Top Newsআন্তর্জাতিক

পশ্চিমবঙ্গকে আগে জানানো হয়েছিল, মমতার অভিযোগ সঠিক নয়

মোহনা অনলাইন

দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বৈঠকের পরেই পশ্চিমবঙ্গের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে তিস্তা নদীর পানি বণ্টন নিয়ে আপত্তি তোলা হয়েছিল। ফারাক্কা চুক্তির নবায়ন ও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সমঝোতার ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গকে এড়িয়ে যাওয়ার যে অভিযোগ রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তুলেছেন, তা সঠিক নয় বলে জানিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক সূত্র।

অতি সম্প্রতি নয়াদিল্লি সফর করেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার এ সফরে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে ফারাক্কা চুক্তির নবায়ন ও তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি নিয়ে ঢাকা ও দিল্লির মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, আন্তঃরাষ্ট্রীয় এ ২ ইস্যুর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পক্ষ পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে উপেক্ষা করে ঢাকার সঙ্গে সমঝোতা করেছে নয়াদিল্লি। এই নিয়ে গত কাল ২৪ জুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠিও দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অংশগ্রহণ ছাড়া তিস্তা এবং ফারাক্কার পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনও চুক্তিতে আমার তীব্র আপত্তি রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষের স্বার্থ নিয়ে কোনও আপস করব না।’ কলকাতাভিত্তিক ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা এ খবর জানিয়েছে।

চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে মমতা লিখেছেন, ‘গঙ্গা ও তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হয়ত আপনার কিছু আলোচনা হয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকারের কোনও মতামত না নিয়ে এমন একতরফা আলোচনা কাঙ্ক্ষিত বা গ্রহণযোগ্য নয়।’ বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের সঙ্গে যে তিনি সুসম্পর্ক রাখতে চান, সেই বার্তা দিয়ে মমতা জানিয়েছেন, ছিটমহল বিনিময়, রেল ও বাস যোগাযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিবিড় হয়েছে। কিন্তু এর পরেই তার মন্তব্য, ‘কিন্তু পানি অত্যন্ত মূল্যবান। প্রাণধারণের রসদ নিয়ে কোনও সমঝোতা করতে আমরা প্রস্তুত নই।’

পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে পানি বণ্টনের বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন তিনি। বস্তুত, সোমবার বিকেলে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে পানি বণ্টন নিয়ে নয়াদিল্লি-ঢাকা দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মমতা। সেই সঙ্গে তার অভিযোগ, ‘চীনকে দিয়ে ড্যাম (জলাধার) বানিয়েছে বাংলাদেশ।’

ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ২০২৩ সালের ২৪ জুলাই ফারাক্কা ও তিস্তা ইস্যুতে লিখিতভাবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে লিখিতভাবে অবহিত করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। সেই চিঠিতে ফারাক্কা চুক্তি নবায়ন ও এই সংক্রান্ত পর্যালোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারকে প্রতিনিধি পাঠাতে বলা হয়েছিল।

সেই আহ্বান মেনে গত বছর ২৫ আগস্ট পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের সেচ ও জলপথ দপ্তরের প্রধান প্রকৌশলীর নেতৃত্বে একটি কমিটি নয়াদিল্লিতে পাঠানোও হয়েছিল। তারপর গত ৫ এপ্রিল রাজ্য সরকারের সেচ ও জলপথ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ন সচিব কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এই চুক্তি স্বাক্ষর করতে হলে পশ্চিমবঙ্গের পানির চাহিদা সংক্রান্ত কী কী দাবি কেন্দ্রীয় সরকারকে মানতে হবে— তা লিখিতভাবে জানান নয়াদিল্লিকে।

প্রসঙ্গত, ১৯৯৬ সালে যখন ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ৩০ বছরের জন্য গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি হয়েছিল, ওই সময় বাংলাদেশে ক্ষমতায় ছিল শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। দিল্লিতে ক্ষমতাসীন ছিল এইচডি দেবগৌড়ার যুক্তফ্রন্ট সরকার। পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু ওই সময় গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তিতে সদর্থক ভূমিকা নিয়েছিলেন।

author avatar
Online Editor SEO
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button