ভান্ডারের ‘বিরশ বদন’ দশা। নিজেকে খানিকটা চেনালেন সে বছরই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। তবে নিজেকে ঝালিয়ে ফিরলেন ১৯৯৩-৯৪ এর ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্ল্যাসিকে। সে বছরই ক্রিকেট বিশ্ব দেখলো ‘বল অব দ্য সেঞ্চুরি’। এরপর মেলবোর্নে হ্যাটট্রিক, বিশ্বকাপে ফাইনাল সেরা এবং পাকিস্তান বধ!
শেন ওয়ার্নকে মনে রাখার জন্য তার পুরো ক্যারিয়ার মানুষ বোধহয় দেখবে না। দেখার দরকারও নাই যদি চোখের সামনে আসে ২০০৫ অ্যাশেজ। এই এক সিরিজ দিয়েই তাকে অনায়াসে কিংবদন্তির আসনে বসিয়ে দেয়া যায়। পাঁচ ম্যাচে ১৯ দশমিক ৯২ গড়ে শিকার করেছিলেন ৪০ উইকেট! এক হাতেই কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন ইংলিশদের। এরপর তো টেস্টে ৭০০তম উইকেট তাকে চড়িয়ে দিলো চির অমরত্বের রথে!