Top Newsজাতীয়

আজকের বাংলাদেশ একটি পরিবর্তিত বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী

আওয়ামী লীগ দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী, গ্রহণযোগ্য ও বড় রাজনৈতিক দল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রতিবারই চক্রান্ত হয়, সেটা মোকাবিলা করে আমরা বেরিয়ে আসি। আমাদের এটা ধরে রাখতে হবে।

শুক্রবার (১৭ মে)আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ৪৪তম স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে নেতারা গণভবনে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে গেলে তিনি এসব কথা বলেন।

এ সময় শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের মানুষ রক্ত দিয়ে যে অধিকারগুলো আদায় করেছিল, সেটা আমরা সমুন্নত করতে পেরেছি; কিন্তু আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। আর যেন যুদ্ধাপরাধী-খুনিরা বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে না পারে। এ ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে।

সরকারপ্রধান বলেন, সেদিন ফিরে এসেছিলাম। এত বড় দল পরিচালনা করার অভিজ্ঞতা ছিল না। ছাত্রলীগ করার সময় নেতা হওয়ার চেষ্টা করিনি। দলের প্রয়োজনে যে দায়িত্ব দিয়েছে, সেটাই পালন করেছি। কিন্তু যখন এ দায়িত্ব (আওয়ামী লীগ সভাপতি) পেলাম, এটা বড় দায়িত্ব। তিনি বলেন, কী পেলাম না পেলাম সে চিন্তা করিনি। ভবিষ্যৎ কী, সে চিন্তাও করি না। চিন্তা করি দেশের মানুষের ভবিষ্যৎটা আরও সুন্দরভাবে গড়ে দিয়ে যাব, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।

উপস্থিতদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, মনে রাখবেন, একটা দল করি শুধু নেতা হওয়া নয়, মানুষের জন্য কতটুকু করতে পারলাম, কী দিতে পারলাম, কী দিয়ে গেলাম—এটাই রাজনীতিকের জীবনের বড় কথা। এই কথাটা মাথায় রাখতে পারলে দেশের মানুষের জন্য অনেক কিছুই করা যেতে পারে।

১৯৭৫-পরবর্তী যুদ্ধাপরাধীরা মন্ত্রী-এমপি-উপদেষ্টা হয়েছিল উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ যারা করেছেন তারাই অপরাধী হয়ে গেলেন; যারা বিরোধিতা করেছিল, গণহত্যা করেছিল তারাই ক্ষমতায়, ওই অবস্থায় দেশে ফিরেছিলাম। আমার তো কিছুই ছিল না। একটা বিশ্বাস ছিল দেশের জনগণ ও আওয়ামী লীগের অগণিত নেতাকর্মীর ওপর। মানুষের যদি রাজনৈতিক চিন্তাচেতনা না থাকে, দেশপ্রেম না থাকে, সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় না থাকে; তাহলে সেটা এগোতে পারে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, পঁচাত্তরের পর যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা নিজেদের ক্ষমতা কুক্ষিগত করার চেষ্টা করেছিল, দেশের কোনো উন্নতি করতে পারেনি। আজ আমরা বলতে পারি, দেশটা বদলাতে পেরেছি। সামনে আরও বদলাতে হবে। কারণ আমার বাবার একটাই স্বপ্ন ছিল, দেশটাকে গড়ার। আমাদের পরিকল্পনা সেটাই আছে।

তিনি বলেন, গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা, কারফিউ, প্রতি রাতে মার্শাল ল, দেশের মানুষের কোনো আশা নেই, শুধু হতাশা। এই হতাশ জাতিকে টেনে তোলা যায় না। তাদের মাঝে আশার আলো জাগাতে হয়, ভবিষ্যৎ দেখাতে হয়, উন্নত জীবনের চিত্র তুলে ধরতে হয়। তবেই মানুষকে নিয়ে কাজ করা যায়। আমরা সেটাই করার চেষ্টা করছি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতের ঘটনা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আশা করেছিলাম আমরা খুব তাড়াতাড়ি ফিরে আসব। কিন্তু সেই ফিরে আসা আর হয়নি।

শেখ হাসিনা বলেন, আমি যখন দিল্লিতে ছিলাম, সেখানে গিয়ে জিয়াউর রহমান আমার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন, তার স্ত্রীও দেখা করতে চেয়েছিলেন, আমি দেখা করিনি। লন্ডনে যখন, তখনও দেখা করতে চেয়েছিলেন, আমরা দেখা করিনি। আমি যখন এলাম ৩২ নম্বরে ঢুকতে দেওয়া হবে না, উল্টো বাড়ি-গাড়ি সাধবে, সেটা তো আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৩২ নম্বরে আমরা মিলাদ পড়তে চাইলাম, আমাকে ঢুকতে দেননি জিয়াউর রহমান। উল্টো বলেছিলেন বাড়ি দেবেন, গাড়ি দেবেন, সব দেবেন। বলেছিলাম, তার কাছ থেকে কিছু নেব না। খুনির কাছ থেকে আমি কিছু নিতে পারি না।

এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে নেতারা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে ফুলেল শুভেচ্ছা জানান।

পরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ মিলনায়তনে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির ২২তম দ্বিবার্ষিক সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অর্থনীতিবিদদের কাছে এটাই প্রত্যাশা করি, দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে আপনারা আপনাদের পরিকল্পনা ও নীতিমালা প্রণয়ন করবেন।

বিদেশির পরামর্শ ফলপ্রসূ হবে না উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, কোনো একজন দু-এক দিনের জন্য দেশে এসে আমাদের উপদেশ দিয়ে যাবেন, ওই উপদেশ আমাদের কাজে লাগবে না। কাজে লাগবে নিজের চোখে দেখা এবং মানুষের জন্য করা। এটাই কাজে লাগবে। হ্যাঁ, বাইরে থেকে আমরা শিখব, কিন্তু করার সময় নিজের দেশকে দেখে করব, মানুষকে দেখে করব। আমাদের কী সম্পদ আছে, সেটা দেখে করব।

তিনি বলেন, সেখানে উত্থান-পতন, অনেক চড়াই-উতরাই থাকবে এবং সেগুলোকে অতিক্রম করেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। হতাশ হওয়ার কিছু নেই, কেউ হতাশ হবেন না।

দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে ব্যবসায়ীদের ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করুন। আমরা সব সময় আপনাদের পাশে আছি। ব্যবসায়ীদের উদ্ভাবনী ধারণা কাজে লাগিয়ে রপ্তানি বাড়াতে পণ্যের নতুন বাজারও খুঁজে বের করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ব্যবসায়ীদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। আমরা সব সময় দেশের মানুষের কল্যাণের কথা ভাবি। আজকের বাংলাদেশ একটি পরিবর্তিত বাংলাদেশ। এই বাংলাদেশকে আরও টেনে নিয়ে যেতে হবে। বলেন, আমাদের যতটুকু সম্পদ আছে, সেটা দিয়েই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করাই আমার লক্ষ্য।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button