ফ্রিল্যান্সিংয়ের আড়ালে বিটকয়েন, বাড়ছে প্রতারণা
দেশের ফ্রিল্যান্সারদের বিপথে নিচ্ছে সাইফুল ইসলাম নামের এক প্রতারক। দেশে নিষিদ্ধ অনলাইন জুয়ার অন্যতম কারিগর এই সাইফুল ইসলাম। অথচ এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে এই অপরাধী।
এই অপরাধীদের কারণে দেশের ফ্রিল্যান্সিং খাত বিতর্কিত হতে চলেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগী অনেকেই বলছেন, স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ এই অপরাধী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়েও ফেইসবুকে ক্রমাগত ট্রল করছে। অবৈধভাবে অনলাইন জুয়ার ব্যবসায় দুবাইয়ে রয়েছে তার গ্যাং।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখনও পালিয়ে যাওয়ার আগে তাকে বিআরএফ গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেড়িয়ে আসতে পারে দেশে সংগঠিত অনলাইন জুয়ার ভয়াবহ তথ্য।
ঢাকার গুলশানে অফিস খুলে এবং নিজে ইমপোর্টার পরিচয়ের আড়ালে শত শত ফেইসবুক একাউন্ট খুলে ফ্রিল্যান্সারদের ফেইসবুক ম্যাসেজে এ অধিক লাভের প্রলোভন দেখিয়ে বিটকয়েন কেনায় সাইফুল। এরপর নিজেকে ব্যবসায়ী দেখিয়ে কিছু নগদ দিয়ে ডলার কিনে বাকি অর্থ বিভিন্ন অবৈধ ভার্চুয়াল মুদ্রাতে বিনিয়োগ করায়। আর অধিক লাভের আশায় তার ফাঁদে পরে অনেকেই এখন পুঁজি হারিয়ে অসহায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ভুক্তভোগী জানায়,কোনো উচ্চবাচ্য করলে তাদেরকে মামলাসহ বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি ও হামলার হুমকি দেয় সাইফুল।
রফিক মোহাম্মদ ভূইয়া নামের একজন অনলাইন ফ্রিল্যান্সার বিভিন্ন দেশে ওয়েবসাইট ডেভলপ করে কিছু ডলার উপার্জন করে। সাইফুল তাকে নগদ ৩ লাখ লাভ দেখিয়ে বিদেশি একটি অ্যাকাউন্ট নিয়ে দেয়। এরপর ২ মাস পর বিটকয়েন থেকে টাকা ফেরত দেবে বলে জানায়। এখন টাকা চাইতে গেলে হুমকি দিচ্ছে। সাইফুলের এমন অসংখ্য প্রতারণার খবর বেরিয়ে আসছে। অবৈধভাবের হুন্ডি ব্যবসায় সঙ্গেও জড়িত বলে এই সাইফুলের নাম শোনা যায়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই সাইফুলকে ঘিরে একটি সিন্ডিকেটও রয়েছে এই হুন্ডি ব্যবসার।
অভিযোগের সত্যতা জানতে সাইফুলের সাথে মুঠোফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মেলেনি কোনো সাড়া।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সাইবার সিকিউরিটি ও ক্রাইম ইউনিটের অ্যাডিশনাল ডেপুটি কমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, অনলাইন প্রতারনা, জুয়ার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে এবং ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমে অনেক অপকর্ম ও প্রতারণা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, অনলাইন জুয়া একদম নিষিদ্ধ, দেশের আইন মোতাবেক আমরা এর আগেও বেশ কয়েকবার অভিযান করেছি। আমাদের এ ধরনের অভিযান আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।
সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে এ ধরনের অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে যে কাউকেই আইনের আওতায় আনা যাবে। মানি লন্ডারিং এবং আর্থিক জালিয়াতি কারণে দেশের রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে, এতে বাংলাদেশের রেমিটেন্সের উপর প্রভাব পড়ছে। তাই এদের ছাড় দেয়ার কোন সুযোগ নেই। তিনি জানান, ভুক্তভোগীরা নিকটস্থ থানায় অভিযোগ করার পাশাপাশি সিটিটিসি অফিসে যোগাযোগ করতে পারেন। তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের আইনের আওতায় আনা হবে।
নাজমুল ইসলাম আরো বলেন, বিটিআরসির সহযোগিতায় এখন পর্যন্ত তিন হাজারের বেশি অনলাইন জুয়ার সাইট বন্ধ করা হয়েছে। আর শুধুমাত্র ডিএমপি থেকেই এই অর্থবছরে এখন পর্যন্ত অর্ধশত জুয়ারী ও মানি লন্ডারিং এর সাথে জড়িত অপরাধীদের গ্রেফতার করা হয়েছে।