ভারতে চিকিৎসা করাতে গিয়ে নিখোঁজ ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
বুধবার (২২ মে) ভারতীয় উপদূতাবাস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। কলকাতার নিউটাউন থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়েছে।
তবে তাকে হত্যা করা হয়েছে কি না সে বিষয়ে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
চিকিৎসার জন্য আনোয়ারুল আজিম পশ্চিমবঙ্গে যান ১২ মে। পরদিন ১৩ মে দুপুর ১ টা ৪১ মিনিটে তার বাড়ি থেকে বেরিয়ে ভাড়া করা গাড়িতে উঠেন আজিম। তারপর থেকে তার আর কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। একজন অফিসারের ফ্ল্যাটে উঠেছিলেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন আরও তিন জন। বরানগর এলাকার সিঁথিতে যে বন্ধুর বাড়িতে উঠেছিলেন আজিম, তার নাম গোপাল বিশ্বাস।
১৮ মে কলকাতার বরাহনগর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন গোপাল বিশ্বাস। গোপাল বিশ্বাস জিডিতে উল্লেখ করেন, ‘আনোয়ারুল আজিমের সঙ্গে তার ২৫ বছর ধরে পারিবারিক সম্পর্ক। ১৩ মে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় তিনি (আনোয়ারুল) বলে যান, দুপুরে খাবেন না। সন্ধ্যায় ফিরে আসবেন। পরে তিনি কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে এসে নিজেই গাড়ি ডেকে চলে যান।
জিডির তথ্য অনুযায়ী, আনোয়ারুল আজিম সন্ধ্যায় গোপাল বিশ্বাসের বাসায় ফেরেননি। আনোয়ারুল আজিমের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে গোপালকে একটি বার্তা পাঠিয়ে জানানো হয়, বিশেষ কাজে তিনি দিল্লি যাচ্ছেন। সেখানে পৌঁছে তিনি ফোন করে গোপাল বিশ্বাসকে জানাবেন, গোপাল বিশ্বাসের ফোন করার দরকার নেই। পরে ১৫ মে স্থানীয় সময় সকাল ১১টা ২১ মিনিটে আনোয়ারুল আজিমের নম্বর থেকে হোয়াটসঅ্যাপে আরেকটি বার্তা আসে। তাতে আনোয়ারুল আজিমের দিল্লি পৌঁছানোর কথা জানিয়ে বলা হয়, ‘আমার সঙ্গে ভিআইপিরা আছেন, ফোন করার দরকার নেই।
পুলিশের প্রাথমিক অনুমান সাংসদ আজিমকে খুন করা হয়েছে। তবে পুলিশ এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে মুখ খুলছেন না। সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে, কারা আজিমের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তার এই তদন্তে কাজ করছে বিধাননগর পুলিশ কমিশনার, আইবি ও এসটিএফ।
’আনোয়ারুল আজিমের নম্বর থেকে একই বার্তা বাংলাদেশে তার বাড়ির লোকজন এবং ব্যক্তিগত সহকারীকে পাঠানো হয়।
এরপর ১৬ মে আনোয়ারুলের নম্বর থেকে তার ব্যক্তিগত সহকারী আবদুর রউফের নম্বরে একটি ফোন আসে বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে বলা হয়, ব্যক্তিগত সহকারী ফোন ধরতে পারেন নি। পরে আনোয়ারুল আজিমকে তিনি (ব্যক্তিগত সহকারী) ফোন করেও আর যোগাযোগ করতে পারেননি। পরদিন ১৭ মে আনোয়ারুলের মেয়ে গোপাল বিশ্বাসকে ফোন করে জানান, তার বাবার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না। তারপর তিনি আনোয়ারুলের পরিচিতদের ফোন করেন। কিন্তু তাঁর কোনো সন্ধান মেলেনি।
বিষয়টি নিয়ে ১৯ মে ডিবি কার্যালয়েও যান আনোয়ারুল আজীমের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। সেদিন তিনি বলেছিলেন, তিনদিন ধরে আমার বাবাকে ফোনে পাচ্ছি না। তার মোবাইল ফোনটি মাঝে মাঝে খোলা পাই আবার মাঝে মাঝে বন্ধ পাই। পরে এই বিষয়ে আমি ডিবি প্রধানের সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি আমাকে বলেছেন বিষয়টি তিনি দেখছেন। পরে আজকে আমি ওনার কার্যালয়ে আসি। তিনি আমাদের সহযোগিতা করছেন। বাবাকে ফোনে না পাওয়ার কারণেই মূলত আমি ডিবি কার্যালয়ে এসেছি। আমি নিজেও ভারতে দ্রুত সময়ের মধ্যে যাব।