এক সময় ঢাকাই সিনেমার পরিচিত মুখ ছিলেন সুনেত্রা। শুধু ঢাকাই সিনেমার নয় দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী সুনেত্রা। ১৯৯০ সালে মুক্তি পাওয়া দেলোয়ার ঝাহান ঝন্টু পরিচালিত ‘পালকী’ ছবিতে অভিনয় করে ভক্ত-অনুরাগীদের মাঝে অন্যরকম জনপ্রিয়তা এনে দেয়।
তার মৃত্যুর খবরটি নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক চিত্রনায়ক জায়েদ খান।
শুক্রবার (১৪ জুন) তিনি তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লিখেছেন, ‘এক সময়ের জনপ্রিয় নায়িকা, শৈশবের আমার পছন্দের একজন নায়িকা, চোখের প্রেমে পড়তো যে কেউ, তিনি সুনেত্রা। অনেকদিন বাংলাদেশ ছেড়ে কলকাতায়। আমি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক থাকাকালীন বেশ কয়েকবার ফোনে কথা বলেছিলাম। আজ হঠাৎ শুনলাম তিনি আর নেই, মৃত্যুবরণ করেছেন। নীরবে নিভৃত্বে চলে গেলেন। এভাবেই হারিয়ে যায় মানুষ, চলে যায়। আপনি ভালো থাকবেন ওপারে। অনেক চলচ্চিত্র দেখবো আর আপনাকে মিস করবো।’
জায়েদ খানের সেই পোস্টে ভক্ত-অনুরাগীরা সমবেদনা জানিয়েছেন। এক ভক্ত লিখেছেন, ‘সত্যি উনার আগের অনেক মুভি দেখেছি, চোখ টা বিষণ সুন্দর ছিল মায়াবী চেহারা। অনেকদিন খুঁজতাম উনাকে তো কোন মুভিতে দেখিনা আর, ভাবতাম হয়ত নাই। আজকে জানলাম উনি মারা গেছেন।’
এই চিত্রনায়িকা ফারুক, সোহেল রানা, আলমগীর, ওয়াসিম, ইলিয়াস কাঞ্চন, জাফর ইকবাল, নাদিম (পাকিস্তান), মান্নাদের বিপরীতে অভিনয় করে উপহার দেন একের পর এক হিট সিনেমা।
সুনেত্রা অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে ‘পালকি’, ‘উসিলা’, ‘বোনের মতো বোন’, ‘ভাবীর সংসার’, ‘সাধনা’, ‘রাজা মিস্ত্রি’, ‘যোগাযোগ’, ‘সুখের স্বপ্ন’, ‘আলাল দুলাল’, ‘শুকতারা’, ‘সহধর্মিনী’, ‘কুচবরণ কন্যা’, ‘বন্ধু আমার’, ‘শিমুল পারুল’, ‘ভাই আমার ভাই’, ‘লায়লা আমার লায়লা’, ‘দু:খিনি মা’, ‘বিধান’, ‘নাচে নাগিন’, ‘ভুল বিচার’, ‘সর্পরানি’, ‘বিক্রম’, ‘বাদশা ভাই’, ‘রাজা জনি’ ,‘আমার সংসার’ ও ‘ঘর ভাঙা ঘর’ উল্লেখযোগ্য।
কলকাতায় তিনি কাজ করেছেন ‘সিঁথির সিঁধুর’, ‘মনসা কন্যা’ ইত্যাদি ছবিগুলোতে। তিনি ‘তালাশ’, ‘শূন্যে কি তালাশ’ নামের দুটি উর্দু ছবিতেও অভিনয় করেছেন। পাকিস্তানের টিভি নাটকেও সুনেত্রা ছড়িয়েছেন অভিনয়ের দ্যুতি।
বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে প্রতিষ্ঠা পেলেও সুনেত্রা ছিলেন কলকাতার মেয়ে। সেখানেই মঞ্চে অভিনয় করতেন। তাকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে নিয়ে আসেন গুণী নির্মাতা মমতাজ মালী। ১৯৮৫ সালে মুক্তি পাওয়া ‘উসিলা’ ছবি দিয়ে মাত্র ১৫ বছর বয়সে অভিষিক্ত হন তিনি।
১৯৭০ সালের ৭ জুলাই সুনেত্রা জন্মগ্রহণ করেন কলকাতার এক সম্ভ্রান্ত হিন্দু পরিবারে। পারিবারিক নাম তার রিনা সুনেত্রা কুমার। দুই ভাইবোনের মধ্যে সুনেত্রা ছোট। তিনি মাধ্যমিক শেষ করেছিলেন কলকাতার গখলে মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুলে। পরবর্তীতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি প্রাণিবিদ্যায় মাস্টার্স ডিগ্রি নেন। ছোটবেলা থেকেই সংস্কৃতি চর্চার প্রতি মনোযোগী ছিলেন তিনি। নাচ, গান ও অভিনয়ে নিজেকে তৈরি করেছিলেন।
প্রসঙ্গত, দেড় মাস আগে গত ২৩ এপ্রিল কলকাতায় মারা যান সুনেত্রা। অথচ এতদিনে সে খবর কেউ জানতেও পারেনি। অবশেষে শুক্রবার (১৪ জুন) বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও চিত্রনায়ক জায়েদ খানের স্ট্যাটাসের মাধ্যমে বিষয়টি সামনে আসে। মানুষ জানতে পারে, না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন এই চিত্রনায়িকা।