জাতীয়

১৩ ঘণ্টা পর ভৈরবে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক

মোহনা অনলাইন

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনার ১৩ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে। দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত লাইন মেরামত করে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়।

সোমবার (২৩ অক্টোবর) বিকেল ৩টার দিকে দুর্ঘটনার পরপর শুরু হয় উদ্ধার অভিযান। বিষয়টি নিশ্চিত করে ভৈরব রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলিম হোসেন শিকদার জানান, দুর্ঘটনায় উল্টে যাওয়া এগারসিন্ধুর ট্রেনের তিনটি বগি লাইন থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এরপরই ভোর সাড়ে ৪টার দিকে উদ্ধারকাজ সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়।

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে যাত্রীবাহী ট্রেনের সঙ্গে মালবাহী ট্রেনের ধাক্কায় অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অর্ধশত। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

১৮ জনের মধ্যে ১৫ জনের পরিচয় শনাক্ত করেছে পিবিআই। ঘটনার পর থেকে প্রত্যেক লাশের পরিচয় জানতে কাজ শুরু করে কিশোরগঞ্জের পিবিআই এর একটি দল। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত ১২টা পর্যন্ত  ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৫ জনের পরিচয় শনাক্ত করেছে তারা।

যাদের নাম পরিচয় পাওয়া গিয়েছে তারা হলেন: কিশোরগঞ্জের ভৈরবের রাঁধানগরের আবদুল মান্নান মিয়ার ছেলে আফজাল হোসেন (২১), ময়মনসিংহ জেলার ভারপাড়া এলাকার জুনাইদ মিয়ার স্ত্রী জোসনা আক্তার (১৬), কুলিয়ারচর উপজেলার লক্ষ্মীপুর এলাকার জিল্লুর রহমান এর ছেলে হুমায়ুন কবির, বাজিতপুর পিরিজপুর এলাকার আব্দুল হাই মিয়ার ছেলে আদির উদ্দিন, কিশোরগঞ্জের ভৈরবের রাণীবাজার এলাকার প্রবোদ চন্দ্র শীলের ছেলে সনুজ চন্দ্রা শীল, একই উপজেলার শ্রীনগর এলাকার মানিক মিয়ার ছেলে রাব্বি মিয়া, কিশোরগঞ্জের চাঁনপুর এলাকার চাঁন মিয়ার ছেলে সাইমন মিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার বড়ইচড়া এলাকার সুরত আলী মিয়ার ছেলে নিজাম উদ্দিন সরকার, ঢাকা জেলার দক্ষিণ খান এলাকার আব্দুর রহমান মিয়ার ছেলে একেএম জালাল উদ্দিন আহমেদ, ময়মনসিংহ নান্দাইল উপজেলার তইছ উদ্দিন মিয়ার ছেলে মো. সুজন মিয়া, কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলার হাবিবুর মিয়ার ছেলে মো. রাসেল মিয়া, কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলার কাশেম মিয়ার ছেলে গোলাপ মিয়া, ময়মনসিংহ নান্দাইল উপজেলার শিরু মিয়ার মেয়ে ফাতেমা, সুজন মিয়ার ছেলে সজিব ও ইসমাইল।

রেলের কর্মকর্তারা বলছেন, দুর্ঘটনা ঘটেছে ভৈরব স্টেশনের বাইরে, যেখানে একাধিক লাইনের জোড়া রয়েছে। এখানে ট্রেন এক লাইন থেকে অন্য লাইনে যায়। ফলে দুটি ট্রেনের মধ্যে মুখোমুখি সংঘর্ষ হওয়ার আশঙ্কাও ছিল। এতে আরও বড় বিপর্যয় হতে পারত।

রেল পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত সূত্র বলছে, দুটি ট্রেন একই লাইনে বা একাধিক লাইনের মোড়ে আসার সুযোগই নেই। এ ক্ষেত্রে স্টেশনমাস্টার মালবাহী ট্রেনটিকে আউটারে থামার সংকেত না দিলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কোনো স্টেশনের আউটার হচ্ছে ট্রেনগুলোকে অপেক্ষায় রাখার জায়গা। অন্য ট্রেনকে জায়গা দিতে আউটার এলাকায় ট্রেন থামার লাল বাতির সংকেত (সিগন্যাল) আগেই জ্বালিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে।

অন্যদিকে থামার সংকেতবাতি দেওয়ার পরও চালক তা না মানলে দুর্ঘটনা ঘটে। প্রাথমিকভাবে রেল কর্তৃপক্ষ দেখেছে, মালবাহী ট্রেনটির চালক থামার সংকেত উপেক্ষা করে দ্রুত ট্রেনটি চালিয়ে এসে এগারসিন্দুর ট্রেনটিকে ধাক্কা দেন।

ট্রেন দুর্ঘটনার সাত ঘণ্টা পর ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়। সোমবার (২৩ অক্টোবর) রাত ১০টা ৪০ মিনিটে ঢাকা থেকে সিলেটগামী কালনী এক্সপ্রেস ট্রেন ভৈরব রেলওয়ে স্টেশন দিয়ে অতিক্রম করে।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, দুর্ঘটনার কারণ উদ্ঘাটনে জন্য রেল বিভাগ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর বিস্তারিত বলা যাবে।

দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের হিসাবে, ২০১৮ সাল থেকে গতকাল পর্যন্ত রেল দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৩৪৫ জন মারা গেছেন। আহত হয়েছেন আরও ১ হাজার ৩০২ জন। এ সময় রেল দুর্ঘটনা ঘটে ১ হাজার ১১৬টি।

author avatar
Delowar Hossain Litu
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button