Top Newsআন্তর্জাতিক

অবশেষে ঐক্য সংলাপে রাজি ফাতাহ-হামাস

মোহনা অনলাইন

ঐক্য সংলাপে বসতে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনের দুই প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস ও ফাতাহের প্রতিনিধিরা। বেইজিংয়ে  শিগগিরই এই সংলাপ শুরু হবে বলে শুক্রবার নিশ্চিত করেছেন হামাস ও ফাতাহর নেতৃবৃন্দ এবং চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন।

একই দিন চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখাপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা ফিলিস্তিনের জাতীয় কর্তৃপক্ষকে শক্তিশালী দেখতে চাই এবং ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী যেসব রাজনৈতিক পক্ষ সংলাপ এবং আলোচনার মাধ্যমে ঐক্য স্থাপন করতে চায়, তাদের প্রতি আমাদের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।’

গেল ৭ অক্টোবর গাজায় যুদ্ধ শুরুর পর এই প্রথম চীন সফরে যাচ্ছে হামাসের কোনো প্রতিনিধিদল। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত মাসে কূটনৈতিক কর্মকর্তা ওয়াং কেজিয়ান হামাসের প্রেসিডেন্ট ইসমাঈল হানিয়ের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সে সময় বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে এই শান্তি সংলাপের প্রস্তাব দেন ওয়াং কেজিয়ান এবং হানিয়েও তাতে সম্মতি দেন।

২০০৭ সাল থেকে গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণ করছে সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাস।  অন্যদিকে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ক্ষমতায় রয়েছে রাজনৈতিক দল ফাতাহের নেতৃত্বাধীন জোট ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (প্যালেস্টাইনিয়ান অথরিটি-পিএ)। ফিলিস্তিনের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ফাতাহের শীর্ষ নেতা। গাজা, পশ্চিম তীর এবং পূর্ব জেরুজালেম এই তিন ভূখণ্ডের সমন্বয়ে গঠিত ফিলিস্তিন।

এক সময় গাজা উপত্যকায়ও ক্ষমতায় ছিল ফাতাহ। কিন্তু ২০০৭ সালে নির্বাচনে জয়ী হয়ে গাজার ক্ষমতা গ্রহণের পাশাপাশি ফাতাহকে উপত্যকা থেকে উচ্ছেদ করে হামাস। দুই গোষ্ঠীর মধ্যে বিরোধিতার প্রধান ইস্যু স্বাধীনতা অর্জনের পন্থা নিয়ে। ফাতাহ সংলাপ এবং রাজনৈতিক তৎপরতার ভিত্তিতে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পক্ষে। অন্যদিকে হামাস বিশ্বাস করে, সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে ইসরায়েল রাষ্ট্রকে নিশ্চিহ্ন করার মাধ্যমেই কেবল ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন সম্ভব।

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে হামাসের তেমন কোনো গ্রহণযোগ্যতা নেই কিন্তু ফিলিস্তিনে জনপ্রিয়তা আছে । যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা বিশ্বের অধিকাংশ দেশ হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে বেশ কয়েক বছর আগেই। মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়ার দেশগুলো এখনও হামাসকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে ঘোষণা না করলেও অধিকাংশ দেশ সব সময় এই গোষ্ঠীটির সংশ্রব থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখে।

অন্যদিকে ফাতাহের নেতৃত্বাধীন জোট ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ (প্যালেস্টাইনিয়ান অথরিটি-পিএ) আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ফিলিস্তিনের বৈধ শাসক হিসেবে স্বীকৃত।

জবাবে সেই দিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ)। গত ছয় মাস ধরে চলমান সেই অভিযানে কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে গাজা উপত্যকা, নিহত হয়েছেন ৩৪ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। নিহতদের অধিকাংশই শিশু, নারী ও বেসামরিক লোকজন।

মূলত এই যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ফের গুরুত্ব সহকারে সামনে আসে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র স্থাপনের ইস্যুটি। তবে এক্ষেত্রে একটি বড় বাধা ছিল হামাস ও ফাতাহের অনৈক্য ও পরস্পরের প্রতি বৈরী মনোভাব। গত কয়েক বছরে মধ্যপ্রাচ্যে গভীর প্রভাব বিস্তারকারী চীনের অবশ্য এ বিষয়ে অতীত সাফল্যের রেকর্ড রয়েছে। ২০২৩ সালে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে শান্তি স্থাপনে নেতৃত্ব দিয়েছিল বেইজিং। মধ্যপ্রাচ্যের এ দুই নেতৃস্থানীয় দেশের মধ্যে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে বৈরিতা চলছিল।

৭ অক্টোবর গাজার উত্তরাঞ্চলীয় ইরেজ সীমান্ত দিয়ে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে ঢুকে নির্বিচারের গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জন ইসরায়েলি ও অন্যান্য দেশের নাগরিককে হত্যা করে হামাস। সেই সঙ্গে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় আরও ২৪০ জনকে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button