টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের উন্মাদনায় মেতেছে ক্রিকেট বিশ্ব। বিশ্ব ক্রিকেটের দুই হেভিওয়েট চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ ভারত–পাকিস্তানের মহারণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আজ (রোববার) রাতে। ফুটবলে যেমন ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার ম্যাচ মানেই বাড়তি এক উত্তেজনা, ক্রিকেটেও ঠিক একই অবস্থা ভারত-পাকিস্তানে ম্যাচে।
ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি রোমাঞ্চকর ম্যাচও দেখে ফেলেছে ক্রিকেটপ্রেমীরা। তবে আসরের সব থেকে আকাঙ্ক্ষিত ম্যাচটি মাঠে গড়াবে আজ।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাকিস্তান শুরুটা করেছে হোঁচট খেয়ে, তাই প্রতিপক্ষ যেই থাকুক তাদের জয় ভিন্ন অন্য কিছু ভাবার সুযোগ নেই। অন্যদিকে, প্রথম ম্যাচে জয় পাওয়া ভারত রোমাঞ্চকর এই লড়াইয়েও অবশ্যই অপরাজেয় থাকার লক্ষ্যে নামবে।
নিউইয়র্কের নাসাউ কাউন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হবে ম্যাচটি। সীমান্তের উত্তেজনা ও রাজনৈতিক বৈরিতার কারণে ভারত-পাকিস্তান প্রায় ১৭ বছর দ্বিপাক্ষিক কোনো সিরিজে মুখোমুখি হচ্ছে না। ফলে এমন মর্যাদাপূর্ণ লড়াই দেখতে ক্রিকেটবিশ্বকে অপেক্ষা করতে হয় আইসিসি কিংবা এশিয়ান ক্রিকেটের কোনো মেগা আসরের দিকে। যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সেই সুযোগটি করে দিয়েছে।
দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে পাকিস্তানের আধিপত্য থাকলেও, বড় টুর্নামেন্টে বাবর আজমদের কাছে ভারত একটি জুজুর নাম। সংক্ষিপ্ত সংস্করণের প্রথম মেগা আসরে তারা শিরোপা খুইয়েছিল রোহিত শর্মাদের কাছে। যদিও ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির পর ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়েছিল পাকিস্তান। তবে ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপে জয় গেছে ভারতীয়দের পকেটে। সর্বশেষ এশিয়া কাপে গ্রুপপর্বে পাকিস্তান জিতলেও, সুপার ফোরে জিতে ভারত ফাইনাল খেলে। এরপর শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে রোহিত-কোহলিদের হাতে এশিয়াসেরার মুকুটও ওঠে।
যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হারের ধাক্কা সামলে নতুন উদ্যমে খেলার প্রত্যাশা পাকিস্তান কোচের, ‘দু’দিন আগে যা হয়েছে, সেটা আমরা ভুলে গেছি। কোনো ম্যাচ হারা অবশ্যই ভালো বিষয় নয়। আমার মনে হয়ে এখন আর দলের কাউকেই আলাদাভাবে অনুপ্রেরণা দিতে হবে না। আমরা চাই ব্যক্তিগত নৈপুণ্যেও ক্রিকেটাররা জ্বলে উঠুক, তবে এই ম্যাচটিকে অন্য সব ম্যাচের মতো দেখছি আমরা, আলাদাভাবে কোনো চাপ নিতে চাই না, এখানে পিচ মূলত বোলিং সহায়ক।’
২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপে ভারতের কোচ ছিলেন গ্যারি কারস্টেন। তার অধীনেই এবার ভারতের বিপক্ষে খেলতে নামছেন বাবররা। আজকের ম্যাচের পরিকল্পনা জানিয়ে কারস্টেন জানান, ‘এটা বড় ম্যাচ যে সেটা অস্বীকার করার কিছু নেই। তবে ক্রিকেটকে ক্রিকেটের মতোই দেখা উচিৎ। প্রতিটি খেলায় আপনাকে সেরাটা দিতে হবে। সঠিক জায়গায় বল মারতে হবে, যথেষ্ট রান করতে হবে ও ক্যাচ নিতে হবে। আমরা অবশ্যই আগামীকাল সেটাই করার চেষ্টা করব, যদি আমরা আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী খেলি, তাহলে আমাদের ম্যাচ জেতার ভালো সুযোগ রয়েছে।’
পাকিস্তানের বিপক্ষে নামার আগে প্রতিপক্ষ কে ভাবছেন না বলে জানান ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শর্মা, ‘ভালো ক্রিকেট খেলাটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিপক্ষ বা পিচের দিকে মন না দিয়ে, নিজেদের খেলায় মনোযোগ দেওয়া জরুরি। পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের ক্ষেত্রে কিছুই বদলায়নি। সাত মাস আগে এশিয়া কাপ এবং বিশ্বকাপে আমরা ওদের বিপক্ষে খেলেছি। কঠিন সময়েও আমরা সফল হয়েছি। আমি ম্যাচ জেতার জন্য কখনও একজন ব্যক্তির ওপর নির্ভর করতে চাই না। সবাইকে নিজের ভূমিকা পালন করতে হবে।’
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত সবমিলিয়ে মোট সাত বার মুখোমুখি হয় এই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী। সেসব দেখায় জয়ের পাল্লা ভারী ভারতের। এছাড়াও বাকি একটি ম্যাচ ড্র হয়। শুধু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মঞ্চে নয়, ক্রিকেটের এই সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে সব মিলিয়ে মোট ১২ বার মুখোমুখি হয় এই দুই দল। সেখানে পরিসংখ্যান কথা বলে ভারতের পক্ষে। প্রথম আসরের চ্যাম্পিয়নদের ৯ জয়ের বিপরীতে পাকিস্তানে জয় তিনটি ম্যাচ।