বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকটজনক বলে এক গবেষণা রিপোর্টে জানিয়েছে আর্টিকেল নাইনটিন। বৈশ্বিক মত প্রকাশের স্কোর বা জিআরএক্স স্কোরে বাংলাদেশের স্কোর মাত্র ১২।
মঙ্গলবার (২১ মে) রাজধানীর গুলশানে একটি সংবাদ সম্মেলনে আর্টিকেল নাইনটিনের দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম ২০২৪ সালের গবেষণার ফল প্রকাশ করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ৫ বছরের সময়কাল (২০১৮- ২৩) বিবেচনায় বাংলাদেশের স্কোর আটকে আছে ১১ ও ১২ এর মধ্যে। দশ বছরে স্কোর কমেছে ৮ পয়েন্ট। আর দুই যুগে কমেছে ৩২ পয়েন্ট।
আর্টিকেল নাইনটিন বিশ্বজুড়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও তথ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করছে।
মানবাধিকারের এই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গিকার বাস্তবায়নে, প্রতিবছর আর্টিকেল নাইনটিন ‘বৈশ্বিক মতপ্রকাশের স্বাধীনতা প্রতিবেদন’ প্রস্তুত করে।
গবেষণায় মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও বাংলাদেশের অবস্থানে দেখা যায়- ২০০০ সাল থেকে মতপ্রকাশের স্কোর বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে এই সময়কালে বাংলাদেশের স্কোর কমেছে ৩২ পয়েন্ট। ২০০০ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিলো ৪৪, যেটি মতপ্রকাশের শ্রেণীগত দিক থেকে ‘বাধাগ্রস্ত’ হিসেবে বিবেচিত। ‘বাধাগ্রস্ত’ থেকে ‘অতিবাধাগ্রস্ত’ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের অবনমন হয় ২০০৬ সালে। পরবর্তী বছর ২০০৭ সালে আরো ১০ পয়েন্ট কমে স্কোর নেমে আসে ২৯ এ। পরের দুই বছর (২০০৮ ও ২০০৯ সালে) স্কোর ৫ পয়েন্ট বেড়ে ৩৪এ উন্নীত হলেও ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারেনি পরবর্তী বছরগুলোতে। ২০১৪ সালে স্কোর ৪ পয়েন্ট কমে ১৬ স্কোর নিয়ে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো মতপ্রকাশের সংকটজনক শ্রেণীতে ঢুকে পড়ে। যা থেকে বাংলাদেশ এখোনো উত্তরণ ঘটাতে পারেনি।
এছাড়া মতপ্রকাশের ২৫ সূচকের সবগুলো ক্ষেত্রেই বাংলাদেশের স্কোর সম্পূর্ন ঋণাত্বক। ২০০৯ সাল থেকে আটটি সূচকেই ক্রমাগত খারাপ করে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সরকারের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নজরদারি ও সেন্সরশিপ।
গবেষণায় ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা বিষয়ক ৫টি সূচকের বছরওয়ারি চিত্রে দেখা যায়- ৫টি সূচকের ২টির স্কোর ইতিবাচক। এর একটি ধর্ম পালনের স্বাধীনতা এবং নারী পুরুষের আলোচনার স্বাধীনতা। এই ক্যাটাগরিতে বিবেচিত বাকি ৩ সূচকের স্কোর ২০১৪ সালের পর থেকে পুরোপুরি ঋণাত্বক। যার ধারাবাহিকতা চলছে প্রায় এক দশক ধরে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা সভা সমাবেশ করার স্বাধীনতার সূচকে। এরপরেই রয়েছে একাডেমিক ও সাংস্কৃতিক মতপ্রকাশের স্বাধীনতার স্কোর।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বিষয়ক ৩টি সূচকের বছরওয়ারি চিত্রে দেখা যায়- বাংলাদেশের তিনটি সূচকের স্কোরই ঋণাত্মক। সবচেয়ে বেশি খারাপ করেছে সাংবাদিকদের হয়রানি মুক্ত পরিবেশে কাজ করার স্বাধীনতার সূচকটিতে। ২০০৭ সালের পর থেকেই দেশে সাংবাদিকদের হয়রানি মুক্ত পরিবেশের সূচকটি ঋণাত্বক স্কোর করতে শুরু করে এবং গণমাধ্যমের সেল্ফ সেন্সরশিপের স্কোরও নেতিবাচক হয়ে পড়ে। এই প্রবণতা পরবর্তী দেড় দেশকের বেশি সময় ধরে অব্যাহত রয়েছে।
এছাড়া নাগরিক অংশগ্রহণ ও নাগরিক সংগঠন ক্যাটাগরিতে ব্যবহৃত পাঁচটি সূচকে বাংলাদেশ ইতিবাচক স্কোর করেছে। তবে নাগরিক সংগঠনের উপর নিপীড়ন সূচকের স্কোর ঋণাত্মক রয়েছে। আর মানহানি মামলা দিয়ে হয়রানির সূচকে ঋণাত্বক স্কোর বা সবচেয়ে খারাপ করেছে বাংলাদেশ। ২০০৬ সালের পর থেকেই এই নেতিবাচক স্কোরের প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বলে উঠে এসেছে গবেষণা প্রতিবেদনে।
সংবাদ সম্মেলনে এ সময় অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং দৈনিক প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান।