‘আমাদের জন্য দোয়া করিস। সোমালিয়ার জলদস্যুরা আক্রমণ করেছে। অলরেডি আমরা অ্যারেস্টেড। আমাদের এক জায়গায় বন্দি করে রেখেছে। দোয়া করিস, যদি কোনো দিন বেঁচে আসি দেখা হবে ইনশাআল্লাহ।’
কথাগুলো সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি এক নাবিকের (নিরাপত্তার স্বার্থে তার নাম ব্যবহার হয়নি)। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে এই মেসেজ পাঠিয়েছেন নিজ পরিবারের কাছে।
শুধু তিনি নন, তার মতো জীবন নিয়ে শঙ্কায় আছেন বাংলাদেশি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহর মধ্যে থাকা ২৩ নাবিক ও ক্রু। তাদের জাহাজের মধ্যে একটি রুমে বন্দি করে রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
এর আগে, মঙ্গলবার দুপুরে ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে জাহাজটি। এরপর বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে জাহাজটি ভারত মহাসাগর থেকে সোমালিয়া নিয়ে যাওয়ার কাজ শুরু করে দস্যুরা। বর্তমানে নাবিকদের ইন্টারনেট কানেকশন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এটি দেশের শীর্ষ শিল্প গ্রুপ কেএসআরএমের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজ। এর দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রসস্থতা ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। প্রথমে জাহাজটির নাম ছিল ‘গোল্ডেন হক’। বাংলাদেশের কেএসআরএম গ্রুপের বহরে যুক্ত হওয়ার পর এর নাম হয় ‘এমভি আবদুল্লাহ’। এটি একটি বাল্ক কেরিয়ার।
বৈশ্বিক জাহাজের অবস্থান নির্ণয়কারী সাইট মেরিন ট্রাফিক জানিয়েছে, জাহাজটি ৪ মার্চ আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুটো বন্দর ছেড়ে আসে। ১৯ মার্চ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাতের হামরিয়াহ বন্দরে পৌঁছানোর কথা ছিল। তার আগেই এর দখল নেয় জলদস্যুরা।
এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে পরিবারকে কয়েকটি ভয়েস মেসেজ পাঠান নাবিকরা। বার্তা পাঠানো নাবিককে আরো বলতে শোনা যায়, ‘আমাদের জাহাজ সোমালিয়া নিয়ে যাচ্ছে। সোমালিয়া নিয়ে যাওয়া মানে আমাদের জন্য খুব খারাপ অবস্থা। এটা গোপন রাখিও। আমার পরিবারের একটু খোঁজখবর নিয়ো, ছেলেগুলোর খেয়াল রাখিও। মুরুব্বিদের দোয়া করতে বলিও। আল্লাহ যদি হায়াতে নিয়ে আসে, বাঁচায় নিয়ে আসে তাহলে দেখা হবে কোনো দিন।’
জাহাজে থাকা একাধিক জানিয়েছে, জাহাজে আনুমানিক ৫০ জন সশস্ত্র জলদস্যু অবস্থান করছে। তারা সবার কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে গেছে।
এরমধ্যে এক নাবিক লুকিয়ে রাখা মোবাইলে বলেছেন, ‘আমাদের জাহাজ সোমালিয়ার দিকে যাচ্ছে। সবাই দোয়া করবেন। ৬০০ নটিক্যাল মাইল যেতে তিনদিন লাগবে। সেখানে জলদস্যুদের প্রধানরা আসবে।’