Top Newsসংবাদ সারাদেশ

আমরা ঘুমিয়ে থাকলে ঘরে ঘরে ঢুকে মেরে ফেলবে

মোহনা অনলাইন

নাশকতাকারী যেই হোক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন থেকে দুষ্কৃতকারীদের চালানো নৈরাজ্য, ধ্বংসযজ্ঞ রুখতে না পারার পেছনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দুর্বলতা রয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) দুপুরে রংপুর শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে আয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমার কাছে কষ্ট লাগে রংপুরে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে যখন দুষ্কৃতকারীরা ভাঙচুর করল, আগুন দিল, তখন তো আপনাদের ঘুরে দাঁড়াতে হবে। আপনারা কীভাবে ভুলে গেলেন আমরা বীরের জাতি, দেশ স্বাধীন করেছি। আমাদের হাতে অস্ত্র ছিল না শুধু জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে স্বাধীন করেছি। আমরা পকেটে হাত দিয়ে যদি ঘুমিয়ে থাকি তাহলে আমাদের ঘরে ঘরে ঢুকে মেরে ফেলবে। এটারই প্রমাণ আপনারা পেয়েছেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‌‘আমরা বাংলাদেশের মানুষ বিস্মিত হয়েছি, হতবাক হয়েছি। আমরা কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়েছিলাম যে, বাঙালি এই কাজ (ধ্বংসযজ্ঞ) কীভাবে করতে পারে! পরবর্তীতে মনে হয়েছে যে, এই বাঙালিইতো সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালিকে হত্যা করেছে। এই বাঙালিরাই আমাদের অনেক নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। এই ঘটনাটাই আমাদের সবকিছু মনে করিয়ে দেয়। তবে নাশকতাকারী যেই হোক না কেন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত নাশকতাকারীরা চিহ্নিত হবে না, ততক্ষণ আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযান অব্যাহত থাকবে।’
তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা প্রধানমন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া না দিয়ে ভাঙচুরের আন্দোলন শুরু করে দিল। রাষ্ট্রীয় সম্পদ বিনষ্ট করার আন্দোলন শুরু করে দিল। সেতু ভবন পুড়িয়ে দিল। সেতু ভবনের সাথে কোটা আন্দোলনের কী সম্পর্ক, এটা আমার জিজ্ঞাসা। ত্রাণ অধিদপ্তরও পুড়িয়ে দিয়েছে। আমাদের সংস্কৃতির ধারক-বাহক বিটিভি। স্বাধীনতা আন্দোলনসহ আমাদের গৌরবোজ্জ্বল সব কিছু বিটিভির তথ্য ভাণ্ডারে, আর্কাইভে ছিল। পরিকল্পিতভাবে বিটিভি ভবনে আগুন দিয়ে আর্কাইভগুলো পুড়িয়ে দিয়েছে। যেখানে আলবদর-রাজাকারদের দুষ্কর্মের ইতিহাস ছিল। যা মাঝে মাঝে প্রদর্শিত হতো, তারা সেটাই টার্গেট করেছে।
তিনি আরও বলেন, এই আন্দোলনের পেছনে নিশ্চয়ই একটা কারণ ও শক্তি আছে। তারা আমাদের গর্বের মেট্রোরেলেও আগুন দিয়েছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসের টোল ঘরগুলো পুড়িয়ে দেওয়া হলো। রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে আক্রমণ হলো। ভিসিকে পুড়িয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা হলো। কেন তাকে জানে মেরে ফেলবেন, তার দোষটা কী? নরসিংদীতে জেলা কারাগার হাজার হাজার জনতা এসে ভেঙে ফেললো। সেখান থেকে ৯ জঙ্গিকে ছিনিয়ে নেওয়া হলো। রংপুরে তাজহাট থানা, পুলিশ ফাঁড়ি, ডিবির কার্যালয়ে আক্রমণ করা হলো। ঢাকার যাত্রাবাড়ি থানা, উত্তরা থানা, মোহাম্মদপুর থানায় আক্রমণ করেছে। এভাবে একের পর এক থানায় হামলা হয়েছে।
আসাদুজ্জামান খান বলেন, ষড়যন্ত্রকারীদের হাত থেকে আমাদের দেশকে রক্ষা করতে হবে। সেজন্যই আমরা সান্ধ্য আইন দিয়েছি। আপনারা দুষ্কৃতকারীদের চিহ্নিত করে আমাদের হাতে ধরিয়ে দিন। আমরা যদি তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করতে পারি, তাহলেই এ দেশ শান্ত হবে এবং আমরা ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে পারব।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘পকেটে হাত রেখে ঘুমিয়ে থাকলে চলবে না। ওরা সুযোগ বুঝে ঘরে ঢুকে মেরে ফেলবে। আমাদের যা করার কথা ছিল তা করতে পারিনি।’

মন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত বিচক্ষণ ও দূরদর্শী চিন্তাভাবনাসম্পন্ন একজন মানুষ। রংপুরে যে নাশকতা হয়েছে, এর পেছনে কারা জড়িত এবং কারা অর্থের জোগানদাতা সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী পদক্ষেপ নেবেন।’

এর আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রংপুর নগরীর তাজহাট থানা, জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ অফিস, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়িসহ বিভিন্ন ধ্বংসস্তূপ পরিদর্শন করেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত তাজহাট থানা, মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের কার্যালয়, নবাবগঞ্জ পুলিশ ফাঁড়ি, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়, পরিবার পরিকল্পনার বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়সহ বিভিন্ন স্থান পরিদর্শন করেন।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button