Top Newsজাতীয়

কোটা বহাল রেখে হাইকোর্টের রায় স্থগিত

মোহনা অনলাইন

সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

বুধবার (১০ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ এ রায় দেন।

এর আগে কোটা ব্যবস্থা বহাল করে হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে দুজন শিক্ষার্থী।

তাদের আবেদনের ওপর মঙ্গলবার (৯ জুলাই) দুপুরে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামের আদালতে শুনানি শেষে পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠানো হয়। আজ বুধবার (১০ জুলাই) প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুনানির পর সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের ওপর স্থিতাবস্থা দেন।

এ সময় শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার আহবান জানান প্রধান বিচারপতি।

মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে হাইকোর্টের রায়ের কার্যকারিতা স্থগিত চেয়ে এফিডেভিট দায়েরের জন্য ওই দুই শিক্ষার্থীর পক্ষে আবেদন করা হয়। তখন চেম্বার আদালতের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম এফিডেভিট দাখিলের জন্যে অনুমতি দেন। পরে এদিন দুপুরে আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ঠ শাখায় এ আবেদন দায়ের করা হয়। আবেদনকারী দুই শিক্ষার্থী হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া এবং উর্দু বিভাগের শিক্ষার্থী আহনাফ সাঈদ খান।

এর আগে গত ৪ জুলাই রিটকারী পক্ষের আইনজীবী উপস্থিত না থাকায় হাইকোর্টের দেওয়া রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের শুনানি মুলতবি করা হয়।

রিট আবেদনকারীপক্ষের সময় আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ‘নট টুডে’ (আজ নয়) বলে আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ। পাশাপাশি রাষ্ট্রপক্ষকে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে নিয়মিত লিভ টু আপিল (আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) করতে বলেন সর্বোচ্চ আদালত।

এক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৫ জুন হাইকোর্ট নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। এ রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করে, যা গত ৯ জুন আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতির আদালতে ওঠে। সেদিন চেম্বার আদালত আবেদনটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে ৪ জুলাই শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন। এর ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার বিষয়টি শুনানির জন্য ওঠে।

ক্রম অনুসারে বিষয়টি উঠলে রিট আবেদনকারীপক্ষে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড মো. জহিরুল ইসলাম এক দিনের (নট টুডে) সময়ের প্রার্থনা জানান।

জানা যায়, সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা দীর্ঘদিনের। ১৯৭২ সালের ৫ নভেম্বর এক নির্বাহী আদেশে সরকারি, আধাসরকারি, প্রতিরক্ষা এবং জাতীয়করণ করা প্রতিষ্ঠানে জেলা ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা এবং ক্ষতিগ্রস্ত মহিলাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা পদ্ধতি প্রবর্তন করা হয়। পরে বিভিন্ন সময় এ কোটা পদ্ধতির সংস্কার, পরিমার্জন ও পরিবর্তন করে সরকার।

সর্বশেষ ২০১৮ সালে সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতি-নাতনি ৩০ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ১ শতাংশ, নারী ১০ শতাংশ, পশ্চাৎপদ জেলাগুলোর জন্য ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ৫ শতাংশ মিলিয়ে শতকরা ৫৬ ভাগ কোটা পদ্ধতি চালু ছিল।

এ অবস্থায় সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ২০১৮ সালের ২ জুলাই মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধান করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করে সরকার। প্রাথমিকভাবে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হলেও পরে আরও ৯০ কার্যদিবস সময় পায় কমিটি। ওই বছরে ১৭ সেপ্টেম্বর কোটা সংস্কার বা পর্যালোচনা কমিটির প্রধান তখনকার মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম প্রধানমন্ত্রীর কাছে কোটা তুলে দেওয়ার সুপারিশ করে প্রতিবেদন জমা দেন।

কোটা পর্যালোচনা কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরের দিন ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি তুলে দিয়ে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

ওই পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলাম তুষারসহ সাতজন হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। এ রিটের শুনানি নিয়ে ২০২১ সালের ৬ ডিসেম্বর হাইকোর্ট সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর জারি করা পরিপত্র কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের সচিব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের (পিএসসি) চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের সাতদিনের মধ্যে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছিল। এ রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি করে হাইকোর্ট গত ৫ জুন রুল মঞ্জুর করে রায় দেন।

author avatar
Online Editor SEO
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button