ভারতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার। বিষয়টি জানার পর থেকে বেরিয়ে আসতে থাকে লোমহর্ষক সব তথ্য। বৃহস্পতিবার (২৩ মে) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি।
হারুন অর রশীদ বলেন, এমপি আনারকে হত্যার পর খুনিরা তার দেহের মাংস হাড় থেকে আলাদা করে ফেলে। এরপর মাংসে হলুদের গুঁড়া ও মসলা মিশিয়ে ফ্রিজে রাখা হয়। পরে মাংস হিসেবে বাজারের ব্যাগে ভরে তা ট্রলিতে বাইরে নেওয়া হয়।
পরিকল্পনা অনুযায়ী কলকাতার নিউ টাউনের সঞ্জীবনী গার্ডেনে ট্রিপ্লেক্স ফ্ল্যাট ভাড়া করেন মূল পরিকল্পনাকারী এমপির বন্ধু ও ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন। আগে থেকেই ভারতে অবস্থান করা কয়েক সন্ত্রাসীর সঙ্গে চুক্তি করেন তিনি। এরপর ৫ কোটি টাকার চুক্তিতে বাংলাদেশ থেকে ওই ফ্ল্যাটে ডেকে নিয়ে যান মূল কিলার চরমপন্থি নেতা আমানুল্লাহকে।
ঢাকার তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, শাহীন গত ৩০ এপ্রিল আমানুল্লাহকে নিয়ে কলকাতায় যান। সংসদ সদস্য আনার হত্যার ছক কষেন ওই ফ্ল্যাটে বসেই। এরপর সেখান থেকে ১০ মে দেশে ফেরেন শাহীন। তখন ওই ফ্ল্যাটে অবস্থান করেন শাহীনের বান্ধবী শিলাস্তি রহমান, মূল কিলার আমানুল্লাহ, জিহাদ, সিয়াম, মোস্তাফিজ ও ফয়সাল শাহীনের ভাড়া করা ফ্ল্যাটে অবস্থান করেন।
১৩ মে রাতে হত্যা মিশন বাস্তবায়ন করে আমানুল্লাহ, শিলাস্তি ও ফয়সাল দেশে ফেরেন। তাদের আটকের পর হত্যারহস্য উদ্ঘাটন হয়। তাদের কাছে পাওয়া যায় এমপি আনার হত্যার আসল পরিকল্পনার কথা।
জানা গেছে, ওই ফ্ল্যাটে যাওয়ার পর আনারকে শাহীনের টাকার জন্য চাপ দেন আমানুল্লাহ ও তার সহযোগীরা। একপর্যায়ে আনারের গলায় চাপাতি ধরেন আমানুল্লাহ। এ নিয়ে ধস্তাধস্তি হয়। পরে বালিশ চাপা দিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়। কলকাতার ওই ফ্ল্যাট থেকে সব তথ্য দেশে অবস্থানকারী মূলহোতা শাহীনকে জানানো হয়। হত্যার পর আমানুল্লাহ ঘটনা জানান শাহীনকে। তখন শাহীন লাশ গুম করার নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশ পেয়ে আমান, এমপি আনারের লাশটি কেটে টুকরো টুকরো করেন। এরপর বাইরে থেকে কিনে আনা হয় সাদা পলিথিন, ব্লিচিং পাউডার ও দুটি বড় সাইজের ট্রলি ব্যাগ। লাশ টুকরো করার পর তা ঢোকানো হয় পৃথক দুটি ট্রলিতে। লাশের টুকরোগুলো ব্যাগে ঢোকানোর পর বাইরে থেকে আনা ব্লিচিং পাউডার দিয়ে ওই ফ্ল্যাটের মেঝে পরিষ্কার করে ফেলা হয়।
এমপি আনোয়ারুল আজিমকে ১৩ মে হত্যা করা হলেও তার মরদেহের টুকরো ভর্তি প্রথম ট্রলিটি ওই বাসা থেকে বের করে সরানো হয় পর দিন ১৪ মে। ফ্ল্যাট কম্পাউন্ডের বাইরে নিয়ে পাশের একটি শপিংমলের সামনে দাঁড়ায় কিলার গ্রুপের দুই সদস্য। এরপর কিলার গ্রুপের সদস্য সিয়ামকে এই ট্রলি তুলে দেওয়া হয়। সিয়াম একটা গাড়িতে উঠে কিছুদূর যাওয়ার পর সেটি নিয়ে নেমে যান। এরপর এই ব্যাগ কোথায় নিয়ে গেছেন, তা আর জানাতে পারেননি আমানুল্লাহ। আরেকটি ব্যাগ ফ্ল্যাটে রেখেই ১৫ মে আমানুল্লাহ ও শাহীনের বান্ধবী শিলাস্তি আকাশপথে ঢাকায় চলে আসেন। অন্য ট্রলি ব্যাগটি মোস্তাফিজ, ফয়সালসহ অন্যরা সরিয়ে ফেলেন।
আমানুল্লাহর নেতৃত্বে কিলার গ্রুপের সদস্য মোস্তাফিজ, ফয়সাল, জিহাদ ও সিয়াম হত্যামিশনে অংশ নেন। আমানুল্লাহ ও শিলাস্তি ঢাকায় ফেরার পর ১৭ মে মোস্তাফিজুর এবং পরের দিন দেশে ফেরেন ফয়সাল। সিয়াম ও জিহাদ অবৈধ পথে বাংলাদেশ থেকে ভারতে গিয়েছিল। তাদের অবস্থান শনাক্তের কাজ চলছে।
কোন এমপিকে পাশের দেশ ভারতে নিয়ে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করার ঘটনা স্বাধীনতার পর থেকে এবারই প্রথম। এ ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছে বাংলাদেশ ও ভারতের পুলিশ প্রশাসন।