দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় শেষ হচ্ছে আজ। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের নির্দেশ অমান্যকারীদের ব্যাপারে বৈঠকে কি সিদ্ধান্ত হবে সেদিকে নজর সবার।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠক আজ। সন্ধ্যা ৭টায় গণভবনে এই বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আসন্ন উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলের নির্দেশ অমান্যকারীদের ব্যাপারে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে।
আসন্ন উপজেলা নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে। উপজেলা নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘন থামছে না। আচরণবিধি অনুযায়ী মন্ত্রী-এমপিরা প্রচারসহ কোনো ধরনের নির্বাচনি কাজে অংশ নিতে পারবেন না। কিন্তু স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে অনেক মন্ত্রী-এমপির বিরুদ্ধে প্রভাব বিস্তার ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আসছে নির্বাচন কমিশনে।
তৃণমূল নেতাদের অভিযোগ, স্থানীয় সংসদ সদস্যরা তাদের পছন্দমতো প্রার্থী, এমনকি আত্মীয়স্বজনদেরও নির্বাচনের মাঠে নামাচ্ছেন। ফলে সংসদ সদস্যদের ছায়া থাকছে নির্দিষ্ট কিছু প্রার্থীর প্রতি। উপজেলা পরিষদ নির্বাচন প্রভাবমুক্ত রাখতে আওয়ামী লীগ সভাপতি গত ১৮ এপ্রিল মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের প্রার্থী না হওয়ার নির্দেশ দেন। হাইকমান্ডের নির্দেশও আমলে নেননি অনেকে।
মন্ত্রী-এমপি এমনকি দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের এক শ্রেণির নেতারাও মানছেন না দলীয় সিদ্ধান্ত। তৃণমূলে দলীয় সিদ্ধান্ত না মানার প্রবণতা আরও ভয়াবহ। সংগঠনকে তোয়াক্কা না করে নিজস্ব বলয় সৃষ্টির মাধ্যমে ফ্রি স্টাইলে চলছেন অনেকে। এটা সংগঠনবিরোধী কার্যক্রম। শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজ। দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করলে বহিষ্কারসহ নানা শাস্তির কথা গঠনতন্ত্রে রয়েছে।
গত ১৫ বছরে একাধিকবার গঠনতন্ত্রবিরোধী কাজে জড়িত থাকার অপরাধে গত ১৫ বছরে ৫ হাজার নেতাকে বহিষ্কার করা হলেও পরে আবার সাধারণ ক্ষমা পেয়ে যান। দলীয় পদবি এমনকি মনোনয়নও দেওয়া হয়েছে তাদের। এ কারণে এবারের উপজেলা নির্বাচনেও দলীয় সভাপতির নির্দেশনা আমলে নেননি অনেক মন্ত্রী-এমপি ও নেতা। হাইকমান্ডের নির্দেশ অমান্যকারীদের তালিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় দুই জন প্রেসিডিয়াম সদস্য, এক জন যুগ্ম-সম্পাদক, বর্তমান মন্ত্রিসভার ছয় জন সদস্য ও সাবেক ছয় মন্ত্রী।
এবারও বলা হচ্ছে, যেসব এমপি-মন্ত্রী দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নিজের স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনের মাঠে রাখবেন, তারা ভবিষ্যতে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। দল তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। আগামী নির্বাচনে তাদের মনোনয়নও হুমকির মুখে পড়তে পারে।
এদিকে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দ্বিতীয় ধাপে ১৬০ উপজেলা ভোটে ২ হাজার ৫৫ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এদের মধ্যে চেয়ারম্যান পদে ৭৩০ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭৬৩ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫৬২ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। আজ মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) অফিস চলাকালীন সময়ে যেকোনো প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে পারবেন।
এ ধাপের নির্বাচনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকদের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ভোটারের সংখ্যা ৫ লাখের বেশি যেখানে, সেখানে একাধিক সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নিয়োজিত রয়েছেন।
তফসিল অনুযায়ী, চূড়ান্ত প্রার্থীদের মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ২ মে। আর ভোটগ্রহণ হবে ২১ মে।
নির্বাচন কমিশন এবার চার ধাপে উপজেলা নির্বাচন করছে। প্রথম ধাপে ১৫০ উপজেলায় ভোট হবে আগামী ৮মে। তৃতীয় ধাপে ১১২ উপজেলায় ২৯ মে ও চতুর্থ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ৬ জুন ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। প্রথম ধাপে ২২টি, দ্বিতীয় ধাপে ২৪টি, তৃতীয় ধাপে ২১টি ও চতুর্থ ধাপে দুটি উপজেলায় ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করা হবে।