ময়মনসিংহের সদর উপজেলার হিরন পলাশিয়া গ্রামের শিশু রাশেদ মিয়া (১১) মৃত্যুর ঘটনায় নতুন মোড় নিয়েছে। পুলিশ প্রাথমিকভাবে দেয়াল ধ্বসে মৃত্যুর কথা জানালেও ময়নাতদন্তে পাওয়া গেছে হত্যার আলামত। এখন আদালতের নির্দেশে বিষয়টি আরও তদন্ত চলছে।
গত ১৭ জানুয়ারি বাড়ির কাছে একটি পরিত্যক্ত ভবনের দেয়াল চাপায় তার মৃত্যু হয় বলে দাবি করেছিল পুলিশ। কিন্তু পরিবারের দাবি, ক্রিকেট খেলা নিয়ে বিরোধের জের ধরে শিশু রাশেদ মিয়াকে খুন করা হয়েছে। এ নিয়ে আদালতে ২৩ জানুয়ারি একটি মামলা করেন নিহতের বাবা।
ঘটনার পরপর পুলিশ সাতজনকে আটক করলেও পরবর্তীতে পরিবারের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া শিশুদের মামলার আসামি করা হয়। মামলায় আসামিরা হলো, মাইনুদ্দিন, আকাশ, মহিদুল, শরীফ, রিপন মিয়া, সবুজ এবং সাকিব। তাদের সবার বয়স ১০ বছরের মধ্যে।
মামলায় নিহতের বাবা মো. আজিম উদ্দিন বলেন, ১৭ জানুয়ারি আমার ছেলে খুন হওয়ার পর থানা পুলিশ অভিযুক্ত সাতজনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। পরদিন ১৮ জানুয়ারি সাধারণ ডায়েরি করে তাদের ছেড়ে দেয়। তখন আমি থানায় মামলা করতে গেলে দেয়াল ধ্বসে ইটের আঘাতে আমার ছেলের মৃত্যু হয়েছে উল্লেখ করে মামলা নেয়নি পুলিশ।
এর মধ্যে গত ১৬ মার্চ নিহতের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যায়। সেখানে শিশু রাশেদের মৃত্যুর ঘটনাটি ‘নরহত্যা’ বলে উল্লেখ করেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. শোহাব নাহীয়ান।
এ ঘটনায় গত ২৪ এপ্রিল ময়মনসিংহের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আব্দুল হাই বাদীর অভিযোগ তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে কোতোয়ালি মডেল থানাকে নির্দেশ দেন বলেন সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী মো. মঞ্জুরুল হক নিশ্চিত করেন।
নিহত রাশেদের মা রাশিদা বেগম বলেন, পুলিশ আমার ছেলের খুনিদের ধরেছিল কিন্তু আমাদের জনপ্রতিনিধিরা প্রভাব খাটিয়ে তাদের ছাড়িয়ে নেয়।
শিশু রাশেদের বড় ভাই রাশিদুল হাসান বলেন, আমার ভাইকে ডেকে নিয়ে খুন করছে। কিন্তু পুলিশ বলছে, দেয়াল চাপায় সে মারা গেছে।
পরানগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. আবু হানিফ বলেন, এক শিশু মারা যাওয়ার খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। তখন পুলিশ এসে সাতজনকে ধরে থানায় নিয়ে যায়। এর একদিন পর তাদের অভিভাবকদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। এতে আমার কোনো হাত নেই। এখন আইন যা করে তাই হবে। যে মারা গেছে সে শিশু, তার বাবা একজন অসহায় দিনমজুর। আর এ ঘটনায় যাদের আটক করে থানা নেওয়া হয়েছিল তারাও বয়সে ছোট ছিল।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আমরা সুরতহালে উল্লেখ করেছিলাম ইটের আঘাতে মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। ময়নাতদন্তে এসেছে ভোতা কিছুর আঘাতে মৃত্যু হয়েছে। আদালতের আদেশ এসেছে অনুসন্ধান পূর্বক প্রতিবেদন দিতে। বিষয়টি নিয়ে আমাদের কাজ চলমান রয়েছে, সময় লাগবে। এখানে কাকে আসামি করা হবে এমন কোনো বিষয় পাওয়া যাচ্ছে না।