ছাগলকাণ্ডেi মতিউরকে এনবিআর থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। জানা যায়, তাকে ভ্যাট ও কাস্টমস আপিলাত ট্রাইবুনালের সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে তাকে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগে সংযুক্ত করা করেছে।
এর আগে ঢাকার মোহাম্মদপুরে অবস্থিত ‘সাদিক এগ্রো’ ফার্ম থেকে এগ্রো বিটল প্রজাতির খাসি ১৫ লাখ টাকায় কিনে আলোচনায় আসেন মুশফিকুর রহমান ইফাত নামের এক যুবক। সাদিক এগ্রোতে গিয়ে ক্যামেরার সামনে ওই ছাগলের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ইফাত বলেন, ‘এ রকম একটি খাসি কেনা আমার স্বপ্ন ছিল। এ রকম খাসি আমার জীবনে প্রথম দেখা। এটা আমার হবে, জানা ছিল না। আল্লাহ নসিবে রাখছে, তাই হইছে। ১১ই জুন এটি ধানমন্ডি-৮ এ ডেলিভারি দেয়া হবে।’
ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে গুঞ্জন ওঠে, তিনি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা মতিউর রহমানের ছেলে। রাজস্ব কর্মকর্তা বাবার দুর্নীতির টাকায় তিনি ১৫ লাখ টাকায় খাসিটি কিনেছিলেন। এ ঘটনায় ওই ছেলে ও তার বাবাকে নিয়ে ফেসবুকে চলছে বিস্তর সমালোচনা। বিভিন্ন পোস্ট ও কমেন্টে খাসির ক্রেতা যুবকের বাবার দুর্নীতি নিয়ে তদন্তের দাবি উঠেছে।
এরপর থেকে মতিউর রহমানের ছেলের দামি ব্র্যান্ডের ঘড়ি, গাড়ি, আলিশান জীবনযাপন; মতিউর রহমান ও পরিবারের সদস্যদের নামে রিসোর্ট, শুটিং স্পট, বাংলো বাড়ি, জমিসহ নামে-বেনামে সম্পত্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।
সিফাতকে একপর্যায়ে নিজের ছেলের পরিচয় দিতে অস্বীকৃতিও জানান মতিউর। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাকে নিয়ে ট্রলের বিরুদ্ধে সাইবার আইনে মামলার হুমকি দেন। তবে আর মামলা করেননি।
ছাগলের হিসাব-নিকাশ বাদ দিয়ে এখন আলোচনা চলছে মতিউর রহমানের সম্পদ নিয়ে। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি এই কর্মকর্তা দুর্নীতির মাধ্যমে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। এরইমধ্যে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা তার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য জানতে মাঠে নেমেছে। প্রাথমিকভাবে বেশ কিছু সম্পদের তথ্যও পাওয়া গেছে।
পুবাইলের খিলগাঁও মৌজায় ৫৫ বিঘা জমিতে মতিউর রহমানের আপন ভুবন পিকনিক অ্যান্ড শুটিং স্পট। এই রিসোর্টে ১০০ টাকার টিকিট কেটে যে কেউ সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ঘুরতে পারেন। নাটক, সিনেমার শুটিংয়ের জন্য ভাড়া দেয়ার বাইরেও এখানে আছে অবকাশ যাপনের সুযোগ।
মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকির নামে নরসিংদীর রায়পুরার মরজালে শতবিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে লাকি পার্ক নামে আলিশান রিসোর্ট, যার বর্তমান নাম ওয়ান্ডার পার্ক। এই পার্ক তৈরি করতে গিয়ে জমি দখলের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
স্থানীয়রা বলছেন, লোকজন নিয়ে এসে জায়গা জোর করে দখল করেছে। জায়গা একদিকে কিনলে আরেক দিকে দখল করে মাঝখানের জায়গা ব্লক করে ফেলেন। কাউকে হয়তো অনেক দিন ঘুরিয়ে অল্প টাকা দেয়, আবার কাউকে দেয় না। টাকাওয়ালা লোকের সঙ্গে পেরে ওঠা সম্ভব হয় না। ময়মনসিংহের ভালুকা থানার সিডস্টোর এলাকার পাশেই প্রায় ৩০০ বিঘা জমির ওপর মতিউর রহমানের গ্লোবাল জুতা ফ্যাক্টরি। এই ফ্যাক্টরির চেয়ারম্যান তিনি নিজেই। বিভিন্ন দেশে রফতানি হয় এই ফ্যাক্টরির জুতা।
ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার সাততলা একটি বাসার দ্বিতীয় তলায় বসবাস করেন মতিউর রহমান। জানা যায়, এই এলাকায় মতিউর রহমান, তার স্ত্রী, পরিবারের সদস্য ও বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের নামে রয়েছে একাধিক প্লট।
গাজীপুর সদর, রাজধানীর খিলগাঁও, সাভার থানার বিলামালিয়া মৌজায় তার জমির খোঁজ মিলেছে। মতিউর পরিবারের সদস্যদের রয়েছে একাধিক বিলাসবহুল গাড়ি যেগুলোর দাম কোটি টাকার ওপর।
এর বাইরেও বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে তার শতকোটি টাকার তথ্য এসেছে বিভিন্ন গণমাধ্যমে। এসব বিষয় নিয়ে কথা বলতে তার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে ঈদের ছুটির পর এখনো কর্মস্থলে যোগ দেননি মতিউর রহমান। সকালে ভ্যাট ও কাস্টমস আপিলাত ট্রাইবুনালের তাকে পাওয়া যায়নি। কর্মচারীরা জানান, ঈদের ছুটির পর কর্মস্থলে যোগ দেননি মতিউর রহমান।