Top Newsজাতীয়

এমপি আজিম হত্যায় ভারতে এক কসাই গ্রেপ্তার

মোহনা অনলাইন

সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের সিআইডি। যাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার নাম জিহাদ হাওলাদার। পেশায় তিনি কসাই। হত্যায় অভিযুক্ত জিহাদ হাওলাদারকে নিয়ে প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত কলকাতাজুড়ে তল্লাশি চালিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের গোয়েন্দা পুলিশ।

শুক্রবার (২৪ মে) বারাসাত আদালতে তোলা হবে জিহাদ হাওলাদারকে। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সংবাদ প্রতিদিন বলছে, জিহাদ হাওলাদার বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী। অবৈধভাবে মুম্বাইয়ে বাস করতেন তিনি।

মূলত পশ্চিমবঙ্গের গোয়েন্দা পুলিশ এমপি আনার হত্যার রহস্য শেষ করতে চাইছে। ইতোমধ্যে ঢাকা ও কলকাতার গোয়েন্দা বিভাগ জানে কীভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছিল। এখন প্রয়োজন দেহাংশ উদ্ধার করা অথবা দেহাংশ সরাতে ব্যবহৃত প্লাস্টিক বা ট্রলি কোথায়, তা জানা। তবে পুলিশের ধারণা, দেহাংশ উদ্ধার এক প্রকার অসম্ভব।

পুলিশ জানায়, মরদেহ একেবারে কিমার মতো টুকরো করা হয়েছিল। হাড়গুলোরও ছোট ছোট টুকরো করা হয়েছিল। ফলে মরদেহের সব অংশ উদ্ধার একপ্রকার অসম্ভব। কীভাবে মাস্টারপ্ল্যান সাজিয়ে অপরাধীরা মরদেহের বিভিন্ন অংশ কলকাতার বিভিন্ন প্রান্তে ফেলেছিল, তা দেখতে চায় পুলিশ। এ কারণে বৃহস্পতিবার রাতে জিহাদকে নিয়ে চলে তল্লাশি। তবে অন্ধকার থাকার কারণে তা বেশিক্ষণ চালানো সম্ভব হয়নি। শুক্রবার পুলিশ তাকে রিমান্ডে নিয়ে আবারো তল্লাশি চালাতে চায়।

বৃহস্পতিবার বনগাঁও অঞ্চলের গোপাল নগরে গোয়েন্দা পুলিশের হাতে ধরা পড়েন জিহাদ হাওলাদার। পুলিশের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত জিহাদ বাংলাদেশি এবং একজন ‘দক্ষ কসাই’। অবৈধভাবে মুম্বাইয়ে বাস করছিলেন তিনি। জেরায় জানিয়েছেন, তার নাম জিহাদ হাওলাদার, বাবা জয়নাল হাওলাদার খুলনার বাসিন্দা। দুই মাস আগে তাকে কলকাতায় নিয়ে আসেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আখতারুজ্জামান শাহীন।

জিহাদ জেরায় আরও স্বীকার করেছেন, আখতারুজ্জামানের নির্দেশে কীভাবে তিনিসহ আরও চারজন এমপি আনারকে ফ্ল্যাটে হত্যা করেন। হত্যার পর তারা ফ্ল্যাটে মরদেহ টুকরো করেন। পরিচয় নষ্ট করার জন্য মরদেহের মাংস কিমা করে পলি প্যাকে রাখেন, হাড় ছোট ছোট টুকরো করেন। তারপর প্যাকেটগুলো ফ্ল্যাট থেকে বের করে নিয়ে কলকাতার বিভিন্ন অঞ্চলে ফেলে দেন।

অভিযুক্ত জিহাদকে বারাসাত আদালতে তোলা হবে। পরে তার বক্তব্য যাচাইয়ে এবং মরদেহের অংশগুলো উদ্ধারে তাকে আবারো পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হবে। এদিকে আনোয়ারুল আজীমকে হত্যা করা হয়েছে সে বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেলেও এখনও তার মরদেহ উদ্ধার করা যায়নি। ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা শাখা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ গতকাল বলেছেন, আশা করছি খুব শিগগিরই তারা (ভারতীয় পুলিশ) হত্যার শিকার ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনোয়ারের মরদেহ উদ্ধারে সক্ষম হবেন।

অপরদিকে পশ্চিমবঙ্গের গোয়েন্দা পুলিশ আরেকটি রহস্য উন্মোচন করতে পেরেছে। গত ১২ মে বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে বরাহনগরের মন্ডল পাড়ায় গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন এমপি আনার। এরপর ১৩ মে পৌঁছে যান নিউটাউনের সঞ্জীবা গার্ডেনসে। পুলিশি তথ্য অনুযায়ী, ১৩ তারিখ রাতেই তাকে হত্যা করা হয়। মরদেহ বাক্সবন্দি করে ১৪, ১৫ ও ১৬ মে প্রতিদিন একজন করে ফ্ল্যাট থেকে বেরিয়ে যান।

অথচ দেখা যাচ্ছে, গোপাল বিশ্বাস ১৮ মে বরাহনগর থানার নিখোঁজ ডায়েরিতে জানিয়েছিলেন, তার সঙ্গে এমপির হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে কথা হয়েছে ১৬ মে পর্যন্ত। ডায়েরির তথ্য অনুযায়ী, ১৩ মে রাতে গোপাল বিশ্বাসের কাছে মেসেজ আসে, এমপি আনার হঠাৎ দিল্লি যাচ্ছেন এবং সঙ্গে কিছু ভিআইপি আছে। এরপর ১৪ তারিখ জানান দিল্লি পৌঁছে গেছেন, প্রয়োজনে কল করে নেবেন। কেউ যেন তাকে কল না করেন। একই মেসেজ পাঠানো হয় তার পিএ ও পরিবারকে। কিন্তু কল করলেও তা অপর পাশ থেকে রিসিভ হত না।

এরপর নিখোঁজ ডায়েরির সূত্র ধরে জানা যায়, এমপি আনারের ফোনের শেষ টাওয়ার লোকেশন পাওয়া যায় ভারতের ঝাড়খন্ডে। ফলে দ্বিধায় ছিল ভারতের পুলিশ। পরে কিছু মিসিং লিংক ও সিসিটিভি দেখে পুলিশ বুঝতে পারে, এমপি কলকাতার বাইরে বেরই হয়নি। তাহলে কে নিয়ে গিয়েছিল ওই ফোন?

সে তথ্যের সন্ধান করতে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ খোঁজ পায়, আখতারুজ্জামান শাহীনের আরেক সহযোগী সিয়াম ঝাড়খন্ড হয়ে নেপালে গিয়েছেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঝাড়খন্ড পর্যন্ত ফোনটি চালু রেখে, তারপরে সেখানে সিম কার্ড খুলে, সিয়াম নেপালে গা ঢাকা দেন। সিয়াম গ্রেপ্তার হয়েছেন কি না, তা নিয়ে কোনো তথ্য দেয়নি রাজ্য পুলিশ।

এরমধ্যে ভারতের কলকাতাভিত্তিক একটি সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়েছে, এমপি আনারকে হানি ট্র্যাপে ফেলে— অর্থাৎ তরুণীর মাধ্যমে লোভ দেখিয়ে কলকাতায় নিয়ে গিয়ে খুন করা হয়েছে।

সংবাদমাধ্যমটি বলেছে, এমপি আনারের ব্যবসায়িক পার্টনার আক্তারুজ্জামান শাহীন হত্যার পুরো পরিকল্পনা সাজান। আর এ কাজে তিনি ব্যবহার করেন শিলাস্তি রহমান নামের এক তরুণীকে। যার প্রকৃত নাম সিনথিয়া রহমান।

author avatar
Online Editor SEO
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button